জীবন কেন সমস্যায় পরিপূর্ণ?


 মানুষ এসে বলে- উস্তাদ, আমি নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, আমি হারাম থেকে বেঁচে থাকি, আমি হালাল খাবার খাই, আমি হালাল আয় করি তবু আমার জীবন কেন সমস্যায় পরিপূর্ণ? আমি এমনকি তাহাজ্জুদও পড়ি। আমি সোম এবং বৃহস্পতিবারে রোজা রাখি। আমি যে কত দোআ করি। তবু আমার সমস্যার যেন অন্ত নেই। তাহলে এতসব ইবাদাত করার অর্থ কী। আমি সঠিক কাজ করি সবসময় তবু জীবনের সবকিছু উল্টো পথে চলছে। এমনকি মনে হয়, আমি যত বেশি ইসলামিক কাজ করি জীবনটা ততই সমস্যাপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ ধরণের চিন্তা ভাবনা খুবই কমন, আসলে।

একজন এমনকি এটাও বলেছে- জানেন? আমি যত কম ইসলাম ফলো করি জীবন তত সহজ হয়ে যায়। আমি মুখ ফুটে বলতে চাই না। আমি জানি আল্লাহ শুনছেন। সে এভাবে মাথা এদিক ওদিক করে লুকিয়ে লুকিয়ে বলার চেষ্টা করেছে। আমি তখন...এভাবে করলে কি এটা গোপন থাকবে? আমরা কি ঐ কর্নারে গিয়ে কথা বলবো? ফেরেশতারা তখন...ও তারা কর্নারে লুকিয়ে গেছে। এখন লিখতে আর পারবো না। হা হা হা। "আমি যখন নামাজ পড়া শুরু করি, সবকিছু কেমন কঠিন হয়ে পড়ে। আর যদি নাময পড়া ছেড়ে দেই, সবকিছু সহজ হয়ে পড়ে।" শরীর মুচড়িয়ে দু পাশে হাত ছাড়িয়ে বলে--"আমি শুধু বলছি। যা ঘটে তাই বলছি। " আমি তখন বললাম- আচ্ছা, কে আপনাকে বলেছে যে যদি আল্লাহর কথা শোনেন জীবন সহজ হয়ে পড়বে? কারণ, কুরআন কখনো এ কথা বলেনি। প্রচলিত প্রবাদে বলা হচ্ছে, প্রজ্ঞা অনুযায়ী জীবন যাপন করো, জীবন ভালো হবে। কুরআন কি কোথাও এটা বলেছে? না। কুরআন কখনো এটা বলেনি। কুরআন কখনো এ ওয়াদা দেয়নি যে, যদি তুমি সৎ জীবন যাপন করো, যদি তুমি নৈতিক জীবন যাপন কর, যদি তুমি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করো--তুমি উন্নত জীবন যাপন করবে, তোমার জীবনে বিশাল বিশাল ব্যাপার ঘটবে। দিয়েছে এমন ওয়াদা? আল্লাহ বলেছেন- লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফিই কাবাদ। মানুষকে অত্যন্ত শ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করা হয়েছে। আচ্ছা চলুন, তাদের উদাহরণ দেখি যারা সবচেয়ে বেশি আল্লাহর কথা শুনত। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি আল্লাহর সব কথা মান্য করতেন। তাঁর জীবন খুবই সহজ ছিল। তাই? ওহ, থামুন। ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তিনি তো প্রজ্ঞাপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি তো কোনোদিন কোনো নিয়ম অমান্য করেননি। তিনি ভালো ছিলেন। তাহলে তাঁর জীবন তো খুবই সমস্যামুক্ত থাকার কথা। তা হয়েছে কি? আমরা এখন কুরআনে একটি ধারা লক্ষ্য করছি। অতিশয় মহান মানুষেরা যারা প্রজ্ঞাপূর্ণ জীবন যাপন করেছেন, তাদের জীবনটা ছিল খুবই কঠিন। তো, ঐ লোকটার কাছে আমি যখন এভাবে তুলে ধরলাম। সে তখন আবারো দু দিকে হাত উল্টিয়ে বললো- তাহলে কোন কারণে ইসলাম পালন করবো? যাই করি জীবন যেহেতু কঠিন হবে, তাহলে এতোসব কিছুর অর্থ কী? এখন, এখন, এখন আপনি আসল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছেন। হোয়াট ইজ দা পয়েন্ট? তাহলে উদ্দেশ্যটা কী? আল্লাহ আমাকে আপনাকে একটি সহজ জীবন অতিবাহিত করার জন্য এ দুনিয়াতে রাখেননি। তিনি রাখেননি। আল্লাহ আমাদের এ দুনিয়াতে রেখেছেন একটি পরীক্ষায় পাশ করার জন্য। এ কারণেই তিনি আমাদের এ পৃথিবীতে রেখেছেন। এমন অনেক মানুষ আছে যারা এ উইজডম বুঝে। আবার এমন অনেক মানুষ আছে যারা এ উইজডম বুঝতে চায় না কিন্তু সহজ জীবন চায়। যারা সহজ জীবন চায় তারা উইজডম বা প্রজ্ঞার পথ অস্বীকার করছে। আল্লাহ কি সহজতা দিবেন? নিশ্চয়ই। কিভাবে তিনি তা দিবেন, কখন তিনি তা দিবেন--এ সময়সূচী তিনি আপনাকে ইমেইল করে জানাবেন না। এ এরকম কোনো নোটিফিকেশন আপনার ফোনে আসবে না। ইউসুর অর্থাৎ সহজতা আসছে তিন দিনের মধ্যে। 🙂 তিনি এমনটি করবেন না। সেরা সেরা মানুষেরা জিজ্ঞেস করছেন- মাতা নাসরুল্লাহ। কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? উত্তরে আল্লাহ বলেন, ইন্না নাসরাল্লাহি কারিব। নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটে। কেউ যদি বলে নিকটে। আপনি তখন... আমরা কত নিকটের কথা বলছি। মাস, বছর, ঘণ্টা? আরও কিছুটা নির্দিষ্ট করে জানতে পারি? না। পারবেন না। "وَ مَا کَانَ اللّٰهُ لِیُطۡلِعَکُمۡ عَلَی الۡغَیۡبِ - "আল্লাহ তোমাদেরকে গায়িবের বিধান জানাবেন না।" (৩ঃ ১৭৯) তিনি আপনাদেরকে আসল পরিকল্পনার কথা জানাবেন না। এ উপলব্ধির নাম পরিপক্বতা। তাই না? জীবন নিয়ে পরিপক্ক দৃষ্টিভঙ্গিটা এরকম: জীবনে পরীক্ষা আসবে। এ পরীক্ষাগুলোকে কাটিয়ে উঠার জন্য যথেষ্ট শক্তি এবং প্রজ্ঞা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন। হেদায়েতের উদ্দেশ্য ঝড় থামিয়ে দেওয়া নয়। হেদায়েতের উদ্দেশ্য হলো আপনাকে এমন শক্তি দান করা যেন আপনি এ ঝড়ের মাঝেও পথ চলতে পারেন। - নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে