আমলনামা

 

আল্লাহ তায়ালা বলেন- فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ - অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে; فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا - অত্যন্ত সহজভাবে তার হিসাব-নিকাশ করা হবে। وَّ یَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَهۡلِهٖ مَسۡرُوۡرًا - এবং সে তার স্বজনদের নিকট আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে। (৮৪: ৭-৯)

প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে। ডান হাত দ্বারা কয়েকটি জিনিস বুঝায়। প্রথমত: আক্ষরিক অর্থেই ডান হাত। যদি আপনার ডান হাতে আপনার হিসেবের বই দেয়া হয় তার মানে আপনি পরীক্ষায় ভালো করেছেন। দ্বিতীয়ত: ডান হাত দ্বারা আরবিতে অঙ্গীকার পূরণ করাও বুঝায়। অর্থাৎ, এই মানুষগুলো তাদের ওয়াদা পূরণ করেছে। তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাই তাদেরকেও আজ ডান হাতে বই প্রদান করে সম্মানিত করা হচ্ছে। তৃতীয়ত: ইয়ামিন অর্থাৎ ডান হাত দ্বারা ক্ষমতা এবং স্বাধীনতাও বুঝানো হয়। শেষ বিচারের দিন কারোই কোনো কিছুর উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কেউ কথা বলছে না। কারো কোনো স্বাধীনতা নেই। কেউ অন্য কাউকে নিয়ে চিন্তা করছে না। সবাই নিজ নিজ চিন্তায় মগ্ন। আর এই লোক যে ডান হাতে তার আমলনামা পেলো সে সবাইকে ডেকে ডেকে বলবে- "هَآؤُمُ اقۡرَءُوۡا کِتٰبِیَهۡ হা-উমুকরায়ু কিতা-বিয়া- ‘এই যে আমার আমালানামা পড়ে দেখ।" সবাই দেখো আমার আমলনামায় কি কি আছে। হাশরের দিন কার এমন ফ্রিডম থাকবে, কার এমন মানসিক সক্ষমতা থাকবে যে সে এমনটি করতে পারবে। সবাই যেখানে ভয়ে মূর্ছা যাচ্ছে, আর সে কিনা খুশি হয়ে সবাইকে তার আমলনামা দেখাচ্ছে! দেখো আমি কত ভালো গ্রেইড পেয়েছি। সবশেষে, ডান হাত দ্বারা সম্মান-মর্যাদাও বুঝায়। এরা হবে এমন মানুষ, আল্লাহ যাদের সম্মানিত করবেন। এরপর আল্লাহ বলেন-فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا - অত্যন্ত সহজভাবে তার হিসাব-নিকাশ করা হবে। হিসাব মানে হলো অডিট। সবকিছু কাউন্ট করা। সবকিছু চেক করা। প্রতিটি লাইন থেকে লাইন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- কিয়ামতের দিন যার হিসেব নেওয়া হবে তার ধ্বংস হবে। তখন হজরত আয়েশা 'হিসাবান ইয়াসীরা' বা সহজ হিসেব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সহজ হিসেব হলো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। অর্থাৎ আপনাকে প্রতি লাইন বাই লাইন জিজ্ঞেস করা হবে না। কয়েকটি বিষয় দেখেই আপনাকে বলে দেওয়া হবে- আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিকাছে। তুমি যেতে পারো। তোমার সমস্যা নেই। এরপর আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন- وَّ یَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَهۡلِهٖ مَسۡرُوۡرًا - "এবং সে তার স্বজনদের নিকট আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে।" এখন এ আয়াতটি বুঝা একটি কঠিন। কারণ, কারো কারো পরিবার তো ঈমানই আনেনি। যেমন, নূহ আলাইহিস সালামের স্ত্রী এবং ছেলে। তাহলে আল্লাহ কিভাবে বলছেন সবাই যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে তারা নিজে নিজ পরিবারের কাছে আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে? স্কলারদের মতে, এখানে 'আহল' অর্থাৎ স্বজন বলতে অন্যান্য মুমিনদের বুঝানো হয়েছে। কারণ ঈমানের বন্ধন রক্তের বন্ধনের চেয়েও বেশি মজবুত। আবার কারো কারো জন্য ধর্ম পালন করতে গেলে নির্যাতন আসে পরিবার থেকে। নিজ ফ্যামিলি থেকে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কিয়ামতের দিন এদেরকে আরো উত্তম পরিবার দিয়ে ধন্য করবেন। সেখানে তাদের ভালোবাসার কোনো কমতি হবে না। তারা একাকিত্ব ফিল করবে না। তারা সেখানে প্রফুল্লিত থাকবে। - নোমান আলী খান - সূরা ইনশিকাক এর আলোচনা থেকে - বায়্যিনাহ টিভি

=======================================================================

'আল্লাহর দাস' কোনো অপমানজনক পরিভাষা নয়। এটি হলো সর্বোচ্চ সম্মান। কুরআনে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চারবার 'আল্লাহর দাস' বলেছেন। এটি মর্যাদাহানিকর কোনো টার্ম নয়। এটি সম্মানের সর্বোচ্চ পর্যায়। কারণ, আল্লাহ বলছেন এ মানুষটি আমার পছন্দের দাস। সে আমার পূর্ণতাপ্রাপ্ত ইবাদাতকারী। আল্লাহর একজন দাস হওয়ার চেয়ে, আল্লাহর একজন ইবাদাতকারী হওয়ার চেয়ে মানুষের জন্য বড় মর্যাদার কিছু নেই। -- শায়েখ ইয়াসির কাদি [আমরা মানুষ। আমরা তো সৃষ্টি। আর আল্লাহ হলেন সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি শুধু আমাদের সৃষ্টি করেননি, সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা তিনি। তিনি সাত আসমানের সৃষ্টিকর্তা। শুধু দুনিয়ার আকাশেই আছে বিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন নক্ষত্র। আর গ্রহ উপগ্রহের জন্য কোন নাম্বার আমাদের কল্পনাতেও আসে না। এটা শুধু দুনিয়ার আকাশ। বাকি ছয় আকাশে আরো কি কি আছে তা আমরা জানিনা। আবার তিনি হলেন "খাল্লাক"। যিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জিনিস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। উনার ক্ষমতা রাজত্ব আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে উপলব্ধি করাও সম্ভব নয়। তিনি সব সময় প্রভু, আমরা সব সময়ই তাঁর দাস। বেহেশতে গেলেও আমরা তাঁর দাস। এত বড় এক মহান প্রভুর দাস হতে পেরে আমরা সম্মানিত।]