আমাদের ধর্মে আবু তালিব

 


আমাদের ধর্মে আবু তালিব ছিল অমুসলিমদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার। অমুসলিমদের মধ্যে তার উপরে কেউ ছিল না। মক্কায় কুরাইশদের নির্যাতনের সময় তিনি মুসলমানদের ব্যাপক সাহায্য করেছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজ সন্তানের মত দারুণ ভালোবাসতেন। রাসূলের কাছে তিনি পিতার মত ছিলেন।

কিন্তু তবু তার কপালে ঈমান জোটেনি। তিনি বংশগত অহমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি তার পিতা আব্দুল মুত্তালিবের পথ পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন না। মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অনুরোধ করেন, "ও আমার চাচা! শুধু একটি কালিমা উচ্চারণ করুন। (অর্থাৎ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন।') তাহলে আপনাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার জন্য আমি আল্লাহর সামনে যুক্তি দেখাতে পারবো।" আবু তালিব বলার জন্য প্রায় মুখ খুলছিলেন। কারণ, তার অন্তরে তিনি জানতেন এ ধর্ম সত্য ধর্ম। তিনি অসংখ্য মিরাকল দেখেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো- তিনি জানতেন তার ভাইয়ের ছেলে কোন ধরণের মানুষ ছিলেন। তিনি জানতেন তার ভাইয়ের ছেলে মিথ্যা বলতে জানে না। কিন্তু একটি জিনিস তার কাছে তার ভাইয়ের ছেলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর তা ছিল তার পিতা। আরবদের কাছে বংশগত ঐতিহ্য ছিল সবকিছু। বংশের গর্ব তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তো তিনি প্রায় কালিমা উচ্চারণ করতে যাচ্ছিলেন। আবু জেহেলও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। সে তখন আবু তালিবকে বললো- "আপনি কি আপনার পিতার ধর্ম পরিত্যাগ করতে যাচ্ছেন?" এটা শুনে আবু তালিবের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তিনি আর কালিমা উচ্চারণ করলেন না। আর ঠিক সে সময় মৃত্যুর ফেরেশতা এসে পড়লো এবং তার মৃত্যু হয়ে গেলো। আবু তালিবের ঈমানহীন মৃত্যুর ব্যাপারটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দারুণ কষ্ট দিয়েছিলো। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন- "আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবো যতক্ষণ না আল্লাহ আমাকে নিষেধ করেন।" যদিও তাঁর অনুমতি ছিল না। একটি ব্যাপার জেনে রাখুন। নবীরা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া একটি পদক্ষেপও নেয় না। ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তার জাতিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তখন তিনি কি রকম বিপদে পড়েছিলেন আমরা সবাই তা জানি। তো, সে সময় তার আবেগ এতটাই শক্তিশালী হয়ে পড়ে যে, তিনি বলেন- "আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবো যতক্ষণ না আল্লাহ আমাকে নিষেধ করেন।" শেষে আল্লাহ এ নিয়ে কুরআনের অনেকগুলো আয়াত নাজিল করেন। তার মাঝে একটি হলো- ইন্নাকা লা তাহদি মান আহবাবতা, ওয়ালা কিন্নাল্লাহা ইয়াহদি মান ইয়াশা। اِنَّکَ لَا تَهۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ وَ لٰکِنَّ اللّٰهَ یَهۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ هُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِیۡنَ - নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন। আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তিনি ভাল জানেন। (২৮:৫৬) এখানের অন্যতম বড় একটি শিক্ষা হলো- আল্লাহর সিদ্ধান্ত কেউ বদলাতে পারে না। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নন। এটি একটি পরিষ্কার ইঙ্গিত যে, যদিও আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। কিন্তু তবু তিনি অন্যদের হেদায়েত নিয়ন্ত্রণ করেন না। এমনকি তাঁর অতি ভালোবাসার চাচা আবু তালিবেরটাও নয়। মানুষের নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে। একদিন তাঁর অন্য এক চাচা আব্বাস (রা) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ভাই আপনাকে এতো বেশি সাহায্য করেছিল, আপনি কি তাকে কিছু সাহায্য করতে পারেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- হ্যাঁ। আমি করেছি। আমার দোয়ার কারণে আবু তালিবকে জাহান্নামের আগুনের একটি শেষ সীমানার কাছে নিয়ে রাখা হয়। এ দোআ কবুল না হলে তাকে জাহান্নামের আগুনের একেবারে গভীরে রাখা হতো। অন্য একটি ভার্সন থেকে আমরা জানি- সকল জাহান্নামীদের মধ্যে আবু তালিবকে সর্বনিম্ন শাস্তি প্রদান করা হয়। আবু তালিবের চেয়ে কেউ কম শাস্তি পায় না। তাহলে দেখা যাচ্ছে রাসূলুল্লাহর দোআ আবু তালিবের কিছুটা উপকার করে। কিন্তু তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারেন নি। কারণ, আবু তালিব ছিল মূর্তি পূজক। আর আল্লাহ মূর্তি পূজককে ক্ষমা করবেন না। -- শায়েখ ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে [এই ঘটনাটা নিয়ে আসলে গভীরভাবে চিন্তা করুন। আপনার মনের মধ্যে এমন কোনো আকাঙ্ক্ষা কি আছে যা আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়েও আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? যা আপনাকে আল্লাহর দ্বীন থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। যার কারণে আপনি নামাজ পড়তে পারেন না। তাহলে সাবধান হোন। আল্লাহ আপনাকেও পরীক্ষা করবেন। যেভাবে তিনি আবু তালিবকে পরীক্ষা করেছেন। আল্লাহ চান পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। মনের সকল শৃঙ্খল ছিন্ন করে আপনি কি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে পেরেছেন? মাছ যেমন বড়শিতে আটকা পড়ে, আপনার মন কি এমন কিছুতে আটকে গেছে? যা আপনাকে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করতে দিচ্ছে না? তাহলে সবাধান হোন। এ বড়শি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিন। আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করুন। কারণ, আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠোর। কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট