যখন কুরআন পড়বেন.....

 


যখন কুরআন পড়বেন এ দৃষ্টিতে পড়ুন যে, এ কিতাবটি আপনার সৃষ্টিকর্তার, এটি ইন্সট্রাকশনের (নির্দেশাবলীর) বই, হেদায়েতের বই এবং যে বইটি আপনার নিজস্ব প্রকৃতিকে প্রস্ফুটিত করে, বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়ার বই। এ কিতাবটি এসেছে আপনাকে মনে করিয়ে দিতে।

পড়া শুরু করার আগে গভীরভাবে উপলব্ধি করুন, এই কিতাবটি আমার রবের কিতাব। যিনি আমাকে তৈরী করেছেন এটি তাঁর বই। যিনি আমার প্রতি সর্বাধিক আন্তরিক। তিনি সত্যিই আমাকে পথ দেখাতে চান। তিনি আমাকে ভালোবাসেন। তিনি আমার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দয়ালু। এ কথাগুলো মনে করে যদি কুরআন পড়তে যান, পড়া শুরু করার আগেই আপনার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে। আবু হুরাইরা (রা) কখনো কখনো কুরআন পড়ার পূর্বে অজ্ঞান হয়ে যেতেন। "হাজা কিতাবু রাব্বি" এটি আমার প্রভুর কিতাব!! তিনি আমার জন্য এটি পাঠিয়েছেন!! শুধু চিন্তা করে দেখুন, মহাকাশ থেকে পাঠানো ফ্রেশ একটি কিতাব। মুসলমানদের আসলে বড়ই কৃতজ্ঞ হওয়া উচতি এটা ভেবে যে, মহাকাশ থেকে পাঠানো একেবারে ফ্রেশ কিছু জিনিস তাদের আছে। আর তা হলো- আল্লাহর কিতাব কুরআন এবং আল্লাহর ঘর কা'বা, এর ফাউন্ডেশন। এগুলো মানুষের প্রতি আল্লাহর বড়ই করুণা। এই কিতাবের প্রতিটি শব্দকে আমাদের ভালোবাসা উচিত। কারণ, এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে এসেছে। কুরআনকে কুরআনের দৃষ্টিকোণ থেকে পড়ুন। ইউনিভার্সের (মহাবিশ্বের) সৃষ্টিকর্তার বই হিসেবে এটিকে পড়ুন। এটি এমন এক রবের বই যিনি আমাকে আমার বাবা-মার চেয়েও বেশি ভালবাসেন। আগের দিনে মানুষ মায়ের কাছ থেকে বা বাবার কাছ থেকে চিঠি পেলে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতো। চিঠিগুলো বার বার পড়তো। আর কুরআনের এ চিঠিগুলো এমন একজনের কাছ থেকে এসেছে যিনি আপনার মায়ের চেয়েও আপনাকে বেশি ভালবাসেন। আপনার তো বার বার এগুলো পড়ার কথা। জানার চেষ্টা করা যে তিনি আমার কাছ থেকে কী চান। আপনার তো শুধু পড়ার কথা না, বরং পড়াটাকে উপভোগ করার কথা। কুরআনের বার্তাগুলোকে বার বার উপভোগ করার কথা। আমার রব আমার কাছ থেকে অমুক অমুক জিনিস চান। তিনি আমাকে অমুক অমুক কাজগুলো করতে বলেছেন। আমি করবো। দৃঢ় প্রতিজ্ঞাসহ করবো। আমার রব আমাকে কিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন, আর আমি অলস হয়ে বসে থাকবো? না। এমনটি কখনো ঘটতে পারে না। - ড. আকরাম নদভী

ধরুন, এক ব্যক্তি তার বাচ্চাদের নিয়ে একটি বন দেখতে গেলো। সেখানে ছোট ছোট প্রাণীরা আছে; যেমন, ইঁদুর, পিঁপড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আপনি বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলছেন। হঠাৎ দেখলেন, বিশাল এক সিংহ কোত্থেকে সামনে এসে উপস্থিত হলো। কি হবে তখন? আপনি কি তখন ছোট ছোট ইঁদুর আর পিঁপড়া নিয়ে চিন্তা করবেন? আপনি তখন আপনার প্রচেষ্টার শতভাগ ব্যয় করবেন এই সিংহের আক্রমন থেকে বাচ্চাদের এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য। ছোট ছোট সমস্যাগুলো আপনার মাথা থেকে হারিয়ে যাবে। মাটিতে থাকা পিঁপড়াগুলো সম্পর্কে আপনি তখন কোনো চিন্তাই করবেন না। বর্তমানে আমরা পিঁপড়া, ইঁদুর আর ছোট ছোট পোকামাকড় নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু সত্যিকারের সমস্যা নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমরা ছোট সমস্যাগুলো নিয়েই পড়ে আছি। এই দুনিয়াতে আমাদের বাচ্চারা কিভাবে উন্নত জীবন যাপন করবে আমরা শুধু এটা নিয়েই চিন্তিত। তারা জাহান্নামের আগুন থেকে কীভাবে নিজেদের বাঁচাবে এ ব্যাপারে আমাদের কোনো চিন্তা আছে? এ ব্যাপারটার প্রতি আমরা কি আদৌ কোনো গুরুত্ব প্রদান করি? এই জগতে আমাদের সবার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হওয়া উচিত- কিভাবে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবো। যে দুইটি কারণে মানুষ দোজখের আগুন নিয়ে চিন্তিত নয় তা হলো- ১. জাহালাহ এবং ২. গাফলাহ জাহালাহ মানে অজ্ঞতা। মানুষ ব্যাপারগুলো ভালো করে জানে না। আর গাফলাহ মানে- তারা আগুনের ব্যাপারটা জানে। কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তা করতে চায় না। কারণ, এটা তাদের আনন্দ নষ্ট করে দেয়। তারা শুধু এ দুনিয়া উপভোগ করতে চায়। এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অজ্ঞতা। বিশেষ করে মুসলিম নেতাদের অজ্ঞতা। অধিকাংশ মুসলিম নেতাদের মূল চিন্তা হলো ছোট ছোট সমস্যাগুলো। কারণ, এ ধর্ম কেন এতোটা সিরিয়াস তারা এ ব্যাপারটা ভালো করে বুঝার চেষ্টা করেনি। এখন, আপনি যদি অজ্ঞ মানুষদের নেতা মানেন কিভাবে পথ খুঁজে পাবেন? রাসূলুল্লাহ (স) কখনোই মাইনর ইস্যুগুলোকে (ছোট বিষয়গুলোকে) মেজর ইস্যুতে (বড় বিষয়ে) পরিণত হতে দেননি। তাঁর একমাত্র মূল চিন্তা ছিল মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো। অধিকাংশ সময় আমরা সাধারণ মানুষেরা জাহান্নামের আগুন নিয়ে অজ্ঞ থাকি এবং যাদের কথামতো চলি তারাও এ নিয়ে অজ্ঞ থাকে। হয়তো তারা আন্তরিক। কিন্তু, এ আন্তরিকতা যথেষ্ট নয়। আপনাকে জ্ঞান অর্জনও করতে হবে। কুরআন যে ব্যাপারটাকে তার মূল কনসার্ন বানিয়েছে আপনাকেও সেটাকে মূল কনসার্ন বানাতে হবে। - ড. আকরাম নদভীর আলোচনা থেকে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট