মানব জাতির জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গুণ আল্লাহর ইবাদাত


 সবসময় মনে রাখুন, কুরআন এসেছে মানুষকে আল্লাহর ইবাদাত করা শেখাতে। মানব জাতির জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গুণ হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। কোনো মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রশংসা হলো সে আল্লাহর একজন ইবাদতকারী।

এ জন্য কুরআন রাসূলুল্লাহ (স) এর প্রশংসা করার সময় তাঁকে দাস হিসেবে উল্লেখ করে। اَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ یَنۡهٰی - عَبۡدًا اِذَا صَلّٰی - "তুমি কি তাকে (অর্থাৎ আবূ জাহলকে) দেখেছ যে নিষেধ করে, এক দাসকে [অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সা.)-কে] যখন সে নামায আদায় করতে থাকে?" (৯৬:৯-১০) سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِهٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا - "পবিত্র ও মহীয়ান তিনি যিনি তাঁর বান্দাহকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত..." (১৭:০১) তো, 'আব্দ' অর্থাৎ বান্দাহ বা দাস হলো কোনো মানুষের শ্রেষ্ঠ প্রশংসা। রাসূলুল্লাহ (স) এর জন্যেও শ্রেষ্ঠ প্রশংসা ছিল তাঁকে আল্লাহর দাস বলা। আমাদের সময়ে এসে আমরা মানুষের জন্য বহু গুণ আবিষ্কার করে ফেলেছি। কোনো ব্যক্তি যদি অমুক অমুক ডিগ্রী অর্জন করে, অমুক চাকরি করে, অমুক পেশায় যোগ দান করে, অনেক টাকার মালিক হয় আমরা তার প্রশংসা করি। বুঝতে চেষ্টা করুন, আমরা কোনো কিছুর তারিফ করলে তা যে আল্লাহর কাছেও প্রশংসার যোগ্য হয়ে পড়বে ব্যাপারটা এমন নয়। আল্লাহর কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ তা ভিন্ন। আমাদেরকে জানার চেষ্টা করতে হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে কোন কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি পার্থিব কোনো কিছু অর্জনের চেষ্টা করে সবাই তার প্রশংসা করে। কিন্তু, আপনাদের কি মনে হয় না- আল্লাহ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? তাঁর সন্তুষ্টি সবচেয়ে মূল্যবান? আল্লাহ যে কোনো কিছুর চেয়ে সৌন্দর্যময়? আল্লাহ যে কোনো কিছুর চেয়ে আকর্ষণীয়? আল্লাহ যে কোনো কিছুর চেয়ে আমাদের জন্য বেশি উপকারী? আল্লাহ যে কোনো কিছুর চেয়ে শক্তিশালী? নিশ্চিতভাবেই, আল্লাহর কাছাকাছি হতে পারা কোনো মানুষের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই মহাবিশ্বে যে সৌন্দর্য্যময় বস্তুর সাক্ষাৎ-ই আপনি লাভ করেন না কেন আল্লাহ সেই বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। আর আল্লাহ তার চেয়েও সুন্দর। এই মহাবিশ্বে যত শক্তিই আপনি পর্যবেক্ষণ করেন না কেন আল্লাহ তার চাইতেও শক্তিশালী। আল্লাহ-ই তো মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা। এগুলো সব আমাদেরকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে। সবগুলো আল্লাহর নিদর্শন। কিন্তু আল্লাহ তার চেয়েও অনেক অনেক উত্তম। তাই, যেকেউ যখন সামান্য কিছু সময়ও আল্লাহর জন্য ব্যয় করে এটা অন্য যে কোনো কিছু করার চেয়ে বহু গুণে উত্তম। কেউ যদি সুন্দর একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে, স্থাপত্য নির্মাণ করে...যেমন, শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেছেন। এটা বড় একটি মানবীয় অর্জন। কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দৃষ্টিতে, কেউ যদি আল্লাহর জিকিরে সামান্য কিছু সময় ব্যয় করে, দুই রাকাত নামাজ পড়ে, এটা তাজমহলের চেয়েও বেশি মূল্যবান। শেষ বিচারের দিন তাজমহলের কোনো মূল্য থাকবে না। কিন্তু সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবারের মূল্য থাকবে। কারণ, সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ থাকবেন। وَّ یَبۡقٰی وَجۡهُ رَبِّکَ ذُو الۡجَلٰلِ وَ الۡاِکۡرَامِ - "আর থেকে যাবে শুধু তোমার প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)- যিনি মহীয়ান, গরীয়ান।" সূরা আর-রাহমান, আয়াত ২৭ উর্দু ভাষার এক কবি বলেছেন- "সবকিছুতেই তুমি আছো কিন্তু কোনো কিছুই তোমার মত নয়।" অর্থাৎ সবকিছুতেই আল্লাহর নিদর্শন আছে কিন্তু কোনো কিছুই আল্লাহর মত নয়। তাই কোনো সন্দেহ নেই, কোনো ঈমানদার যদি সামান্য কিছু সময়ও আল্লাহর সাথে ব্যয় করে তা অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে অনেক অনেক বেশি মূল্যবান। সবসময় মনে রাখুন, ইবাদাত মানব জাতির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গুণ। আর শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো নামাজ। একবার যারা ইবাদাতের স্বাদ পেয়ে যায় অন্য কিছুতে তারা আর মজা পায় না। কবিরা অনেক সময় এক কথায় সবকিছু পরিষ্কার করে দেয়। আরেক কবি বলেছেন- "আমার বুকের মধ্যে যদি তুমি আমার হার্ট খোঁজ, খুঁজে পাবে না। কারণ, আল্লাহর ভালোবাসার আগুন সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।" শেষ আরেকটি কথা মনে এসেছে। এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর কতই না বড় অনুগ্রহ যে তিনি আমাদের নামাজ পড়া শিখিয়েছেন। সবচেয়ে মূল্যবান এ কাজটি তিনি আমাদের দিয়ে করাচ্ছেন। কাজটি আমাদের জন্য খুবই সহজ। কেউ যদি আপনাকে বলে যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হও। আপনি বলবেন- এটা আমার জন্য অসম্ভব। কিন্তু, এর চেয়েও বেশি মূল্যবান একটি কাজ আপনার জন্য কতই না সহজ করে দেওয়া হয়েছে। দুই রাকাত নামাজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেয়েও লক্ষ লক্ষ গুণ উত্তম। ফারসি কবি খাকানি বলেছেন- "ত্রিশ বছর পর এ ব্যাপারটা খাকানির নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে একটি মুহূর্ত সুলাইমান (আ) এর রাজত্বের চেয়েও বেশি মূল্যবান।" সুলাইমান (আ) এর রাজত্বের চেয়ে বড় কোনো রাজত্ব তো আর পৃথিবীতে ছিল না। আল্লাহর জন্য কিছু মুহূর্ত একান্তে ব্যয় করা সেই রাজত্বের চেয়েও বেশি মূল্যবান। শুধু উপলব্ধি করুন। আপনার 'সুবহানাল্লাহ' বলার শক্তি আছে। আর বুঝতে পারছেন না এটা কত বড় ব্যাপার!! হাদিসে এসেছে-"সুবহানাল্লাহ আকাশ এবং পৃথিবীর মাঝখানে যা কিছু আছে সব পূর্ণ করে দেয়।" কোনো গণিতবিদ বা কোনো বিজ্ঞানী কি আকাশ এবং পৃথিবীর মাঝের জায়গা পরিমাপ করতে পারবে? তারা এমনকি জানেও না আকাশ বলতে কী বোঝায়। তারা শুধু সামান্য কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছে। সমগ্র মহাবিশ্ব এখনো তাদের অজানা। আর হাদিস বলছে- একটি 'সুবহানাল্লাহ' পৃথিবী এবং আকাশের মাঝের সবকিছু পূর্ণ করে দেয়। - ড. আকরাম নদভী

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট