পরিপূর্ণ পর্দা না করা

 


অনেক মুসলিম নারীই পরিপূর্ণ পর্দা না করার পেছনে একটি অজুহাত পেশ করে থাকেন। আর তা হলোঃ “আসলে আমি যাদের সাথে যে সমাজে চলাফেরা করি, সেখানে আমার বর্তমান ড্রেসআপ বাদ দিয়ে ইসলামিক পোশাক মেনে চলা সম্ভব না।” এই ধরনের অজুহাত মুলত শুধুমাত্র কিছু অধুনা মুসলিম নারীই দিয়ে থাকেন, তারা মূলত হাল ফ্যাশনের জালে বন্ধী। তাই হালফ্যাশনের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে তিনি শুধু মাথায় রংচঙা স্কার্ফ পড়েন; পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে মোটেও আন্তরিক নন। তাদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছেঃ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার মালিক আল্লাহ তা‘আলা। পোশাকের আভিজাত্য, হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এগুলো কারও সম্মান ও মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারে না। কেবল আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহক রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর শারী‘আহর বিধিবিধান মেনে পরিপূর্ণ পর্দার মাধ্যমেই নিজের আত্ম-মর্যাদা ও সম্মান নির্ধারিত হয়। শুনুন এ ব্যাপারে আল্লাহ কী বলছেনঃ “তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক, আল্লাহর কাছে সে-ই সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী।” (সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)

কাজেই সেই দিনকে ভয় করুন, যেদিন আজকের কথিত প্রগতিশীল, মর্যাদাসম্পন্ন নারীদের ডেকে আল্লাহ বলবেন, “আজকের এই শাস্তি উপভোগ করো! পৃথিবীতে তো নিজেকে খুব শক্তিশালী সম্ভ্রান্ত মনে করতে! এটাই সেই শাস্তি, যে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ করতে।” (সূরা আদ-দুখানঃ ৫০) সুতরাং আল্লাহর বিধিনিষেধ অমান্য করে, তাঁর ক্রোধ অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব না। সম্ভব না জান্নাতে পৌঁছা। পৃথিবীতে কে আপনাকে সম্মান দিল, আর কে দিল না, কোন পোশাকে লোকে আপনাকে সুন্দর বলল, আর কে বলল না, এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা করুন কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার জন্য। আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিম বোনকে পরিপূর্ণ পর্দার সর্ত মেনে পর্দা করার তৌফিক দাণ করুক। আমিন।

অতীত নিয়ে তুমি যতই অনুশোচনা করো না কেনো, আর ভবিষ্যত নিয়ে তুমি যতই দুঃশ্চিন্তা করো না কেনো, তুমি তার কোনটাই পরিবর্তন করতে পারবে না। সুতরাং, সহজ-সাবলীলভাবে ও ধীর-স্থিরতার সাথে তুমি সামনের দিকে অগ্রসর হও, কারণ প্রত্যেকটা কাজের ফলাফল নির্ধারণ করেন আল্লাহ সুবহানাহু তাআ’লা। যা অন্য কোথাও যাবে বলে নির্ধারিত রয়েছে, সেটা কোনদিন তোমার কাছে আসবে না। আর যা তোমার ভাগ্যে লিখা রয়েছে, সেটা থেকে তুমি কোনভাবেই পলায়ন করতে পারবে না। মনে রেখো, আল্লাহ যা করেন তা অবশ্যই অবশ্যই ভালোর জন্যই করেন। তবে সবসময় আমাদের সেটা ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি অত্যন্ত কৌশলী ও বিজ্ঞ, আমাদের সেই মহান রব্বের কোন ইচ্ছা বা সিদ্ধান্তের ব্যপারে আপত্তি করা আসলে নিজের উপরেই জুলুম করা। সুতরাং, আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নাও, ধৈর্য্য ধারণ করো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, দেখবে একসময় যেটা তিক্ত মনে হয়েছিলো, সেটা মধুর মত মিষ্টি মনে হবে। ইনশাআল্লাহ।

❖ কোন শ্রেণীর মানুষের উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায় বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ যার মেজায নরম, স্বভাব কোমল, মানুষের নিকটতম এবং আচরণ সরল সহজ। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, জাহান্নামের আগুন হারাম যাদের উপরেঃ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকের সংবাদ দিব না? যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়; আর আগুনও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যার মেজায নরম, স্বভাব কোমল, মানুষের নিকটতম (মিশুক) এবং আচরণ সরল সহজ’। (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত, হা/৫০৮৪)।

সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ নফল ইবাদত, যা কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআ’লার নৈকট্যশীল করে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে অধিক পরিমাণে ক্বুরআন তিলাওয়াত করা, ক্বুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করা, ক্বুরআনের আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা এবং ক্বুরআনের অর্থ বুঝা। জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহর রহমত অর্জন করার একটি বড় উপায় হচ্ছে, বেশি বেশি ক্বুরআন তিলাওয়াত করা এবং ক্বুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করা। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তৌফিক দান করুক। আমিন। যদি জীবনকে সুখী ও শান্তিময় করতে চান, তবে কুরআনের সাথে আপনার সম্পর্ক আরো সুন্দর, মজবুত ও প্রাণবন্ত করুন। আর সেটা হচ্ছে ক্বুরআন পড়া, ক্বুরআন শোনা, ক্বুরআন বুঝা ও ক্বুরআনের উপর আমল করা তথা কুরআন দিয়ে জীবন গড়া। মনে রাখবেন, আল্লাহর যিকির দ্বারা মানুষের অন্তর সমূহ শান্তি পায়। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।” (সুরা রাদঃ ২৮)

❖ কোন তিনটি বিশেষ গুণের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, যে তিনটি গুণের অধিকারসম্পন্ন বান্দাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ভালোবাসেন? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ ১। মুত্তাক্বী, অমুখাপেক্ষী এবং প্রচারবিমুখ। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,"নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাক্বী, অমুখাপেক্ষী এবং প্রচারবিমুখ বান্দাকে ভালোবাসেন।" (সহীহ মুসলিমঃ ২৯৬৫)

একটি স্ত্রী মাকড়সা যখন ডিম দেয়, তখন সে ডিমটি অন্য কোন প্রাণী খেয়ে ফেলার ভয়ে অন্য কোথাও না রেখে নিজের বুকের সাথে আকড়ে ধরে রাখে। সে সময় বাচ্চারা তার মায়ের রক্ত-মাংসগুলো খেয়ে খেয়ে বড় হয় এবং অবশেষে তার "মা" কে শুকনো খোসায় পরিণত করে মৃত দেহটি ফেলে রেখে চলে যায় অন্যত্রে। এটিই হল "মা"। যে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে সন্তানের জন্য। “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সগিরা" -আমিন।

❖ জুমআর রাত্রিতে কোন সুরাটি পাঠ করলে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ সূরা কাহাফ, ১৮ নং সুরা। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নূর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি উহার শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও সে তার কোন ক্ষতি কর`তে পারবে না।” (সিলসিলায়ে সহীহাঃ ২৬৫১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জুমআর রাত্রিতে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে”। (সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীবঃ ৭৩৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত আলোকময় হবে”। (সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীবঃ ৭৩৬) সুরা কাহাফ হচ্ছে, পবিত্র কোরানের ১৫-১৬ নং পারার মধ্যে ১৮ নং সুরা। সুরাটি শুরু হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ দ্বারা।

❖ কোন মুসলমানকে কাফের বলার পরিণতি কোনটি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ কথাটি যে বলেছে সে নিজেই কাফের হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, কোন মুসলমানকে কাফের বললে, এতে যদি ঐ ব্যক্তি কাফের না হয়, তবে কথাটি যে বলেছে তার উপর পতিত হবে। অর্থাৎ যে কাফের বলেছে সে নিজেই কাফের হয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যাকে কাফের বলা হবে সে সত্যিকারে কাফের না হ’লে যে কাফের বলল তার দিকেই সেটা ফিরে আসবে (মুসলিম হা/৬০; বুখারী হা/৬১০৩)। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার (মুসলিম) ভাইকে কাফের বলাটা তাকে হত্যা করার মত অপরাধ (বুখারী হা/৬০৪৭; মিশকাত হা/৩৪১০)। তবে কাউকে এরূপ কাজ করতে দেখলে, তোমার এ কাজটি কুফরী পর্যায়ভুক্ত বা তোমার মধ্যে মুনাফিকের এই আলামতটা দেখা যাচ্ছে এরূপ বলা যেতে পারে।

গার্জিয়ানদের উচিৎ উপযুক্ত পাত্র দেখে নারীদেরকে বিয়ে দেওয়া। (১) “অভিভাবকের কর্তব্য হচ্ছে তার অধীনস্থ নারীদেরকে তাক্বওয়াবান ও দ্বীনদার পুরুষের কাছে বিয়ে দেওয়া।” আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (ফিকহী বিশ্বকোষ) গ্রন্থের ২৪/৬২। (২) শাইখ সালেহ আল-ফাওযান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “বিয়ের ক্ষেত্রে সৎ ও দ্বীনদার পাত্র নির্বাচন করা কর্তব্য, যে পাত্র বিয়ের পবিত্রতা রক্ষা করবে ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন যাপন করবে। এ ক্ষেত্রে কোনরূপ ছাড় দেয়া জায়েয নয়। বর্তমানে এই স্পর্শকাতর বিষয়ে ব্যাপক অবহেলা দেখা যাচ্ছে। এখন লোকেরা এমন ছেলেদের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয় অথবা তাদের আত্মীয়দের বিয়ে দেয় যে ছেলেরা আল্লাহকে ভয় করে না, পরকালকে পরোয়া করে না। নারীদের পক্ষ থেকে এ ধরনের স্বামীর ব্যাপারে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নারীরা এ ধরনের স্বামীদের নিয়ে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিয়ের আগে তারা যদি সৎ পাত্র তালাশ করত আল্লাহ তাদের জন্য এমন পাত্র পাওয়া সহজ করে দিতেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবহেলার কারণে, অথবা সৎ পাত্রের ব্যাপারে গুরুত্ব না দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটি ঘটছে। খারাপ লোক কোনদিন ভাল হয় না। তাই পাত্র নির্বাচনে অবহেলা করা জায়েয নয়। কারণ খারাপ লোক তার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করবে। এমনকি স্ত্রীকে দ্বীন বিমুখ করে ফেলতে পারে। সন্তান-সন্ততির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।” ‘আল-মুনতাকা’ গ্রন্থের ৪র্থ খন্ড, প্রশ্ন নং ১৯৮। (৩) শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উছাইমীন রহি’মাহুল্লাহ নুরুন আ’লাদ-দারব ফতোয়া সংকলনে (বিবাহ/পাত্র নির্বাচন/প্রশ্ন নং-১৬) বলেন, “মেয়ের অভিভাবকের জন্য ফরজ হচ্ছে, প্রস্তাব দেওয়া ছেলের দ্বীনদারি ও চারিত্রিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া। যদি ভাল তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দিবে। আর যদি বিরূপ তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকবে। যদি আল্লাহ দেখেন যে, এই অভিভাবক শুধু দ্বীনদারি ও চারিত্রিক কারণে এই ছেলের কাছে বিয়ে দেয়নি তাহলে তিনি অচিরেই তার মেয়ের জন্য দ্বীনদার ও চরিত্রবান ছেলের ব্যবস্থা করে দিবেন।”

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট