টাকার চেয়েও মূল্যবান
টাকার চেয়েও মূল্যবান
-------------------------------একজন মুমিন কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে সক্রিয়তার সাথে সময় নষ্ট করে না। ভাবতে পারেন? কেউ টাকার কতগুলো বান্ডিল নিয়ে একটার পর একটা আগুনে জ্বালাতে থাকলো! কাউকে এমন করতে দেখলে মনে মনে বলবেন, হায়রে! মানুষ কি কোনোদিন এমন বোকা হতে পারে! আল্লাহর শপথ! যখন আমরা সময় নষ্ট করি, আমরা আমাদের মূল্যবান সময়গুলোকে জ্বালিয়ে দিচ্ছি। এর চেয়েও খারাপ। টাকা হয়তো আবার উপার্জন করা যাবে। কিন্তু, সময় আমরা আর ফিরে পাবো না। পরেরবার যখন সময় নষ্ট করবেন, তখন কল্পনায় একটি চিত্র অঙ্কন করুন- এটিএম থেকে টাকা তুলে সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন। নিজেকে তখন জিজ্ঞেস করুন- আমি কি কোনোদিন এমন কাজ করব? আমি কি আমার এটিএম থেকে টাকা তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবো? আমি কখনো এমন কাজ করবো না। তাহলে কেন আমি টাকার চেয়েও মূল্যবান, উত্তম একটি জিনিস এভাবে অপচয় করে ফেলছি! উপলব্ধি করুন। কুরআনের বহু আয়াত আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। দুনিয়াতে সময় নষ্ট করার কারণে রোজ হাশরের দিন তাদের আফসুসের আর অন্ত থাকবে না। আল্লাহ স্বয়ং আমাদের কুরআনে বলেছেন- اَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡکُمۡ مَّا یَتَذَکَّرُ فِیۡهِ مَنۡ تَذَکَّرَ - "আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি (সময় দেইনি) যে, তখন কেউ নসীহত গ্রহণ করতে চাইলে নসীহত গ্রহণ করতে পারতে?" (৩৫:৩৭) এটি বিস্ময়কর একটি আয়াত। খেয়াল করুন তিনি কী বলছেন। আমি কি তোমাদের যথেষ্ট সময় প্রদান করিনি যে, যদি তোমরা সুযোগ গ্রহণ করতে চাইতে সুযোগ গ্রহণ করতে পারতে? ভালো ভালো আমল করতে পারতে। পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারতে। এ কারণে যারা এ সুযোগ কাজে লাগায়নি তাদের নিকট সমগ্র জীবনটি একটি মিলি সেকেন্ডের মত মনে হবে। এ নিয়ে কুরআনে কত যে আয়াত আছে। সূরা আন-নাজিয়াতে আল্লাহ বলেন- کَاَنَّهُمۡ یَوۡمَ یَرَوۡنَهَا لَمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا عَشِیَّۃً اَوۡ ضُحٰهَا - "যেদিন তারা তা দেখবে (শেষ বিচার) সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা (পৃথিবীতে) এক সন্ধ্যা বা এক সকালের বেশি অবস্থান করেনি।" ৭৯:৪৬ ফেরেশতারা অনেক মানুষের আমলনামার দিকে তাকাবে। দেখবে যে তারা কিছুই অর্জন করতে পারেনি। তাদের নেক আমলের অংশ একেবারেই শূন্য। তখন তারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবে- তোমরা কত বছর পৃথিবীতে অবস্থান করেছিলে? তারা তখন বলবে- قَالُوۡا لَبِثۡنَا یَوۡمًا اَوۡ بَعۡضَ یَوۡمٍ - "আমরা একদিন বা এক দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি।" এরপর তারা নিজেদের দাবিতে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলবে-"(যদি বিশ্বাস না হয়) যান যারা হিসাব রাখতো তাদের জিজ্ঞেস করুন।" আমরা নিশ্চিত আল্লাহ আমাদের শুধু একদিন বাঁচতে দিয়েছেন। কারণ, আমার ভালো আমল বলে কিছু নেই। আমি কিছুই অর্জন করিনি। কিভাবে আমি হিসাবের দিনের কথা, বেহেশত দোজখের কথা জানা সত্ত্বেও কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি? এটা অসম্ভব। তাই, আমি নিশ্চিত আমি পৃথিবীতে একদিন বা এক দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি মাত্র। আমি সময় পাইনি। সময় অপচয় রোধ করার জন্য সক্রিয়তার সাথে, ক্ষিপ্রতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সুরাতুজ যুমারে আল্লাহ আমাদের বলেন। সাবধান হও। اَنۡ تَقُوۡلَ نَفۡسٌ یّٰحَسۡرَتٰی عَلٰی مَا فَرَّطۡتُّ فِیۡ جَنۡۢبِ اللّٰهِ - “যাতে কাউকে বলতে না হয়- হায় আফসোস! আমি আল্লাহর প্রতি (আমার কর্তব্যে) অবহেলা করেছিলাম, আর আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।” (৩৯:৫৬) তার মত হবে না যে বলবে...এক ব্যক্তি এভাবে বলবে, আসলে অনেক ব্যক্তি এভাবে বলবে। তাদের মত হবে না। সে বলবে- আমার নিজের প্রতি কি যে দুঃখ হয়!! আমি কত যে সময় নষ্ট করেছি। 'ফাররাততু' মানে আমি মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করে ফেলেছি অর্থহীন কাজে। আমি সবগুলো নষ্ট করে ফেলেছি; আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যগুলো পালন না করে। আমরা তাদের মত হতে চাই না। আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই না। আল্লাহ সূরা আহকাফে বলেন- یَوۡمَ یَرَوۡنَ مَا یُوۡعَدُوۡنَ ۙ لَمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا سَاعَۃً مِّنۡ نَّهَارٍ ؕ - তাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল (অর্থাৎ দোজখের আগুন) যখন তারা তা দেখতে পাবে তারা তখন নিশ্চিত হয়ে যাবে তারা পৃথিবীতে এক ঘণ্টার বেশি জীবন পায়নি। (৪৬:৩৫) আক্ষরিক অর্থেই তারা এটা বলবে। এরপর আল্লাহ বলেন 'বালাগ'। তোমাদের প্রতি এটি একটি সতর্কতা। এখানে বালাগ মানে মনোযোগ দিয়ে শোনো। সময়ের কথা উল্লেখ করার পর আল্লাহ বলেন এটার প্রতি মনোযোগ দাও। মানুষ শপথ করে বলবে তারা শুধু এক ঘণ্টার জীবন পেয়েছিল। 'বালাগ' আমি এখনি তোমাদের বলছি। সতর্ক হও। তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আমাদের পূর্বের ধার্মিক মানুষেরা এটা ভালোভাবে বুঝেছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন- "ঐ দিনের চেয়ে আর কোনোদিনই আমার কাছে বেশি অনুতাপের নয়; যেদিনের সূর্যাস্ত হয়ে গেলো, আমার জীবনকালও কমে গেলো কিন্তু আমার আখিরাতের জন্য উপকারী কিছু করলাম না।" হাসান আল বসরী মন্তব্য করেন- যে প্রজন্মের সাথে আমি বড় হয়েছি (অর্থাৎ সাহাবা এবং তাবেয়িরা) তারা তাদের সময়কে তার চেয়েও বেশি আগ্রহের সাথে কদর করতো যেভাবে তোমরা তোমাদের স্বর্ণ রৌপ্যের কদর করে থাকো। তাই, সময় অপচয় রোধ করার জন্য সক্রিয়তার সাথে, ক্ষিপ্রতার সাথে উদ্যম গ্রহণ করুন। তখন প্রত্যক্ষ করবেন আপনার হাতে প্রচুর সময় আছে। 'আমার হাতে সময় নেই' বলা বন্ধ করুন। সত্য কথা হলো- আপনি আমাকে যা যা করতে বলেন আমি তার চাইতে অন্য কিছুতে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে থাকি। এটাই আসল কথা। আমি টিভি দেখাকে প্রায়োরিটি দিয়ে থাকি, আমি ইন্টারনেটে ঘুরাঘুরি করাকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে থাকি, আমি ফোনে সময় নষ্ট করাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি; পারিবারিক কাজ-কর্ম করার চেয়েও, অফিসের কাজ করার চেয়েও, বাড়ির কাজ করার চেয়েও, আল্লাহ আমাকে যা যা করতে বলেন তা করার চেয়েও। নিজের প্রতি সৎ হোন। ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনার হাতে সময় নেই। আসল ব্যাপার হলো আপনার প্রায়োরিটির লিস্টটা ভিন্ন। —শায়েখ ইয়াসির কাদি সময় অপচয় কিভাবে রোধ করবেনঃ প্ল্যান প্ল্যান এবং প্ল্যান। আপনার সারাদিন কিভাবে কাটবে তার একটি প্ল্যান আপনার মাথায় থাকতে হবে। সকালে ঘুম থেকে জাগার পর থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সমগ্র দিনের জন্য একটি সুপরিকল্পিত প্ল্যান থাকতে হবে এবং সে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এই পরিকল্পনায় নামাজ অগ্রাধিকার পাবে। নামাজ যদি ঠিক থাকে তাহলে সমগ্র দিন ঠিক আছে। আর যদি নামাজ ঠিক না থাকে তাহলে সবকিছুই ব্যর্থ হয়ে গেল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন