নবীদের প্রধান একটি কাজ

 


আল্লাহ তায়ালা নবী রাসূল পাঠিয়েছেন আমাদের গাইড করার জন্য। কোন পথে চলতে হবে তা শেখানোর জন্য। নবীদের অন্যতম প্রধান একটি কাজ হলো মানবতাকে পথ প্রদর্শন করা।

এমন দিকগুলোর গাইডেন্স যেখানে মানুষ নিজের বুদ্ধি দিয়ে পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা এই জীবনের খুঁটিনাটি শেখানোর জন্য নবী রাসূল পাঠান না। তা তিনি আমাদের জ্ঞান বুদ্ধির নিকট ছেড়ে দিয়েছেন। যাও তোমাদের টেকনোলজি নির্মাণ করো, যাও আরো বড় টাওয়ার নির্মাণ করো, যাও চাঁদে যাও, পারলে মঙ্গলে যাও এবং ফিরে আসো—এগুলো বুদ্ধির কাজ। এ জন্যই কোনো নবী ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানোর জন্য আসেন নি। কোনো নবীই আংশিক ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ শেখানোর জন্য আসেননি। যাও যে সমীকরণ শিখতে চাও শেখো। কোনো ধরণের ব্যতিক্রম ছাড়াই সকল নবীই এমন এক জ্ঞান শিক্ষা দিতে এসেছেন, যে জ্ঞানে কেউই নিশ্চিতভাবে পৌঁছতে পারবে না। এমন এক জ্ঞান শিক্ষা দিতে এসেছেন যা ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্ঞানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মেডিসিনের জ্ঞানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো বস্তুগত জ্ঞানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জ্ঞানটি হলো— এই পৃথিবীতে কেন আমরা বেঁচে আছি। সে জ্ঞানটি হলো— কে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সে জ্ঞানটি হলো— আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী এবং আমাদের মৃত্যুর পরে কী হবে। এ জ্ঞান পৃথিবীর সকল জ্ঞানের চেয়ে অগণিত গুণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এ জ্ঞান ঐশ্বরিক সাহায্য ছাড়া আহরণ করা সম্ভব নয়। এ জ্ঞান আমাদের বুদ্ধির উপায় এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আহরণ করা সম্ভব নয়। সহায়তাহীন মনুষ্য বুদ্ধি কোনোদিনও আমাদেরকে এ জ্ঞান দিতে সক্ষম হবে না যে— কেন আমাদের এ পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। কে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী। কিভাবে আমাদের জীবন যাপন করা উচিত। এবং মৃত্যুর পরে আমাদের কী হবে। যেহেতু আল্লাহ হলেন নূর, হা-দি (পথ প্রদর্শক), কারীম (উদার), রহমান, রহিম। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি। আল্লাহ এমন একজন মহান সত্ত্বা হওয়ার কারণে তিনি আমাদের জন্য নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। যেন তাঁরা আমাদেরকে জীবন চলার সঠিক রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—"এভাবে আমার নির্দেশের মূল শিক্ষাকে তোমার কাছে আমি ওহি যোগে প্রেরণ করেছি। তুমি জানতে না কিতাব কী, ঈমান কী, কিন্তু আমি একে (অর্থাৎ ওহি যোগে প্রেরিত কুরআনকে) করেছি আলো, যার সাহায্যে আমার বান্দাদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছে আমি সঠিক পথে পরিচালিত করি। তুমি নিশ্চিতই (মানুষদেরকে) সঠিক পথের দিকে নির্দেশ করছ।" "সেই আল্লাহর পথ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তার মালিক। সাবধান! সব বিষয়ই আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে।" (সূরা আশ শুরা, সূরা নং ৪২, আয়াত ৫২-৫২)

— ড. ইয়াসির কাদির আলোচনা থেকে

যারা ছেলে আশা করেছিলেন কিন্তু জন্ম হয়েছে মেয়ের

------------- * ------------- * --------------- হজরত মারিয়াম সালামুন আলাইহার মাতা আল্লাহর কাছে একটি ছেলে সন্তানের আশা করেছিলেন। কারণ, তিনি নিয়ত করেছিলেন ছেলে সন্তানটিকে আল্লাহর রাস্তায় নিবেদিত করবেন। তিনি নিয়ত করেছিলেন সন্তানটি দুনিয়ার কোনো কাজ কর্মে নিজেকে জড়াবে না। সে তার জীবন আল্লাহর জন্য ব্যয় করবে। যেন সে মসজিদে থেকে আল্লাহর ইবাদাত করতে পারে এবং মসজিদের অন্যান্য কাজ কর্মের আঞ্জাম দিতে পারে। যা হয়তো একটি মেয়ের পক্ষে সম্ভব হবে না। কুরআনে এসেছে—"(স্মরণ কর) যখন ‘ইমরানের স্ত্রী আরয করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার উদরে যা আছে, তাকে আমি একান্ত তোমার উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম, কাজেই আমার পক্ষ হতে তা গ্রহণ কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। " (৩:৩৫) কিন্তু, অবশেষে যখন সে সন্তানের জন্ম হলো তিনি দেখলেন তিনি একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেছেন। তাই তিনি বলে উঠেন- رَبِّ اِنِّیۡ وَضَعۡتُهَاۤ اُنۡثٰی ؕ وَ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا وَضَعَتۡ ؕ وَ لَیۡسَ الذَّکَرُ کَالۡاُنۡثٰی ۚ وَ اِنِّیۡ سَمَّیۡتُهَا مَرۡیَمَ وَ اِنِّیۡۤ اُعِیۡذُهَا بِکَ وَ ذُرِّیَّتَهَا مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ - ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি তা প্রসব করেছি কন্যারূপে’। আর আল্লাহই ভাল জানেন সে যা প্রসব করেছে তা সম্পর্কে। ‘আর পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মত নয় এবং নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি মারইয়াম। আর নিশ্চয় আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার আশ্রয়ে দিচ্ছি’। তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, যে নিয়ত আমি করেছিলাম তার জন্য এ বাচ্চা কিভাবে কাজ করবে? কিন্তু অবশেষে আল্লাহ তার অন্তরে এ ভাবনার উদয় করে দেন যে, তোমার সেই নিয়তের জন্য এ বাচ্চাটা উত্তম হবে। ইমাম রাজি এ ব্যাপারে বলেন, তার মনে শেষ পর্যন্ত এ ভাবনার উদয় হলো—আমি একটি ছেলে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ তো একটি মেয়ে। কিন্তু এ মেয়েটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার। অর্থাৎ, আমার ইচ্ছে ছিল একটি ছেলের। কিন্তু আল্লাহর উপহার হলো একটি মেয়ে। তাহলে, কিভাবে আমি যা চেয়েছি তা আল্লাহর উপহার থেকে উত্তম হতে পারে! চিন্তা করার কি অদ্ভুত সুন্দর এক উপায়! আমি চেয়েছি ছেলে। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত একটি মেয়ের। কিভাবে আমার চাওয়া আল্লাহর উপহারের চেয়ে উত্তম হবে! আমরা সবাই— যারা মেয়ের পিতা-মাতা হয়েছি, আমাদের সবার এভাবে চিন্তা করা উচিত। কারণ, কেউ কেউ সামাজিক প্রথাগত কারণে ছেলে চায়। ছেলের জন্ম না হলেই বলে উঠে— আচ্ছা, পরের বার। তার এ বাক্যটি— এ মেয়েটি অন্যসব ছেলের মত নয়, সে উত্তম—প্রমাণ করে যে, আল্লাহর গৌরব এবং মহিমায় কিভাবে ঐ নারীটি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করে রেখেছিলো। আল্লাহর সুউচ্চ মর্যাদার ধারণা তার মন মস্তিষ্ক থেকে কখনো হারিয়ে যায়নি। সর্বদা মনে রাখুন, একজন দাসের জন্য তার নিজের আকাঙ্ক্ষার চেয়ে তার প্রভুর সিদ্ধান্ত উত্তম। প্রভু তাঁর দাসের জন্যে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা সবসময় উত্তম তার থেকে, যা একজন দাস তার নিজের জন্যে কামনা করে। মারিয়ামের মাতা ঠিক এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন— وَ لَیۡسَ الذَّکَرُ کَالۡاُنۡثٰی- ওলাইসাস জাকারু কাল উন্সা। --নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে -- 17. 'Ali 'Imran - Ayah 35-37 Ramdan 2018

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট