কাফফারা কী কেন কীভাবে

 


পাপ বা অপরাধ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য শরিয়ত-নির্দিষ্ট দণ্ড। ইসলামি পরিভাষায় কতিপয় অপরাধজনক কাজের পর তওবা কবুলের উদ্দেশ্যে আর্থিক বা শারীরিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের নাম কাফফারা। চারটি ক্ষেত্রে এই কাফফারা দিয়ে গুনাহ অর্থাৎ পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। ক্ষেত্র চারটি হলো: শপথভঙ্গ, রমজান মাসের রোজা, খুন ও জিহাদ। আল্লাহর নামে শপথ করে তা ভঙ্গ করলে ১০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাওয়াতে হয়, কিংবা ১০ জন মিসকিনকে এক জোড়া করে কাপড় দান করতে হয় কিংবা একজন দাসকে মুক্ত করতে হয়। যদি এসব কোনোটিই করার সামর্থ্য না থাকে, তবে পর পর তিনটি রোজা রাখতে হয় (ওই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোজা রাখলে কাফফারা আদায় হবে না)। অবশ্য মিসকিনদের আহার করানোর বদলে তাদের প্রত্যেককে পৌনে দুই সের করে গম প্রদান করলেও কাফফারা আদায় হবে।শিকার বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে অস্ত্র ব্যবহারের সময় দৈবক্রমে কোনো লোক নিহত হলে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের ‘দিয়ত’ (রক্তমূল্য) পরিশোধ করার পরিবর্তে একটি দাস মুক্ত করতে হয় বা একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখতে হয়। জিহারের (স্ত্রীকে কোনো অংশে মাতা বা বোনের মতো বলে ঘোষণা) কাফফারা দিতে হয়। এভাবে কোনো ন্যায্য কারণ ছাড়া রমজান মাসের রোজা ভঙ্গ করলে, এর কাজা করার পরও কাফফারা আদায় করতে হয়। এই কাফফারা হলো একটি দাস মুক্ত করা, আর অক্ষম হলে ৬০ দিন রোজা রাখা এবং তা-ও না পারলে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা আহার করানো।

  সূত্র: যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪


জিজিয়া কর কী কেন

প্রাথমিক যুগের খলিফাদের আমলে বিজিত এলাকাগুলোর সব জিম্মি সম্প্রদায়কে এই শর্তে জিজিয়া প্রদান করতে হতো যে, তার বিনিময়ে রাষ্ট্র তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে। অষ্টম শতকের শেষ ভাগে শাসনতান্ত্রিক ও আর্থিক ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জিজিয়ার সংজ্ঞা ও প্রকৃতিতেও কিছু পরিবর্তন ঘটে।এ পর্যায়ে জিজিয়া বলতে সুনির্দিষ্টভাবে ভূমি-রাজস্ব খারাজ হতে সম্পূর্ণ আলাদা ‘মাথাপিছু কর’ বোঝাত এবং করদাতাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী এর হার নির্ধারিত হতো। মহিলা, শিশু, যাজক বা সন্ন্যাসী এবং দৈহিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু ব্যক্তিরা এই কর থেকে অব্যাহতি পেত। উসমানীয় তুরস্কে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত জিজিয়া বলবৎ ছিল। মধ্যযুগে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিমশাসিত দেশেও অমুসলমানদের ওপর জিজিয়া কর ধার্য করা হয়।মুসলমানদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বিভাগে যোগদান করতে হতো বলে তার পরিবর্তে অমুসলমানদের ওপর এই কর ধার্য করা হতো। সব ধর্মের নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান করা বাধ্যতামূলক হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই এই করেরও বিলুপ্তি ঘটে। ভারতে সম্রাট আকবর এই কর রহিত করেন, কিন্তু আওরঙ্গজেবের আমলে তা পুনঃপ্রবর্তিত হয়।পবিত্র কোরআনের সুরা তওবা-র ২৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যাদের ওপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহয় বিশ্বাস করে না ও পরকালেও না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা হারাম করেছেন তা যারা হারাম করে না ও সত্যধর্ম অনুসরণ করে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা স্বীকার করে আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ স্বেচ্ছায় জিজিয়া দেয়।’

 সূত্র: `জিজিয়া' যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট