জেহাদ কী কেন কীভাবে

 


জেহাদ/জিহাদ  আরবি জেহাদ শব্দটির দ্বারা কঠোর পরিশ্রম, চেষ্টা, সাধনা, সংগ্রাম ইত্যাদি বোঝায়। যদিও বর্তমানে শব্দটি সাধারণভাবে ধর্মযুদ্ধ এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে জেহাদ কথাটির উৎপত্তির সঙ্গে অস্ত্রযুদ্ধের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়। মক্কায় হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রচারজীবনে অবতীর্ণ আয়াতে যে জেহাদের নির্দেশ রয়েছে, তা কিন্তু অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। আর তখন মুসলমান-সমাজও অস্ত্রধারণ করার মতো শক্তি সঞ্চয় করেনি।

বস্তুত ‘আত্মার মঙ্গলের জন্য পরিশ্রম’ বা সৎকাজ করার অর্থেই তখন জেহাদ কথাটি ব্যবহৃত হয়। মানুষের ভেতরের পশুপ্রবৃত্তি তাকে ধর্ম পালন ও সৎকাজ করতে বাধা দেয়। ফলে মানুষকে সেসব কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। জেহাদ শব্দটির মূলগত তাৎপর্য এটিই।

পবিত্র কোরআনের আল-ই-ইমরান-এর ১৪২ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি মনে করো যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যতক্ষণ না আল্লাহ জানেন তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে ও কে ধৈর্য ধরেছে!’ সুরা আনকাবুত-এর ৬৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ এ কথাগুলোর মধ্য দিয়ে জেহাদের মূলগত তাৎপর্যই প্রকাশ পেয়েছে।জেহাদ দুই প্রকার: বড় জেহাদ এবং ছোট জেহাদ। বড় জেহাদ বা ‘জেহাদে আকবার’ হচ্ছে কুপ্রবৃত্তি বা মনের কুপ্ররোচনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ হচ্ছে এই প্রবৃত্তির সঙ্গে যুদ্ধ। এ যুদ্ধে অস্ত্রের ব্যবহার নেই। আত্মার কুপ্ররোচনা সব সময় মানুষকে ভুল পথে চালিত করে। শয়তানের প্ররোচনা বা এই কুপ্রবৃত্তিকে দমন করাই হচ্ছে জেহাদে আকবার বা বড় জেহাদের কাজ। আর ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধকে বলা হয় ‘জেহাদে আসগর’। এটা হলো ছোট জেহাদ।অত্যাচারের মুখে সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যধারণ অর্থেও জেহাদ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, অত্যাচারী শাসকের মুখের ওপর সত্য বা হক কথা বলাই হচ্ছে কঠিনতম জেহাদ। তিনি এক যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে বলেছিলেন, ‘আমরা ছোট জেহাদ (অস্ত্রের যুদ্ধ) থেকে বড় জেহাদে (জেহাদে আকবার বা প্রবৃত্তির সঙ্গে যুদ্ধে) ফিরে এসেছি।’যাঁরা জেহাদ করেন তাঁদের মুজাহিদ বলে। যাঁরা জেহাদে জয় লাভ করেন তাঁরা গাজি এবং যাঁরা জেহাদে মারা যান, তাঁরা হন শহীদ। জেহাদে অংশগ্রহণ করেন তাঁদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে প্রচুর প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাঁরা জেহাদে শহীদ হন, তাঁরা মৃত নন, তাঁরা জীবিত, জান্নাতের দরজা তাঁদের জন্য খোলা। মোট কথা, সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং অত্যাচারীর হাত থেকে অত্যাচারিতকে মুক্ত করার জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণ হয়ে যুদ্ধ করাকে জেহাদ বলে। জেহাদ ইসলামি কর্মসৌধের অন্যতম প্রধান ভিত্তি ।

সূত্র:‘জেহাদ ’যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট