হৃদয় থেকে হৃদয়ে

 


হৃদয় থেকে হৃদয়ে

- নোমান আলী খান মুসলমানদের মাঝে অন্য মুসলিমদের নিয়ে বহু পূর্বানুমান কাজ করে। কেউ কিছু একটা নিয়ে কথা বলার সাথে সাথে আমরা অনুমান করে বসি- "ওহ! সে তো মনে হয় চরমপন্থী গ্রূপের।" অথবা এ অনুমান না করলে অন্যটা করি- "ওহ! সে তো মনে হয় প্রগ্রেসিভ মুসলিম। ওহ! লোকটা তো মনে হয় অমুক দলের।" আর আপনি যদি এ দলগুলোর কোনো একটার প্রতি কিছু দয়া, সহমর্মিতা বা তাদের কিছুটা বোঝার চেষ্টা করেন তখন অন্যরা আপনাকেও অমুক দলের মেম্বার মনে করা শুরু করে। এভাবে তীব্র একটা ভয় কাজ করে। আগে আমাকে খুঁজে দেখতে হবে সে কোন দল থেকে এসেছে। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে আমি যেন বর্ডারের অন্য পাশে পড়ে না যাই। এইসব দলাদলির সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি কি জানেন? এর ফলে আমাদের ধর্মের সত্যিকারের সুন্দর শিক্ষাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমার অভিমতে, কুরআন তিলাওয়াত করা হচ্ছে। মানুষ শিখছে এবং অন্যদের শেখাচ্ছে। বহু ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের দ্বীনের সত্যিকারের স্পিরিট, মানুষের অন্তরে যে মনোভাব এর গড়ে তোলার কথা, অন্তরের যে চিকিৎসা এর করার কথা- তা কোথায়? তার দেখা কোথায় মিলছে? আমার ক্ষেত্রে... আমি বুঝতে পারলাম, অনেকগুলো ব্যক্তিগত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, এ বুঝ সহজে আসেনি। আমি ১৯৯৯ সাল থেকে ব্যাপকভাবে কুরআন অধ্যয়ন করছি। এ অধ্যয়ন আমার জীবনের গভীর একটি (ভালো) আসক্তি। আমি জানি না হয়তো জীবনে অন্য কিছু করতে পারতাম না, আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করা ছাড়া। যেভাবে আমি অধ্যয়ন করি। এতোসব অধ্যয়ন সত্ত্বেও জীবনের কঠিন সময়গুলোর কারণে আমি আসলে বুঝতে পারলাম, কিছু শিক্ষা আল্লাহর কিতাবে সবসময় ছিল কিন্তু তা আমার দৃষ্টিতে পড়েনি। শিক্ষাটা সবসময় ছিল কিন্তু আমি তা দেখতে পাইনি। আজ সেরকম একটা শিক্ষা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আল্লাহ তায়ালা বলেন- اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ - "আল্লাহ মু’মিনদের অভিভাবক, তাদেরকে তিনি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।" চলুন, আয়াতটি নিয়ে কিছু মুহূর্ত ভেবে দেখি। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আপনাদের মনে হতে পারে, এ আয়াতে বলা হচ্ছে- সাহাবারা আগে কাফের ছিল তিনি তাদের কুফুরি থেকে ইসলামে নিয়ে আসলেন। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসলেন। কিন্তু, আয়াত তো শুরু হয়েছে- "আল্লাহু ওয়ালিউল্লাজিনা আমানু" দিয়ে। আয়াতের সিইগা, কালের দিকে লক্ষ্য করুন। আল্লাহ তাদের অভিভাবক যাদের ইতোমধ্যে ঈমান রয়েছে। তাহলে যে মানুষদের নিয়ে কথা বলা হচ্ছে তাদের ইতোমধ্যে ঈমান রয়েছে। এরপর তিনি বর্তমান কাল ব্যবহার করেন। "ইউখরুজুহুম মিনাজ জুলুমাতি ইলান নূর"। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসতে থাকেন। এর মানে কী জানেন? এমনকি একজন ঈমানদার ব্যক্তিও আঁধারে পড়ে যেতে পারে। এমনকি ঈমান আনার পরেও কোনো একটি অন্ধকার আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারে। আর এটা শুধু একটা অন্ধকার নয়। হতে পারে বিভিন্ন ধরণের তমসায় আটকে যেতে পারেন। হতে পারে পিতামাতার সাথে কিছু নিয়ে সমস্যার কারণে আপনি একটি অন্ধকারে পড়ে গেছেন, অন্য একটি অন্ধকার আপনার ছেলে-মেয়েদের সাথে সমস্যার কারণে, অন্য একটি স্ত্রীর সাথে সমস্যার কারণে, অন্য একটি নিজের সাথে নিজের লড়াইয়ের কারণে, অন্য একটি নিজের একাকীত্বের কারণে। মানুষ নীরবে বিভিন্ন ধরণের সংগ্রাম করে যায়। আর তারা এগুলোর কথা কখনো কাউকে বলে না। কারো কাছে এগুলো প্রকাশ করা তার নিকট খুবই বিব্রতকর। তাই, তারা নিজের মাথায় এগুলো নিয়ে ঘুরে ফিরে। নিজের মাথায় এগুলো নিয়ে বসবাস করে যায়। আজ ফজরের সময় এক যুবকের সাথে কথা হলো। সে শুধু আমার সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে চেয়েছিল। তো, সে বলল, আমি কি আপনার দশটা মিনিট সময় পেতে পারি? আমি বললাম, কোথা থেকে এসেছ তুমি? সে ত্রিশ মাইল দূর থেকে এখানে ফজর পড়তে এসেছে। আমি বললাম, আচ্ছা বসো। আর সে আমার কাছে সময় চেয়েই লজ্জিত হয়ে পড়েছিল। আমাদের অডিটোরিয়ামে আমি তার সাথে বসলাম। আমার মনে হয়, প্রথম পাঁচ মিনিট সময় তার ব্যয় হলো শুধু চিন্তাগুলো জড়ো করতে। কারণ, তার চোখ দিয়ে ক্রমাগত অশ্রুর বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। তার বুকের মধ্যে কিছু কথা আটকে আছে। কারো নিকট কথাগুলো বলে সে কিছুটা হালকা হতে চাইছিল। কিন্তু, কাউকে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। আমি জানি না, যদি কাউকে বলি সে আমাকে কী মনে করবে। সুবহানাল্লাহ! সে কী বলেছিল তা আমি আপনাদের বলতে যাচ্ছি না। সেটা আমার আর তার মাঝে। মূল পয়েন্ট হলো- বহু মানুষ নিজের ভেতর বহু অশ্রু জমা করে আছে। বহু গভীর অশ্রু তাদের জমা হয়ে আছে। সে শুধু শুনতে চায়, আল্লাহ তাকে ভুলে যাননি। আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। আল্লাহ তাকে জাহান্নামে ফেলতে চান না। যদি সে ভুল করে থাকে, আল্লাহর অত্যন্ত যত্ন এবং ভালোবাসাসহ বলার পদ্ধতি আছে যে, তার কাজটা কতটা ভুল ছিল। এখন, তার পথ পরিবর্তন করার সময়। তাকে শুধু কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে, শক্তি জোগাড় করে আল্লাহর পথে হাঁটা শুরু করতে হবে। এমনকি সে যদি ঈমানদারও হয়ে থেকে এবং কোনো কারণে শয়তানের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে তার জীবনটা আজ দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এমন অন্ধকার গর্তে পড়ে গেছে যে জীবনে কোনোদিন কল্পনা করেনি সে এমন কাজ করবে। তার আশে পাশের মানুষজন তার নাম মুছে ফেলেছে। তারা তাকে পরিত্যাগ করেছে। "কিভাবে তোমার এমন পতন হলো। তুমি খুবই জঘন্য একটা মানুষ। তোমার চেহারাও কখনো দেখাবে না। নিজেকে আবার মুসলিম বল।" অনেক সময় মুসলিমরাই অন্য মুসলিমদের প্রতি সবচেয়ে নির্দয় আচরণ করে। আমার বলতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় আমরা মুসলিমরাই সবচেয়ে নিষ্ঠুর আচরণ করি। আমি এ কথা বলতাম না যদি আমার এর অভিজ্ঞতা না হতো। আল্লাহ আমাকে আমার জীবনে এমনসব পরিস্থিতিতে ফেলেছিলেন যেখানে আমাকে মানসিক, আধ্যাত্মিক, ব্যক্তিগত অন্ধকারের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয়েছিল। বিভিন্ন উপায়ে। হয়তো আমার এ অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করার কারণ হলো আল্লাহ আমাকে দেখাতে চেয়েছেন যে, বহু মানুষ জীবনে এমন তমসাচ্ছন্ন সময় পার করে আর তুমি তা এমকি দেখতেও পাও না। তুমি জানো না তারা কি কঠিন সময় পার করে। "আল্লাহু ওয়ালিউল্লাজিনা আমানু, ইউখরুজুহুম মিনাজ জুলুমাতি ইলান নূর- আল্লাহ মু’মিনদের অভিভাবক, তাদেরকে তিনি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।" (২:২৫৭) মূল বক্তব্যঃ A Heart to Heart || nouman ali khan

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট