ওহুদের শিক্ষা

 


ইসলামের দ্বিতীয় যুদ্ধ ওহুদ ৩ হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়। মদিনার মসজিদে নববি থেকে উত্তরে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওহুদের প্রান্তর। বদর যুদ্ধের ঠিক এক বছর পর ওহুদ যুদ্ধ হয়। মক্কার অমুসলিম ও মদিনার মুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

বদর যুদ্ধের পরাজয়ের শোক মক্কার জনগণ মানতে পারছিল না। ওই যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া নেতারা পরামর্শ করলেন আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলায় যাঁদের ব্যবসা রয়েছে, তাঁরা শুধু মূলধন ফেরত পাবেন। লভ্যাংশের টাকায় সামরিক শক্তি অর্জন করে মুসলমানদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে।ঘরে ঘরে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। কিনানা ও তিহামা গোত্রের লোকেরা একেবারে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। হাবশিরা বর্শা নিক্ষেপে পারদর্শী, তাঁদের তির লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। তাই ওয়াহশি নামের এক হাবশি দাসকে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বদলে তাকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো। যুদ্ধের সব প্রস্তুতি শেষে মদিনার দিকে রওনা হয় আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন হাজারের বেশি যোদ্ধা। তাদের মধ্যে ৭০০ যোদ্ধা ছিল বর্মপরা। ছিল ২০০ ঘোড়া ও ৩০০০ উট। সঙ্গে নেওয়া হলো নারীদের। তাদের কাজ ছিল গানে গানে যোদ্ধাদের মনোবল চাঙা রাখা।

অপরদিকে মুসলিম বাহিনীর মোট সেনাসংখ্যা ছিল এক হাজার। এর মধ্যে ১০০ জন বর্মপরা ছিলেন এবং ৫০ জন ছিলেন অশ্বারোহী।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম বাহিনীকে তিন ভাগে বিভক্ত করেন—মোহাজির বাহিনী, আউস বাহিনী ও খাজরাজ বাহিনী। তাদের সেনাপতি হলেন যথাক্রমে মুসআব ইবনে উমায়ের, উসাইদ ইবনে হুজাইর ও হুবাব ইবনে মুনজির।মুসলিম বাহিনী মদিনা থেকে যুদ্ধের জন্য বের হলো। তারা শাওত নামে একটি জায়গায় পৌঁছানোর পর যুদ্ধে অস্বীকৃতি জানান আবদুল্লাহ ইবনে উবাই। ৩০০ অনুসারী নিয়ে তিনি তাঁর দলত্যাগ করেন। তখন বাকি ৭০০ সৈনিক নিয়ে মুসলিমরা ওহুদের দিকে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য তারা ভিন্ন পথ ধরে। তাদের পথপ্রদর্শক ছিলেন আবু খাইসামা। এ সময় প্রতিপক্ষকে পশ্চিমে ছেড়ে দিয়ে বনি হারিসা গোত্রের শস্যখেতের মধ্য দিয়ে ভিন্ন একটি পথ ধরে ওহুদের দিকে মুসলিম বাহিনীকে নিয়ে যাওয়া হয়।

মল্লযুদ্ধের শুরুতে অমুসলিম বাহিনীর পতাকাধারী তালহা ইবনে আবি তালহা এগিয়ে এলে হজরত আলী (রা.) তাঁকে আক্রমণ করেন। তালহা নিহত হন। আবু সুফিয়ানের অশ্বারোহী বাহিনী দু-দুবার গিরিপথে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেল। তারা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাতে লাগল।ওহুদের প্রান্তরে ছোট্ট আকারের পাহাড় জাবালে রুমা বা রুমা পাহাড়ে নবীজি ৫০ জন তিরন্দাজ সাহাবিকে নিযুক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তোমরা এখানে থাকবে।’ রাসুল (সা.) তাঁদের আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর নেতৃত্বে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শত্রুবাহিনীকে পালাতে দেখে নিজেদের জয় হয়েছে ভেবে তাঁরা নবীজির নির্দেশনার কথা ভুলে গিয়ে গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নবীজির নির্দেশ উপেক্ষা করার মাশুল তাঁদের দিতে হয়। তিরন্দাজরা যখন গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত, অমুসলিম বাহিনী তখন পাহাড় পেরিয়ে মুসলমানদের পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতিতে মুসলমানরা দিগ্‌বিদিক ছুটতে লাগল। হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) আর নবীজির চাচা হজরত হামজা (রা.) শহীদ হলেন। নবীজির সঙ্গে হজরত মুসআব ইবনে ওমায়ের (রা.)-এর অবয়বে মিল ছিল। তিনি শহীদ হলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিহত হয়েছেন। তবে নবীজি (সা.) আহত হয়েছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করায় যুদ্ধে মুসলমানরা হেরে যায়। এই যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবি শাহাদত বরণ করেন। তাঁদের সবাইকে ওহুদ প্রান্তরে দাফন করা হয়।

ওহুদ যুদ্ধের শিক্ষা আল্লাহ তাআলা সুরা আল-ইমরানের ১২১ নম্বর আয়াত থেকে শুরু করে ১৬০ নম্বর আয়াতের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো রাসুল (সা.)–এর নির্দেশ অমান্য করা, মতভেদ করা এবং ছত্রভঙ্গ হওয়ার মন্দ পরিণাম।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট