শয়তান আল্লাহর নিকট কি যুক্তি দেখায় ?

 


শয়তান আল্লাহর নিকট যুক্তি দেখায়- “আমাকে বানিয়েছেন আগুন থেকে, আর আদমকে বানিয়েছেন মাটি থেকে।” তাই, আমি সেজদা করতে পারবো না।

কিছু আলেম এই ভাষার ব্যবহারে দারুণ আগ্রহী হয়েছিলেন! আগুন আর মাটি। তাঁরা এ নিয়ে প্রচুর চিন্তা ভাবনা করেন। সেখান থেকে কিছু কথা নিম্নে তুলে ধরছি। সে আমাদের ব্যাপারে বলছে, আমরা কাদামাটির। ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ন। কারণ, যদি আপনি কাদামাটি নিয়ে আগুনে ফেলেন তাহলে তার কী হয়? আগুন নিভে যায়। কিন্তু আপনি যদি আগুন নিয়ে কাদামাটিতে দেন, তবে আপনি আসলে সেটাকে ছাঁচে ফেলে তাকে মাটির শিল্প বানাতে পারেন। তাই না? মাটি অদম্য। এতে আগুন ধরবে না ঠিক, কিন্তু তা শক্ত হলে আপনি তা থেকে উপকারী জিনিস বানাতে পারবেন। তো এভাবে শয়তানের তাপ মানুষকে আক্রমণ করে। আর এ আক্রমণ মানুষকে শুধু আরও শক্তিশালী করে তোলে। বিস্ময়কর চিত্র এটা। “আমাকে বানিয়েছেন আগুন থেকে, আর তাকে বানিয়েছেন মাটি থেকে।” বস্তুত সে বলছে, আমি উত্তম। এখন দেখি তো। সে কি চায় আমরাও সারাক্ষণ এমনটাই মনে করি? আমি এটা থেকে সৃষ্টি, তুমি ওটা থেকে। “তুমি চাকরি পেয়ে গেছো?! তুমি তো মাত্র আসোসিয়েট আর আমার ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে!” “দাড়াও! তাদের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের তো নাগরিকত্বও নেই!” হাহাহা “কি বলছো? তাদের মসজিদ আট লাখ ডলার উত্তোলন করেছে!” “আর আমরা কি করছি! আমার তো কি?! আমাদের এলাকা তো আরও বড়লোকদের!” “এই! এক সেকেন্ড দাঁড়ান! তারা তাদের মেয়ের বিয়ে বা তাদের ছেলের বিয়ে ওই হলে ওই জায়গায় করেছে! এতো টাকা কই পেলো?” “তারা এতো খাতির কেন পেল? আমরা কেন পেলাম না?” “তারা বাড়ি কিনে ফেললো আর আমরা এখনো ভাড়া বাসায় থাকি!? আমাদেরও বাড়ি থাকা উচিত!” এগুলো কিন্তু শুধু বাস্তব আর সামাজিক প্রেক্ষাপটেই হয় না। এতটুকুই না! আরও অনেকদূর যায়! ইসলামিক দৃশ্যেও এসব দেখা যায়! “সে কেন প্রধান বক্তা হলো?” “তাদের যুব কার্যক্রম আমাদের কার্যক্রম থেকে বেশী সফল কেন হলো?” “তাদের দল আমাদের দল থেকে বেশী উন্নতি করছে কেন?” আসলেই! এসব মসজিদের ভেতরেও হয়! “কীভাবে সেই লোক মসজিদের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হতে পারে?!” “সে কীভাবে সেক্রেটারি হয়ে গেলো!” হায় আল্লাহ! শয়তান আপনার জীবনের প্রতিটি কর্নারে আক্রমণ চালায়। আর বলে, “কেন সে? আমি না কেন? তারা কেন? আমরা না কেন? আমি উত্তম। আমিই ভালো! আমিই বেটার! সে না। তারা না। কেউ না।” সারাক্ষণই! সারাক্ষণই! সেটা আপনার পড়াশোনার পরিধি হোক অথবা আপনার শারীরিক গঠন, অথবা আপনার শরীরের বর্ণ, কিংবা আপনার ভাষা, কিংবা উচ্চারণভঙ্গি… যা-ই হোক না কেন, কোনভাবে না কোনভাবে আপনিই ভালো। “আরে আপনি দেখলেন! সেই মহিলাটা! তার ব্যাগটা নকল!” “আমারটা আসল।” বুঝতে পারছেন? বস্তুগত জিনিস পর্যন্ত! তুলনা তুলনা তুলনা! কারণ শয়তান এটাই চায়। এক- সে চায় আপনি নিজেকে মূল্যহীন মনে করেন। আপনি মাটির চাইতে বেশী কিছু না। আর দুই-সে চায় আপনি যেন অন্যদের সাথে তুলনা করে নিজের জীবন পার করে দেন। শয়তান নিজে কি করে তার কিছু আমরা শিখেছি তাই না? প্রত্যেকটা জিনিস যা সে করে, তার ইচ্ছা আপনিও তা করুন। সে চায় আপনি তুলনার জিন্দেগী যাপন করুন। তাই সারাজীবন আপনি ভাবেন, “আমার ভাই বা আমার বোন কেন আমার চাইতে বেশী আদর পায়?” “কেন আল্লাহ তাদের আমার চাইতে ভালো genes দিলেন!” কেন এটা! কেন ওটা! সারাক্ষন তুলনা! আর আপনার মূল্য!? অনেকে এসে আমার কাছে বলে, - “আমি কিছু একটা হতে চাই!” - আমি কিছু একটা হতে চাই মানে কি? - আমার সব ভাইবোনদের বড় বড় চাকরি আছে, আমার নেই। - ও! ভাই বোনদের সাথে টক্কর দিতে পারলে আপনি কিছু একটা হবেন? যখন আপনি তুলনা করতে পারবেন, বলতে পারবেন আমার এতো এতো টাকা। - “কারণ তারা আমাকে বলে সে কতো টাকা জমা করেছে, ও কতো জমিয়েছে। আমার জমা টাকা নেই।” - আচ্ছা! নিজেকে তুলনা করতে পারলে আপনার মূল্য হয়!? জানেন? যখন আপনি অন্যদের পেছন পেছন ঘুরেন তাদের সাথে নিজেকে তুলনা করার জন্য, তাদেরকে প্রমাণ ধরার জন্য, তার মানে আপনি আগেই হেরে গেছেন। সেটাই শয়তানের চাল। অন্য যে কোনো ব্যর্থতার চেয়ে আপনি শয়তানের এ আচরণটাই বেশি নকল করছেন। সে নিজের মূল্য নিজে দেখতে পায় না, তাই তার নিজেকে আদমের সাথে তুলনা করতে হয়। সে যথেষ্ট ভালোই ছিল। তাকে ফেরেশতাদের কাতারে নেয়া হয়েছিল! বুঝতে পারছেন!! সে ভালো ছিল! যথেষ্ট ছিল! তারপরেও তার সবই চলে গেলো। কারণ, সে নিজের মূল্য দেখতে পাচ্ছিল না। নিজেকে আদমের সাথে তুলনা করতে গেলো। এটাই হয় মানুষের সাথে। আপনি সফল হতে পারেন, আপনার ভালো চাকরি আছে। আপনার সবই ঠিক আছে। কিন্তু আপনি সর্বক্ষণ কারও সাথে নিজেকে তুলনা করে চলছেন। আর মাথায় এই রোগের কারণে আপনি কখনোই সুখী না। সবসময় অসুখী। বাই দ্য ওয়ে, শয়তান নিজেও অসুখী। তাই না? সে চায় আপনি যেন সারাক্ষণ অসুখী হয়ে থাকেন। তাই আপনি যদি অসুখী থাকেন, জেনে রাখুন শয়তানের তাতে হাত আছে। দুঃখ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে, কিন্তু যে জায়গা থেকে অবশ্যই আসে তা হলো, শয়তান চায় আপনি দুখী থাকেন। সে চায় আপনি দুর্দশাগ্রস্ত জীবন যাপন করুন। - নোমান আলী খান - স্টোরি নাইট আলোচনার অংশবিশেষ

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট