আল্লাহর জিকির

 




হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কোনো একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবেন, তাঁর প্রতিটি কদমে আল্লাহ তাঁর জন্য একটি করে পুণ্য লিখে দেবেন। তাঁর একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি করে পাপ মুছে দেবেন।’

মসজিদে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় মুসল্লিদের দোয়া শিক্ষা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে ঢুকবে, তখন এই দোয়া পড়বে, আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা, অর্থাৎ, হে আল্লাহ, তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও। যখন বের হবে, তখন এই দোয়া পড়বে, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। (মুসলিম ও মিশকাত শরিফ)।মসজিদে যাওয়ার ও প্রবেশের পর করণীয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা কেউ মসজিদে ঢুকবে, তখন বসার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)। ‘যখন তোমরা জান্নাতের বাগানে ঘোরাফেরা করবে, তখন কিছু ফলমূল খেয়ে নিয়ো।’ সাহাবিরা বললেন, ‘জান্নাতের বাগান কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘মসজিদগুলো।’ তাঁরা বললেন, ‘এর ফল খাওয়া কেমন?’ তিনি বললেন, ‘এই তাসবিহগুলো পড়া—সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।’ (তিরমিজি)জিকিরই কলবকে সজীব রাখার পথ।

হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘যাদের জিহ্বা আল্লাহর জিকিরে তরতাজা থাকবে, তারা হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি জিনিসের মরিচা পরিষ্কার করার যন্ত্র আছে, আর অন্তরের মরিচা পরিষ্কার করার যন্ত্র হলো আল্লাহর জিকির।’ (বায়হাকি)

অবসর ও আরামের সময় জিকির করতে থাকলে বিপদে-আপদে তা কাজে আসে। দিনে-রাতে, সুস্থতা-অসুস্থতায়, হাঁটাচলায়, কাজের ফাঁকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির অন্তরে রাখা প্রয়োজন। জিকির অন্তরে শান্তি ও প্রশস্ততা এনে দেয়।হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি নীরবে বসে আল্লাহর জিকির করে ও তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে, আল্লাহ তাকে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

কোরআনে আছে, ‘তারপর যখন তোমরা নামাজ শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে। যখন তোমরা নিশ্চিন্ত হবে, তখন নামাজ কায়েম করবে। নির্ধারিত সময়ে নামাজ কায়েম করা বিশ্বাসীদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)সব ইবাদতই আল্লাহর জিকির ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর স্মরণ বা জিকির বিষণ্নতা দূর করে, মানসিক উত্তেজনা কমায়, হতাশা দূর করে ও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে।

কালেমায়ে তাইয়েবা ইসলামের মূল ভিত্তি। আর আল্লাহর জিকির বা স্মরণই সব ইবাদতের প্রাণ। নামাজেরও একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহকে স্মরণ করা।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ ও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ কোনো কোনো বর্ণনায়, ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওইয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’কেও এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। যা মনে মনে পড়া যায়, প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পরে পড়া যায় কিংবা ঘুমানো আগেও পড়া যায়।কোরআনে আছে, ‘তারপর যখন তোমরা নামাজ শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে। যখন তোমরা নিশ্চিন্ত হবে, তখন নামাজ কায়েম করবে। নির্ধারিত সময়ে নামাজ কায়েম করা বিশ্বাসীদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)জিকির বা জিকর মানে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা। অন্তরে শুধু আল্লাহর চিন্তা আর মুখে তাঁর পবিত্র নাম উচ্চারণই হলো জিকির। হজরত মোহাম্মদ (সা.) সারাক্ষণ আল্লাহর জিকির করতেন। ইসলামে এটাই জিকির প্রথার ভিত্তি।

সুফিদের মতে, জিকিরই আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের একমাত্র পথ। জিকিরে বুকের বাঁপাশে অবস্থিত হৃপিণ্ডে আঘাত করা হয়। এভাবেই মানুষের হৃদয় ধীরে ধীরে পবিত্র করে তোলা হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। সব সময় যে ‘আল্লাহ’ শব্দেই জিকির হয়, তা নয়। অনেক সময় আল্লাহর গুণবাচক অন্য নাম এবং কলেমা তৈয়ব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বলেও জিকির করা হয়। আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে চিত্তের প্রশান্তি।কোরআনে আছে, ‘আল্লাহ্ তাঁর নাম স্মরণ করার জন্য যেসব ঘরকে মর্যাদায় উন্নত করেছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করে সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কেনাবেচা আল্লাহকে স্মরণ করতে, নামাজ পড়তে ও জাকাত দিতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেদিনের যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়বে।’ (সুরা নুর ৩৬-৩৭).কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ করো আর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব, আমার কাছে তোমরা কৃতজ্ঞ হও, আর কৃতঘ্ন হয়ো না।’ (সুরা বাকারা ১৫২)

আল্লাহর বারবার স্মরণ করলে বান্দার সঙ্গে তাঁর ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয়।

কোরআনে আছে, ‘আল্লাহ্ তাঁর নাম স্মরণ করার জন্য যেসব ঘরকে মর্যাদায় উন্নত করেছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করে সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কেনাবেচা আল্লাহকে স্মরণ করতে, নামাজ পড়তে ও জাকাত দিতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেদিনের যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়বে।’ (সুরা নুর ৩৬-৩৭).কোরআনের ভাষায়, ‘আর তিনি তাঁর পথ দেখান তাদের যারা তাঁর দিকে মুখ ফেরায়, যারা বিশ্বাস করে ও আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রাখো আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ ২৮).

কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালককে মনে মনে, বিনয়ে ও ভয়ে, অনুচ্চ স্বরে সকালে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন থাকবে না। (সুরা আরাফ ২০৫).

একবার একজন সাহাবি জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাকে এমন একটা জিনিস শিখিয়ে দিন, যার ওপর আমি রীতিমতো আমল করতে পারি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জিকিরে তোমার জিহ্বা যেন সব সময় তরতাজা থাকে।’

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট