বিচার দিবসের স্বপক্ষে নৈতিক যুক্তি কী?

 


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিচার দিবসের স্বপক্ষে নৈতিক যুক্তি তুলে ধরেন। বিচার দিবসের স্বপক্ষে নৈতিক যুক্তি কী? পৃথিবীর এই জীবন মজ্জাগতভাবে অন্যায্য। যদি কোনো বিচার দিবস না থাকে তাহলে আল্লাহ যে নিখুঁত ন্যায় বিচারক তার কোনো প্রমান পাওয়া যাচ্ছে না। এই যুক্তিটি আল্লাহ কুরআনে ব্যবহার করেছেন। দুনিয়াতে যেহেতু ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না, তাহলে তোমরা কিভাবে বিচার দিবসকে অস্বীকার করো?

আর আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা অন্যায় অবিচারকে বিনা শাস্তিতে পার পেতে দিবেন না। তাই, কুরআন বিচার দিবসের অস্তিত্বের স্বপক্ষে এভাবে নৈতিক যুক্তি তুলে ধরে। আর পাশ্চাত্যের দার্শনিকরা সাম্প্রতিক সময়ে এসে এই যুক্তি নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। আল্লাহ ভালো জানেন, হয়তো তারা কুরআন থেকে এটা শিখেছেন। এরপর তারা এই যুক্তির আলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আল্লাহর অস্তিস্ত্ব প্রমানের চেষ্টা করেছেন। আমাদের জন্য এই যুক্তিটি কুরআনে প্রদান করা হয়েছে। এই বিষয়ে বহু আয়াত রয়েছে। তার মাঝে একটি হলো, আল্লাহ বলেন - أَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِينَ كَالْمُجْرِمِينَ - "তবে কি আমি মুসলিমদেরকে (অনুগতদেরকে) অবাধ্যদের মতই গণ্য করব?" مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ - "তোমাদের কী হয়েছে? তোমাদের এ কেমন সিদ্ধান্ত?" এটি একটি আলঙ্কারিক প্রশ্ন। আলঙ্কারিক প্রশ্ন হলো এমন প্রশ্ন যার উত্তর প্রশ্নের সাথেই দেয়া আছে, যা আলাদাভাবে উল্লেখ করার দরকার নেই। স্পষ্ট কোনো সত্যের উপর জোর প্রদানের নিমিত্তে আলঙ্কারিক প্রশ্ন করা হয়। সত্যিকারার্থে প্রশ্ন করার জন্য নয়। এটি এমন একটি আলঙ্কারিক প্রশ্ন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই রকম একটি আলঙ্কারিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন কারণ উত্তরটা এতোই স্পষ্ট যে আলাদা করে এর জবাব দেয়ার দরকার নেই। তো, আল্লাহ বলছেন - أَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِينَ كَالْمُجْرِمِينَ - "তবে কি আমি মুসলিমদেরকে (অনুগতদেরকে) অবাধ্যদের মতই গণ্য করব?" مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ - "তোমাদের কী হল ? তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?" (৬৮: ৩৫-৩৬) আল্লাহ মানুষের মাঝে কিছুটা সেন্স আনার চেষ্টা করছেন। তোমরা কি মনে করো একজন ভালো মানুষ এবং একজন খারাপ মানুষ জীবন যাপন করবে তারপর মরে যাবে, তাদের কিছুই হবে না? এটা তো ন্যায়ানুগ নয়। আরো পরিষ্কার একটি আয়াতে আল্লাহ কুরআনে বলেন - أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ - "যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে কি আমি ওদের মত করব যারা দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে? আমি মুত্তাক্বীদের কি অপরাধীদের মত গণ্য করব?" (৩৮:২৮) এখানে এমনকি আরো পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে কি আমি ওদের মত করব যারা দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে? যারা দুনিয়াতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, যারা গণহত্যা চালায়, যে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক? তোমরা কি মনে করো যে নির্যাতন চালায় আর যারা নির্যাতিত হয় উভয়ের ফলাফল সমান হবে? অন্য আয়াতে বলেন - سَوَاءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ - "তাদের জীবন ও মুত্যু কি সমান হবে?" سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ - কতই না মন্দ তাদের ফয়সালা! (৪৫: ২১) কতই না মন্দ তাদের ফয়সালা! তোমরা মনে করো একজন গণহত্যাকারীর কিছুই হবে না, সে পার পেয়ে যাবে? এই দুনিয়াতে যদি তার বিচারও হয় তাকে শুধু একবারই মৃত্যু দন্ড দয়া যাবে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করার তুলনায় এই শাস্তি তো কিছুই না। ২০-৩০ বছরের জেল খাটার কাছে একটি দেশ ধ্বংস করে দেয়ার কি কোনো তুলনা হয়? বহু নৃশংস স্বৈরশাসক যা করেছে। তাই, আল্লাহ বলেছেন তোমাদের কী হল? তোমরা কিভাবে বিচার দিবসকে অস্বীকার কর? যখন তোমরা নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছ মানুষের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, যখন তোমরা দেখতে পাচ্ছ একজন সৎ-ধার্মিক মানুষ কষ্টকর জীবন পার করে, তাদের প্রতি অন্য মানুষেরা অন্যায় আচরণ করে অথবা তাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, এমনকি যদি তারা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করে কিন্তু তারা তো তাদের ভাল কাজের প্রতিদান পায়নি। তার ভাল কাজের প্রতিদান কোথায়? সে তার সারা জীবন সততা এবং নিষ্ঠার জিন্দেগি যাপন করেছে, কিন্তু তারপরেও তাকে নানারকম চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। যাপন করতে হয়েছে একটি কঠিন জীবন। আর অন্যদিকে আরেকজন, প্রাচুর্যের মাঝে তার জন্ম। প্লেবয় হিসেবে জীবন করেছে পার। আখেরাতের কোন পরোয়া করেনি। হয়ত সে সাধারণ জানোয়ারের মত জীবন যাপন করেছে এবং স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। এটা কি ন্যায্য? সে এই দুনিয়ার সকল আনন্দ মজা উপভোগ করলো আর জীবন যাপন করলো পশুর মত। আর অন্যদিকে সৎ-ধর্মভীরু, পরোপকারী মানুষটি সব ভাল থেকে হল বঞ্চিত। তাই, আল্লাহ পরকাল অস্বীকারকারীদের বলছেন - سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ - কতই না মন্দ তাদের ফয়সালা! (৪৫: ২১) مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ - "তোমাদের কী হল ? তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?" (৬৮: ৩৫-৩৬) তোমাদের বাস করা পৃথিবীর নৈতিক বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে কিভাবে তোমরা এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছ! কিভাবে তোমরা রায় দিচ্ছ যে কোনো বিচার দিবস নেই! এটি খুবই ইন্টারেস্টিং একটি যুক্তি বিচার দিবস প্রমাণ করার জন্য। আর তা হলো এই দুনিয়াতে ন্যায় বিচার নেই। তাই এমন একটি জায়গা অবশ্যই থাকতে হবে যেখানে নিখুঁত ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে। যে ভালো কাজ করে বা খারাপ কাজ করে, তার কাজের জন্য সে পুরস্কার বা শাস্তি পাবে। --- ডঃ ইয়াসির কাদি -- The Day of Judgement(Episode 1) এর অংশ বিশেষ

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট