ওয়া সদ্দাকা বিল হুসনা


 ওয়া সদ্দাকা বিল হুসনা অর্থ

-------------------------------------- এরপর আছে তৃতীয় আইটেম যা এ দুইটিকে একত্রে সিলযুক্ত করে দেয়। আর তা হলো- ওয়া সদ্দাকা বিল হুসনা। এটি জটিল কোনো পাঠ নয়। ব্যাখ্যা করতে বেশি সময় নেওয়া উচিত না। কিন্তু এতে আছে নিগূঢ় শিক্ষা। মুফাচ্ছিরদের জন্য এতে জটিলতা তৈরী হয় কারণ 'আল-হুসনা' শব্দটি একটি এডজ্যাকটিভ। গুণবাচক শব্দ। অর্থ: সবচেয়ে সুন্দর। তাহলে আয়াতটির অর্থ হলো- সে সবচেয়ে সুন্দর জিনিসকে সত্য বলে গ্রহণ করে নিয়েছে। (He accepted the truth in the most beautiful) সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কী? কোথাকার সবচেয়ে সুন্দর জিনিস? তাই, কেউ কেউ বলেছেন আল-হুসনা হলো সবচেয়ে সুন্দর বাণী। অর্থাৎ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অর্থাৎ যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, সবচেয়ে সুন্দর কাজ। এরকম আল-হুসনা বলতে কী বুঝায় এ নিয়ে অনেক ধরণের মন্তব্য পাওয়া যায়। আমি যুক্তি দেখাবো, আল-হুসনা বলতে আসলে 'সত্য'-কে বুঝায়। আল-কালিমাতুল হুসনা। যে কোনো সত্য বাণী সবচেয়ে সুন্দর জিনিস। অন্য কথায়- সহজে আপনাদের বুঝিয়ে বলছি। এর আগে চলুন, আয়াতের প্রথম অংশ 'সদ্দাকা' বা সিদ্ক বলতে কী বুঝায় তা জেনে নিই। আমরা সবাই শব্দটির অর্থ অবগত আছি। সিদক মানে সত্য। আরবি ভাষার একটি চমৎকার দিক হলো- বিমূর্ত ধারণা যেমন সত্য, এদের মূল আরবি শব্দটি মূর্ত কিছুর সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। সিদক শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো এমন কিছু যা কঠিন বা শক্ত। এমন কিছু যা নুয়ে পড়ে না। নত হয় না। আর কাজিব (মিথ্যা) এর মূল অর্থ হলো- এমন কিছু যা নরম, কোমল। কারণ মিথ্যাকে সবসময় বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কিন্তু সত্য তো খাপ খেয়ে চলে না। সত্যকে তো এডজাস্ট হতে হয় না। সত্য তো সত্যই। গরম বা ঠান্ডা, সহজ বা কঠিন সত্য সত্যই। শুনতে তিতা লাগলেও সত্য সত্য। সিদ্ক মানে অপরিবর্তনীয় আপোষহীন সত্য। যখন বলছেন 'সদ্দাকা' আপনি কিছু একটাকে মেনে নিচ্ছেন জিনিসটা মিষ্টি লাগুক বা তিতা লাগুক, গ্রহণ করতে সহজ লাগুক বা কঠিন লাগুক এতে কিছু যায় আসে না। এটা সত্য। মানুষকে নিশ্চয় বলতে শুনেছেন হার্ড ট্রুথ (কঠিন সত্য)। সিদ্ক এর আক্ষরিক অনুবাদ করতে পারেন হার্ড ট্রুথ বা কঠিন সত্য। কঠিন অর্থটি শব্দটির সাথেই আছে। এখন চলুন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতায় এর অর্থ কী তা বুঝার চেষ্টা করি। আপনি একজন দানশীল ব্যক্তি হতে পারেন, উদার মনের একজন মানুষ। কিন্তু অনেক সময় আপনার মতামত ভুল হতে পারে। ধরুন, একজন ভালো খ্রিষ্টানকে আপনি চিনেন। সে খুবই দানশীল একজন মানুষ। সে তার ধর্মের উপাসনায় খুবই আন্তরিক। এতোসব কিছু সত্ত্বেও আপনি যদি তার সাথে ইসলাম নিয়ে কথা বলতে যান। সে তখন এক কোণায় লুকিয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারে আপনি যা বলছেন তা সত্য। সে সময় তার অন্তরে দ্বিধা দ্বন্দ্বের উদ্ভব হয়। "আমি বুঝতে পারছি, আপনি যা বলছেন তা খুবই যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু, আমি তো এই ধর্ম গ্রহণ করতে প্রস্তুত নই। শুনেছেন? মিডিয়াতে মুসলমানদের সম্পর্কে কী বলা হয়? আমাকে তো এর সাথে মেলানো হবে। যদিও আপনি যা বলছেন তা আমার কাছে ঠিক মনে হয়। কিন্তু, আমার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ নয়। আমি এটা করতে যাচ্ছি না।" অথবা, তাদের অহমিকা জেগে উঠে। "না। আমি ভুল এটা আমি কোনোদিন মেনে নিবো না।" অনেক সময় দেখা যায়- এক ধরণের মতামত আপনি অনেক দিন ধরে পোষণ করে এসেছেন। এখন, কেউ একজন এসে বলল - "আসলে এর চেয়েও সত্য একটা মত আছে। আমার আপনাকে বলতে হচ্ছে অমুক ব্যাপারটা আপনার ঠিক করে নিতে হবে।" সে সময় হয়তো ইগো জেগে উঠতে পারে। - "না। আমার ভুল হয়নি। এতদিন যাবৎ আমি বোকা ছিলাম এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।" আচ্ছা, আমি নিজের উদাহরণ দিচ্ছি। আমি একটি বক্তব্য দিলাম। একটি আয়াত নিয়ে আমি কিছু কথা শেয়ার করলাম বা সূরা নিয়ে। বক্তব্য শেষে এক ব্যক্তি এসে বলল- আসলে আপনি যা বলেছেন তা ভুল। আপনি অমুক অমুক জায়গায় গুলিয়ে ফেলেছেন। তৎক্ষণাৎ আমার মাথায় আমি বুঝতে পারলাম, উনি যা বলছেন তা আসলেই যুক্তিসঙ্গত। সাথে সাথে। কিন্তু, আশে পাশে লোকজন আছে। সবাই তাকিয়ে আছে আমি কী বলি তা দেখার জন্য। যাইহোক, আমি বলতে পারতাম- আচ্ছা। অন্য দৃষ্টিতেও আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করা যায় কিন্তু। (মুচকি হাসি)। এ বিষয়ে বিভিন্ন আলেমের মাঝে মতানৈক্য আছে। আমি সহজেই এটা করতে পারতাম। অথবা, আমি বলতে পারতাম- হ্যাঁ, ভাই। আপনার কথা ঠিক। ভুলটা আমার হয়েছে। আমি এটা ঠিক করে নিবো। ঠিক সে সময়েই। যদি আমার কোনো ভুল ধরা হয়, দ্বিধা দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও, সামাজিক লজ্জা সত্ত্বেও..."ও মাই গড! তাঁরও ভুল ধরা পড়েছে!" বা যাই হোক। এতসব কিছু সত্ত্বেও আমি যদি গ্রহণ করে নিই যে, অতি সুন্দর একটি সত্য আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই তা গ্রহণ করে নিলাম। ফলাফলের ভয় না করেই। সত্য হলো সত্য। আমি নিজেকে এর সামনে বিনয়ী করে দিবো। এটাই হলো ভালোর চূড়ান্ত পর্যায়; একজন ব্যক্তি পৌঁছানোর মত। এটাই সর্বোচ্চ চূড়া। প্রসঙ্গত, এটা প্রথম দুইটিকে সম্পূর্ণ করে। অর্থাৎ, আ'তা মানুষকে দান করা। দিয়ে যাওয়া। কখনো এমন হতে পারে, আপনি ভুল করেছেন। আর কেউ একজন এসে বলল, ঐ লোকটির সাথে আপনি ঠিক আচরণ করেননি। আপনার এটা অমুক অমুকভাবে করা উচিত ছিল। সে সময় আপনার প্রথম অনুভূতির ঝোঁক, আপনার অহমিকার ঝোঁক, আত্মসম্মানের ঝোঁক, আত্মমর্যাদাবোধের ঝোঁক বলে উঠবে- "হ্যাঁ, আমি জানি। আমি আপনার কথা বুঝেছি। কিন্তু, আমার নিজস্ব কারণ আছে।" আপনি যে ঠিক কাজ করেননি এটা মেনে নিতে চান না। নিজ কাজের বৈধতা দিতে চান। যুক্তি দেখাতে চান। আমি নিজ কাজের পক্ষাবলম্বন করতে চাই। মনে হয় যেন নিজ কাজের পক্ষে যুক্তি না দিলে বাঁচা যায় না। কিন্তু আপনার নিকট যখন সবচেয়ে সুন্দর একটি সত্য তুলে ধরা হয়, তখন কোনো ধরণের ইতস্তত ভাব বা দ্বিধা ছাড়াই এটা গ্রহণ করে নিবেন। এটাই হলো সিদ্দিকিনদের মাকাম। এটা এমন লোকের মাকাম যখন সত্য তার সামনে আসে সে তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণ করে নেয়। এজন্য আলেমেরা বলে থাকেন এ সূরা আবু বকর (রা) কে নিয়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্য তাঁর নিকট উপস্থাপন করা হল। তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে তা গ্রহণ করে নিলেন। কোনো সময় নেননি, তথ্যটা যাচাই বাছাই করা লাগেনি তাঁর। তিনি তৎক্ষণাৎ গ্রহণ করে নেন। হ্যাঁ, আপনি আল্লাহর রাসূল। Done. এমন কিছু ছিল না যে, আচ্ছা আমাকে চিন্তা করতে দিন। গ্রহণ করে নিলে কি কি সমস্যায় পড়তে পারি তা আগে চিন্তা ভাবনা করে নিই। পরিবার কী বলবে। সমাজ কী বলবে। লোকে কী বলবে। ইসলাম গ্রহণ করা তো এতো সহজ হবে না। আমরা এ কারণে আমাদের আরব নাগরিকত্ব হারাতে পারি। কুরাইশ নাগরিকত্ব হারাতে পারি। ব্যবসা তো লাটে উঠবে। ফলাফলের কোনো চিন্তা ছিল না। তিনি সত্য গ্রহণ করে নিলেন। তিনি আগে থেকেই একজন দানশীল মানুষ ছিলেন। আল্লাহ সম্পর্কে সচেতন হতে চেয়েছিলেন। তাই, যখন সত্য তাঁর সামনে এসে গেলো তিনি সাথে সাথে গ্রহণ করে নিলেন। - নোমান আলী খান (এ জন্য জান্নাতের প্রবেশের আটটি দরজার সবগুলো আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আহ্বান জানাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। ঠিক এর পরেই আবু বকর রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু প্রবেশ করবেন।)

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট