সবর, মুহসিন এবং পরীক্ষা পূর্ণ জীবন


 সবর, মুহসিন এবং পরীক্ষা পূর্ণ জীবন

----------------------------- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন— اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا وَّ الَّذِیۡنَ هُمۡ مُّحۡسِنُوۡنَ - “আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকে ভয় করে এবং অনুগত থাকে এবং যারা মুহসিন (সুন্দরভাবে কার্য সম্পাদন করে।)” (১৬:১২৮) সুন্দরভাবে কাজ করার অর্থ কী? এর অর্থ সবর। কুরআনে 'ইহসানের' অন্য একটি নাম হলো সবর। এ জন্য সূরা ইউসুফে বলা হয়েছে— اِنَّهٗ مَنۡ یَّـتَّقِ وَ یَصۡبِرۡ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ - যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে আর ধৈর্যধারণ করে এমন মুহ্সিনদের পুরস্কার আল্লাহ কক্ষনো বিনষ্ট করেন না।’ (১২:৯০) মুহসিন কারা? যারা ধৈর্যধারণ করে। কারণ যখন ধৈর্যধারণ করেন তখন কর্মগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করেন। নামাজ পড়ার সময় আপনি তাড়াহুড়ো করেন না। সুন্দর করে নামাজ পড়েন। মানুষ আপনার জন্যে বিভিন্ন সমস্যা তৈরী করে তবু আপনি দয়া দেখান, তবু মানুষকে দিয়ে যান, তাদের প্রতি উদার থাকেন। ইউসুফ (আ) এর মত। তার ভাইয়েরা তার জন্য এতো সমস্যা তৈরী করলো, তবু তিনি তাদের সাথে ভদ্র আচরণ করেন। তবু তাদের মাফ করে দেন। তাই, ধৈর্যধারণ করলে এমনিতেই আপনি ভদ্র হয়ে উঠেন। ইহসান মানে ধৈর্যধারণ করা। মানুষ যখন ধৈর্যধারণ করে... তো, ইহসানের দু'টি দিক রয়েছে। একটি দিক হলো—আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরী করা। দ্বিতীয় দিক হলো— মানুষের সাথে ভদ্র আচরণ করা। ধৈর্য অবলম্বণ করুন। তারা যদি সমস্যা তৈরী করে তাড়াহুড়ো করে কিছু করে বসবেন না। এ বিষয়টা কুরআনের বহু জায়গায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কুরআনে যদি 'ইহসান' খুঁজে দেখেন সবসময় এর দেখা পাবেন। সবর হলো ইহসান। সবসময়। সূরাতুল হুদ। যদি সূরাতুল হুদ খোলেন, আয়াত ১১৫। আল্লাহ বলেন— وَ اصۡبِرۡ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ - "তুমি সবর কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ইহসানকারীদের পুরস্কার নষ্ট করেন না।" যখন সবর আসে মানুষ মুহসিন হয়ে উঠে। আর মুহ্সিনদের জন্য আছে পুরস্কার। সবর ছাড়া আপনি কখনো মুহসিন হতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনাকে পরীক্ষা করা হবে। আর পরীক্ষা ছাড়া কিভাবে সবর দেখাবেন? মানে— আপনার জীবনে ঐ সমস্ত প্রতিকূল অবস্থা থাকতে হবে যা আপনি অপছন্দ করেন। আর ঐসব প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে আপনার সবরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। যখন পরীক্ষায় পাশ করবেন তখন মুহসিন হবেন। তাই, এমন জীবনের আশা করা যেখানে কোনো কঠিন পরিস্থিতি থাকবে না, এমনটি ঘটবে না। একমাত্র রাজনীতিবিদেরা এমন ওয়াদা দিয়ে থাকে। "আমাকে ভোট দাও। পরের পাঁচ বছর সবার খাদ্য বাসস্থানের কোনো সমস্যা হবে না। দেশ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।" নবীরা কখনো এমন শিক্ষা দেয় না। নবীরা শুধু একটি শিক্ষাই দিয়ে থাকে— যদি তোমরা আমার অনুসরণ করো তাহলে যে পরিস্থিতিতেই পড়ো না কেন ধৈর্য ধারণ করো। নবীরা কখনো বলে না যে, তোমার জীবনে কোনো সমস্যা আসবে না। নবীরা বলে—তোমার জীবনে সমস্যা আসবেই কিন্তু আমি শিখিয়ে দিবো কিভাবে সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে হবে। এটাই আপনাকে শিখতে হবে। সত্যিই। মিথ্যাবাদী হবেন না। এ পৃথিবীতে সবাইকে পরীক্ষা করা হবে কিন্তু আপনি জানেন কিভাবে পাশ করতে হয়। নবীরা এ শিক্ষাই দিয়ে থাকে কিভাবে প্রতিটি পরিস্থিতিতে পাশ করতে হয়। বিয়ে করলে সমস্যা আসবেই। যদি ভুল কারণে বিয়ে করে থাকেন, আপনার বিয়ে ব্যর্থ হবে। এখন, বিয়ে মানে নতুন চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জে আপনাকে পাশ করতে হবে। যদি মনে করেন বিয়ে মানে আনন্দ স্ফূর্তি তাহলে ব্যর্থ হবেন। কারণ, আনন্দ উপভোগ কখনো বিয়ের অর্থ ছিল না। কারণ বিয়ে মানেই হলো কষ্ট ভোগ। আর আপনাকে ধৈর্য দেখাতে হবে। বিয়ের আগে আপনি যেখানে ইচ্ছে ঘুমাতেন। বিয়ের পর পারবেন? বিয়ের আগে যেখানে ইচ্ছে খেতে পারতেন, বিয়ের পর আপনাকে পরিবারের যত্ন নিতে হবে। আপনার জীবন এখন অন্য একজনের জীবনের সাথে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ। জীবনটা আর আগের মত নয়। এটা এখন নতুন পরীক্ষা। আল্লাহ জীবনকে এভাবেই সাজিয়েছেন। এ জন্য নবীরা কখনো কোনোদিন এ কথা বলেননি যে, তোমরা যদি আমার অনুসরণ করো তাহলে তোমাদের জীবন একেবারে সমস্যামুক্ত হয়ে যাবে। কোনো নবী কোনোদিন এ কথা বলেনি। বরং নবীরা আপনাকে বলে, আল্লাহ তায়ালা বলেন— وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ - "আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।" (২:১৫৫) তোমাকে পরীক্ষা করা হবেই। তোমার জীবনে ভুগানি আসবে, তোমার সমাজে অশান্তি আসবে, তোমার দ্রব সামগ্রীতে ঝামেলা আসবে, তোমার অর্থ কড়িতে অপ্রতুলতা আসবে, তোমার আয় কমে যাবে। মোটকথা সবকিছুতে সমস্যা আসবে। তুমি যদি ধৈর্য প্রদর্শন করতে পারো তুমি সফল। নবীরা কখনো মিথ্যা শিক্ষা দেয় না। নবীরা বলে—সমস্যা আসবেই কিন্তু তোমাকে শিখতে হবে কিভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। কিভাবে পাশ করতে হবে। সূরাতুল লোকমানেও মুহসিনদের কথা এসেছে। কারণ, সুরাতুল লোকমান হলো এক জ্ঞানী ব্যক্তিকে নিয়ে। আল্লাহ এখান থেকে শুরু করেছেন। তিনি বলেন- تِلۡکَ اٰیٰتُ الۡکِتٰبِ الۡحَکِیۡمِ- "এগুলি জ্ঞানগর্ভ কিতাবের আয়াত।" هُدًی وَّ رَحۡمَۃً لِّلۡمُحۡسِنِیۡنَ - "মুহসিনদের জন্য জন্য হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ।" এখন কারা মুহসিন? তিনি বলেন— الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ هُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ - "যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় আর তারা আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।" اُولٰٓئِکَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ - তারাই তাদের রবের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। তাদের দৃষ্টি থাকে পরকালের উপর। তারা এ দুনিয়ায় পুরস্কৃত হওয়ার আশায় থাকে না। কারণ, তারা জানে এ দুনিয়া হলো কাজের দুনিয়া। পুরস্কার দেওয়া হবে শেষ বিচারের দিন। এমনকি যদি এ দুনিয়ায় তারা কিছু পুরস্কার পেয়ে যায়, তারা এটা পছন্দ করে না। কারণ তারা মনে করে সম্ভবত আল্লাহ তাদের পছন্দ করে না। তাই, তিনি এ দুনিয়াতেই সব পুরস্কার তাড়াতাড়ি দিয়ে দিচ্ছেন; পরকালে তাদের জন্য কিছু থাকবে না। তাই, দুনিয়াতেই যদি পুরস্কার পেয়ে যান, আপনার উচিত এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া। —ড. আকরাম নদভী

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট