দুঃখ কষ্ট এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব

 


দুঃখ কষ্ট এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব

--------------------------------------- আমি এখন বলছি এবং আগেও বলেছি—স্রষ্টার অস্বীকৃতি দার্শনিক আপত্তির উপর নির্ভর করে নয়, বরং এটি দম্ভ এবং অহংকারের উপর নির্ভর করে করা হয়। এখানেই স্রষ্টার অস্বীকৃতির উৎপত্তি। কোনো নাস্তিককে যদি জিজ্ঞেস করেন কেন তুমি আল্লাহকে বিশ্বাস করো না? সে বলবে— আল্লাহ কেন এতো দুঃখ-কষ্ট ঘটতে দিচ্ছেন? তাদের মতে, যদি একজন ঈশ্বর থাকতো তাহলে কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকতো না। যেহেতু দুঃখ-কষ্ট আছে তাই কোনো স্রষ্টা নেই। প্রসঙ্গত, এ যুক্তিটি অতিশয় দুর্বল। কারণ, আল্লাহর কাজের বিজ্ঞতা বুঝতে না পারা আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমান থেকে স্বাধীন। আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন একটি ইস্যু। তাঁর কাজ বুঝতে না পারার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ দুটি কার্যকারণ অনুযায়ী সম্পর্কযুক্ত নয়। তারা যদি তাদের দাবিতে সত্য হতো তাহলে সর্বোচ্চ বলতে পারত— আমরা বুঝি না কেন স্রষ্টা এগুলো করবেন। আল্লাহর অস্তিত্ব সুস্পষ্ট। দেকার্ত বলেছিলেন— "আমি চিন্তা করি, তাই আমি আছি।" তার সন্দেহবাদ এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো যে, সে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। তাই, যখন সে নিজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করলো সে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত হয়ে পড়লো। আমরা এ দর্শনে বিশ্বাস করি না। আমাদের জন্য— আমি চিন্তা করি তাই আল্লাহ আছেন। আমি যে চিন্তা করি এটাই আল্লাহর অস্তিত্বের স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ। আমার অস্তিত্ব আছে এবং আমার যে চিন্তা করার সামর্থ আছে এটাই প্রমান করে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আছেন। আমাদের আর কোনো প্রমানের দরকার নেই। আমরা সবাই কোত্থেকে এসেছি? কে আমাদের সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ কুরআনে আমাদের প্রশ্ন করেছেন- اَمۡ خُلِقُوۡا مِنۡ غَیۡرِ شَیۡءٍ اَمۡ هُمُ الۡخٰلِقُوۡنَ - তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? (৫২:৩৫) আচ্ছা, এতো কিছু বলার কারণ হলো— অবশ্যই নাস্তিকদের এ যুক্তি ত্রুটিপূর্ণ কিন্তু একই সাথে তারা উদ্ধতও বটে। কিভাবে? বলছি। দুঃখ-কষ্টের কারণে স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করার মাধ্যমে তারা মূলত বলছে- আমরা চূড়ান্ত শান্তি, চূড়ান্ত বিলাসী জীবন এবং পরিপূর্ণ আরাম আয়েশ পাওয়ার যোগ্য শুধু আমাদের অস্তিত্বের কারণেই। আমরা যে আছি শুধু এ কারণেই আমাদের এগুলো সব পাওয়ার কথা। ও আল্লাহ! আপনি যেহেতু আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমরা যা চাই তার সবকিছু আপনাকে আমাদের দিতে হবে। তাই আমি আবারো বলছি— স্রষ্টার অস্বীকৃতি দার্শনিক আপত্তির উপর নির্ভর করে নয়, বরং এটি দম্ভ এবং অহংকারের উপর নির্ভর করে করা হয়। এখানেই স্রষ্টার অস্বীকৃতির উৎপত্তি। আমরা এ ধরণের মানুষদের বলি— তোমরা যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং দুঃখ-কষ্ট মুক্ত জীবন কামনা করো আমরাও তা কামনা করি। মূলত: আমরা আরো এগিয়ে যাই। আমরা আসলে বিশ্বাস করি এমন জগতের অস্তিত্ব আছে। বস্তুত: আমরা সে জগতে প্রবেশ করার জন্য কাজ করে যাই। আর তা হলো জান্নাত। একমাত্র পার্থক্য হলো— আমরা বিশ্বাস করি সে জগৎ আল্লাহ আমাদের উপহার দিবেন। যখন আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে তাঁকে দেখাবো যে আমরা তা চাই। আর পক্ষান্তরে, তোমরা কোনো কিছু না করেই সে জগত দাবি করছো। আর যখন তা পাও না তখন সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষোভ নিক্ষেপ করো এবং বল- যেহেতু সে জগৎ এখানে নেই তাই আমি স্রষ্টায় বিশ্বাস করতে চাই না। এর মাধ্যমে তোমরা মূলত ইবলিসের রোগে আক্রান্ত। অহংকারের রোগ। সে বলেছিলো— "আদমকে তৈরী করেছেন মাটি থেকে আর আমাকে আগুন থেকে। আমি তার থেকে উত্তম।" সে নির্দিষ্ট উপায়ে কিছু জিনিস চেয়েছিলো। যখন পায়নি তখন সে আল্লাহর কথা মানতে অস্বীকার করল। আর তোমাদের অস্বীকৃতি ইবলিসের অস্বীকৃতি থেকেও মন্দ। কারণ, ইবলিস আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি। সে আল্লাহর ইবাদাত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। মূল পয়েন্ট হলো— আমরাও পরিপূর্ণ শান্তির সে জগৎ কামনা করি। কোথায় সে জগৎ? পরকালে। এর নামই হলো চাপমুক্ত নিবাস। আক্ষরিক অর্থেই একে বলা হয়—চিন্তামুক্ত, ব্যথামুক্ত, উদ্বেগমুক্ত নিবাস। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন- وَ اللّٰهُ یَدۡعُوۡۤا اِلٰی دَارِ السَّلٰمِ - আর আল্লাহ তোমাদেরকে শান্তির নিবাসের দিকে আহবান করেন। (১০:২৫) এ জগতের অস্তিত্ব আছে। কিন্তু, এটি তাদের দেওয়া হবে যারা এ জগতে প্রবেশ করতে চায়। যারা এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যায় এবং তাদের রবকে দেখায় যে তারা আসলেই এতে প্রবেশ করতে চায়। তাই, আল্লাহ তাদেরকে এ জগত দান করে ধন্য করবেন। —শায়েখ ইয়াসির কাদি

যে ধরণের মানুষেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তার মধ্যে অন্যতম একটি দল হলো- যারা এই দুনিয়াতে বিভিন্ন ট্রাজেডি বা ভয়ানক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। আর তারা এতে ধৈৰ্য ধারণ করেছেন। এটা সম্ভব যে, শুধু ধৈর্য আপনাকে জান্নাতে প্রবেশকারীদের একেবারে প্রথম সারিতে নিয়ে আসবে এবং জান্নাতে প্রবেশের আটটি দরজার সবগুলো আপনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়বে। জানেন তো ঐ দরজাগুলোর কোনোটা সালাতের, কোনোটা রোজার, কোনোটা বা জিহাদের ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, এমন অনেক মানুষ থাকবে যাদের হয়তো ঐরকম উচ্চ লেভেলের সালাত, সিয়াম বা জিহাদ নেই। কিন্তু তাদের শুধু একটি জিনিস আছে। আর এই একটি জিনিস তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশকারীদের একেবারে সম্মুখভাগে নিয়ে আসবে। এরপর জান্নাতের সবগুলো দরজা তাদেরকে নাম ধরে প্রবেশ করার আহ্বান জানাবে। সে জিনিসটি কী? আমরা একে বলতে পারি খুবই মারাত্মক লেভেলের ব্যথা, কষ্ট এবং যন্ত্রণা ভোগের সময় ধৈর্য ধারণ। —ড. ইয়াসির কাদি

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট