একটি টেক্সটবুক, একজন শিক্ষক, একটি পরীক্ষা এবং রেজাল্ট
একটি টেক্সটবুক, একজন শিক্ষক, একটি পরীক্ষা এবং রেজাল্ট ---------------- * ---------------- স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে সবসময় আমরা বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা দিয়ে আসছি। আমি আমার নিজেকে এবং আপনাদের সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথে আপনি যত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবেন তার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা আছে। আর তা হলো জীবনের পরীক্ষা। আল্লাহ তায়ালা সূরা মুলকের দ্বিতীয় আয়াতে বলেন- الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا - "যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।" এটা এমন এক পরীক্ষা যা আমাদের চিরস্থায়ী পরিণতি নির্ধারণ করে দিবে। এখন, প্রতিটি পরীক্ষার একটি টেক্সটবুক থাকে। জীবনের পরীক্ষার টেক্সটবুক হলো কুরআন। কুরআন আমাদের গাইড। আর এ গাইডটা কতই না সুন্দর! প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কোনো মিথ্যা এ বইয়ের কাছেও আসতে পারে না। এই বইটি 'কিতাবুন মুবারাক' একটি বরকতময় বই। এই বইটি নিজেই একটি মিরাকল। এর তিলাওয়াতে আছে বারাকাহ, এর মুখস্ত করাতে আছে বারাকাহ। এর ভাষা সুস্পষ্ট। যে কেউ এখান থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। 'লা রাইবা ফিইহি' এটি এমন একটি বই যাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রতিটি পরীক্ষার একজন শিক্ষক থাকে। আমাদের জীবনের পরীক্ষার শিক্ষক হলেন আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমাদের শিক্ষক নিজেই হলেন একটি বাস্তব কুরআন। তাঁর চরিত্রই ছিল কুরআন। আমরা এ পরীক্ষায় পাশ করার জন্য তাঁর দেখানো পথে চলি। কারণ, আল্লাহ বলেছেন- রাসূলুল্লাহর জীবনেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। আচ্ছা, আমরা বই পেলাম, শিক্ষক পেলাম। এখন পরীক্ষাটা কী? পরীক্ষাটা হলো আমাদের সমগ্র জীবনটা। আমি আপনি কিভাবে জীবন যাপন করছি। وَ نَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَ الۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً - "আমি তোমাদেরকে ভাল ও মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করি।" (২১:৩৫) উভয়টি দিয়ে এবং উভয় অবস্থায় ফেলে আমি দেখতে চাই তোমাদের প্রতিক্রিয়া কী হয়। নেয়ামত পেলে তোমরা কি আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও? আর বিপদে পড়লে কি ধৈর্য ধারণ করো? তোমরা কি সিলেবাস ফলো করছো? তোমরা কি শিক্ষককে অনুসরণ করছো? এভাবেই তোমরা পরীক্ষায় পাশ করবে। আর আমাদের প্রত্যেককে স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোনো দুইজনের পরীক্ষা এক রকম নয়। আল্লাহ আপনার আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনে শুনেই আমাদের জন্য পরীক্ষাটা সাজিয়েছেন। আর আমাদের কেবল ঐ পরীক্ষাই করা হবে যেটাতে আমরা পাশ করতে পারবো। কারণ আল্লাহ বলেছেন- "আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।" (২:২৮৬) প্রতিটি পরীক্ষার প্রক্টর থাকে। যারা আমাদের পরীক্ষার রেকর্ড রাখেন। দুইজন ফেরেশতা দ্বারা আমাদের জীবনের পরীক্ষারও রেকর্ড রাখা হচ্ছে। এখন পরীক্ষার সময় কতোক্ষণ? আমাদের জীবনকাল। পরীক্ষা শেষ যখন আমরা মৃত্যুর ফেরেশতাকে দেখবো। আমাদের হাতে আছে সমগ্র এক জীবন। আল্লাহ বলেন- اَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡکُمۡ مَّا یَتَذَکَّرُ فِیۡهِ مَنۡ تَذَکَّرَ وَ جَآءَکُمُ النَّذِیۡرُ- আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি যে, তখন কেউ নসীহত গ্রহণ করতে চাইলে নসীহত গ্রহণ করতে পারতে? (৩৫:৩৭) আমরা কখন রেজাল্ট পাবো? রেজাল্ট বের হবে হিসাবের দিন। ইয়াওমুল হিসাব। শেষ বিচারের দিন। যে পাশ করবে তার রেজাল্ট ডান হাতে দেওয়া হবে। আর যে ফেইল করবে তার রেজাল্ট বাম হাতে দেওয়া হবে। فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ ۙ فَیَقُوۡلُ هَآؤُمُ اقۡرَءُوۡا کِتٰبِیَهۡ - তখন যাকে তার ‘আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘এই যে আমার আমলনামা পড়ে দেখ‘। (৬৯:১৯) সে সবাইকে ডেকে ডেকে তার রেজাল্ট দেখাবে। আর সে বলবে- اِنِّیۡ ظَنَنۡتُ اَنِّیۡ مُلٰقٍ حِسَابِیَهۡ - ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, আমি আমার হিসাবের সম্মুখীন হব’। (৬৯:২০) আমি এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী জীবন যাপন করেছি। এখন দেখো আমি কত ভালোভাবে পাশ করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন- অতঃপর সে আনন্দময় জীবন যাপন করবে, উচ্চতম মর্যাদার জান্নাতে, তার ফলসমূহ (ঝুলে থাকবে) নাগালের মধ্যে। (বলা হবে,) ‘বিগত দিনসমূহে তোমরা যা অগ্রে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর’। (৬৯:২১-২৪) আর যে ফেল করেছে তার আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেন- "যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘হায়, আমাকে যদি আমার আমলনামা দেয়া না হত’! আমার হিসাব কী তা যদি আমি না-ই জানতাম, ‘হায়, মৃত্যুই যদি আমার চূড়ান্ত ফয়সালা হত’! ‘আমার সম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না!’ ‘আমার ক্ষমতাও আমার থেকে চলে গেল! (বলা হবে,) ‘তাকে ধর অতঃপর তাকে বেড়ি পরিয়ে দাও।’ তারপর ছুড়ে ফেল ওকে জাহান্নামে, ‘তারপর তাকে বাঁধ এমন এক শেকলে যার দৈর্ঘ্য হবে সত্তর হাত।’ সে তো মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করত না, আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করত না। অতএব আজ এখানে তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না। আর ক্ষত-নিংসৃত পূঁজ ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না, অপরাধীরাই শুধু তা খাবে। (৬৯:২৫-৩৭) - ড. ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন