'রাহমা' বা দয়া প্রদর্শনের গুণ

 


বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে যখন কিবলা ছিল, আল্লাহর রাসুল (ﷺ‎) চাইতেন, কিবলা যেন কাবার দিকে হয়। তার এই ইচ্ছে পুরনের আগে তিনি মাঝে মাঝেই মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। বারবার তাকাতেন। যেন তিনি অপেক্ষা করছেন, আল্লাহ কোন ফরমান নাযিল করেন কিনা, তার ইচ্ছা পুরন হয় কিনা।

আল্লাহ তাআলা যখন কিবলা পরিবর্তনের ব্যপারে আয়াত নাযিল করেন, তখন আয়াতের শুরুতে রাসুলের এই পবিত্র আচরনের কথাও উল্লেখ করেন। অদ্ভুত মিষ্টি ভাষায় আল্লাহ বলেন, (হে রাসুল) আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি ঠিকই দেখেছি… আমাদেরও নানা বিষয়ে মন খারাপ হয়। এমন সব ইচ্ছা আকাংখা আছে আমাদের প্রত্যেকেরই, আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই রবকে বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তিনি ছাড়া আর কেউ নেই, যে তা পুরন করবে। সেই মহান রব আমাদের এই আকুতি ভরা বারবার তাকানোকে যেন কবুল করে নেন। এমন ভাবে সব কিছুর সমাধান করে দেন যেন আমাদের কানেও প্রতিধ্বনি হয়- “আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি ঠিকই দেখেছি....✨🌹
*****************************************************************
যদি সংখ্যার দিক বিবেচনা করেন তাহলে দেখবেন, আল্লাহ কুরআনে যতবার নিজের প্রতি দয়ার গুণ আরোপ করেছেন, অন্য কোন গুণ এমনকি এর কাছাকাছি সংখ্যকবারও উল্লেখ করেননি। আল কুরআনের পাঁচশত এর অধিক adjective, verb এবং noun যেগুলো দিয়ে করুণা প্রদর্শনের ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে, তা আল্লাহ নিজের প্রতি আরোপ করেছেন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে বলেছেন - كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ - “তোমাদের প্রতিপালক দয়া-রহমাতের নীতি নিজের প্রতি অবধারিত করে নিয়েছেন।” (৬:৫৪) কাতাবা রাব্বুকুম আলা নাফসিহির রাহমা। এই আয়াত আমাদের নিকট খুবই ইন্টারেস্টিং একটি পয়েন্ট তুলে ধরে। এমনকি আল্লাহর জন্যেও আইন রয়েছে। এমনকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাও আইন মান্য করেন। কিন্তু আল্লাহর জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার কারো নেই, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। আর আল্লাহ যদি চাইতেন তিনি নিজের জন্য যেকোনো কিছু লিখে নিতে পারতেন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা তার কয়েকটির কথা আমাদের জানিয়েছেন। তার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিটি হল - "ইন্না রাহমাতি তাগ্লিবু গাদাবি--আমার দয়া সবসময় আমার রাগের উপর বিজয়ী হবে।" আমাদের রাসূল (স) বলেছেন - এই হাদিসটি বুখারি এবং মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, আর এটা কুরআনের বক্তব্যকে সমর্থন করছে - তোমাদের রব নিজের জন্য এটি অবধারিত করে নিয়েছেন আকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে ( এখানে পঞ্চাশ হাজার মানে আমাদের উপলব্ধির বাইরে) আল্লাহ কোন কিছু সৃষ্টি করার পূর্বে নিজের জন্য এটা অবধারিত করে নিয়েছেন, নিজের কাছে রাখা একটি বইতে তিনি এটা লিখে নিয়েছেন, (আক্ষরিকভাবে হাদিসে এটাই বলা হয়েছে, কিতাবান ইন্দা নাফসি)... আল্লাহর নিজের কাছে একটি বই আছে। এমনকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্যেও কোড বুক আছে, আইনের বই আছে। সবার জন্য আইন আছে, এমনকি আল্লাহ জন্যেও। কিন্তু, পার্থক্য হল, আল্লাহ নিজের জন্য নিজেই আইন লিখেন। আল্লাহর এমন নীতি রয়েছে তিনি তাঁর দাসদের ওয়াদা দিয়েছেন যে তিনি সেটা মেনে চলবেন। এক নাম্বারে আমরা কোন আইনটির কথা জানি, কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে? "ইন্না রাহমাতি তাগ্লিবু গাদাবিই- আমার দয়া সবসময় আমার ক্রোধের উপর বিজয় লাভ করবে।" এই জন্য আল্লাহ কুরআনে বলেছেন - "کَتَبَ رَبُّکُمۡ عَلٰی نَفۡسِہِ الرَّحۡمَۃَ" - “তোমাদের প্রতিপালক দয়া-রহমাতের নীতি নিজের প্রতি অবধারিত করে নিয়েছেন” (6:54) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সবচেয়ে কমন যে গুণটির কথা সমগ্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে তা হল 'রাহমা' বা দয়া প্রদর্শনের গুণ। - ড. ইয়াসির কাদি

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে