জান্নাতের গেইটের সংখ্যা বেশি কেন?

 


জান্নাতে প্রবেশের জন্য রয়েছে আটটি গেইট। আর জাহান্নামের গেইট সাতটি। জান্নাতের চেয়ে জাহান্নামে বেশি মানুষ যাবে। আমি আবারো বলছি জান্নাতের চেয়ে জাহান্নামে বেশি মানুষ যাবে। তবু জাহান্নামের চেয়ে জান্নাতের গেইট বেশি। কেন? যখন জাহান্নামীদের সংখ্যা হবে জান্নাতীদের চেয়ে অনেক অনেক অনেক বেশি, তখন জান্নাতের গেইটের সংখ্যা বেশি কেন?

আমাদের স্কলাররা এর অনেকগুলো জবাব দিয়েছেন। আর তা হলো--এটা ইঙ্গিত করার জন্য যে, আল্লাহর দয়া সবসময় তাঁর ক্রোধের উপর বিজয়ী। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্ হলেন আর-রাহমান এবং আর-রহিম। জান্নাতের পথে চলা সহজতর, পথের সংখ্যাও বেশি এবং আপনার জন্যে তা উত্তম। আরো ইঙ্গিত হলো-- মানুষকে আশাবাদী করে তোলা। মানুষকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য প্ররোচিত করা। দেখো, জান্নাতের রয়েছে আটটি দরজা! জান্নাতের জন্য বেশি দরজা রয়েছে। একটা না একটা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। আশা হারিয়ে ফেলো না। ব্যাপারটা হলো, দিনশেষে মানুষকে আশা এবং আল্লাহর করুণা দেখানো। আল্লাহ এতো সহজ করা সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষ ধর্মের প্রতি পিঠ দেখিয়ে অন্যদিকে চলে যাবে। অধিকাংশ মানুষ জীবন নিয়ে গভীরভাবে ভাববে না। তাই তাদের পরিণতিও হবে জাহান্নাম। "কেন তারা এই দুনিয়ায়? কে দুনিয়ার জীবনের এই বিশাল ব্যবস্থাপনা তৈরী করেছেন? কে আমাদের জন্য চাঁদ-সূর্য, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, গাছ-পালা, রাত-দিনের পরিবর্তনসহ এতো কিছু তৈরী করেছেন? আমাদের মানুষদের কেন দুনিয়াতে প্রভাবশালী প্রজাতি করে তৈরি করা হয়েছে? কোন কারণে? সৃষ্টিকর্তা আমাদের কাছে কী চান?" অধিকাংশ মানুষ এ প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাববে না। শেষ বিচারের দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়ে দুনিয়ার জীবন নিয়ে পড়ে থাকবে। আল্লাহ এদের সম্পর্কে বলেন- "সুতরাং আজ আমি তাদেরকে তেমনিভাবে ভুলে থাকব যেমনিভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিল এবং যেমনভাবে তারা আমার নিদর্শন ও আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল।" (৭:৫১) আর যারা এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন। যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’। (৩:১৯১-১৯২) নোমান আলী খান এক আলোচনায় বলেছেন- "আমি নিজে যখন ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ করতাম, সেখানে অনেক ননমুসলিম প্রফেসর ছিল, তারা হয়তো একযুগেরও বেশি সময় ধরে কুরআন নিয়ে পড়াশুনা করছে, মানে আমি যেটা বলতে চাচ্ছি যে তারা কুরআন নিয়ে অনেক অনেক জ্ঞানী। এমনকি তারা এটাও স্বীকার করে যে এটা একমাত্র ঐশী বাণীই হওয়া সম্ভব। এটা একমাত্র সৃষ্টি কর্তার কাছ থেকেই আসা সম্ভব, কোন মানুষের পক্ষে এটা রচনা করা সম্ভব নয়। তারা এটা বলতে পারে! যেটা আসলে বলতে গেলে মুসলিম হিসাবেই নিজেকে সমর্পণ করার মত। তো তাহলে কেন তারা পুরোপুরি মুসলিম হতে পারছে না? তখন তারা বলবে যে, নিঃসন্দেহে এটা অসাধারণ কিন্তু আমাকে আরো ভাবতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপটা আর তারা নিতে পারে না। কারণ হ্যাঁ, তাকে অনেক আয়াত দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সে ওই কমিটমেন্ট টা করতে প্রস্তুত নয়। কারণ তা করলে নিজকে পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এটা স্বীকার করলেই আপনার নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। আল্লাহ বলছেন بَلْ يُرِيدُ الْإِنسَانُ لِيَفْجُرَ أَمَامَهُ (সুরা কিয়ামাহঃ ৫) আসল ঘটনা সেটাই, মানুষ আসলে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণই করতে চায়। আসল ঘটনা সেটাই। তাদের সামনে কোন কিছু আসলো, তাদের মন চাইলো তারা সেটা করলো, আর পরিণতি নিয়ে কোন চিন্তাই করে না।" সত্যিই, যে সত্যকে চিনতে পেরেছে কিন্তু এতোই অহংকারী যে সত্যকে মানতে রাজি নয়। সে তার পরিণতির জন্য শুধু নিজেকেই দোষ দিতে পারে, আর কাউকে নয়। তার জন্য যা কিছু সামনে আসছে সে তার সবটার যোগ্য। তাহলে প্রধানত দুই ক্যাটাগরির মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে অস্বীকার করে। একদলঃ মানুষ হয়েও পশুর মত জীবন যাপন করে। নিজেকে কখনো জিজ্ঞেস করে না- "আমার জীবনের উদ্দেশ্য কী? কেন আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?" শুধু মুহূর্তগুলো ইঞ্জয় করার জন্য বাঁচে। একটিবারের জন্যেও ভাবে না- গড কে? তিনি কী চান? মৃত্যুর পরে কী হবে? ওয়েল, তারা সমগ্র একটি জীবন উদাসীনতায় কাটিয়ে দিলো। আর এটা এক ধরণের অহংকার। দুনিয়াতে আমার অবস্থানের কারণ কী? এটা নিয়ে কোনো চিন্তা না করা এবং শুধু মুহূর্তগুলো উপভোগ করার জন্য বাঁচা, এক ধরণের অহংকার। আর তাদের চূড়ান্ত পরিণতির জন্য তারা শুধু নিজেদেরই দোষ দিতে পারে। আর দ্বিতীয় দল- যারা সত্যকে চিনতে পারা সত্ত্বেও আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত নয়। -- ড. ইয়াসির এবং নোমান আলী খানের বক্তব্য অবলম্বনে

কোন কোন দিন হয়তো এমন হতে পারে যে নামাজ পড়ার মানসিক শক্তি পাবেন না, আত্মা মনে হবে কলুষিত, অন্তর মনে হবে পরাজিত। ঐ দিনগুলোতেই আপনার নামাজ পড়া বেশি দরকার। ঐ দিনগুলোতেই আপনার এটা সবেচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ঐ দিনগুলোতে যদি আল্লাহকে সেজদা করার মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারেন, এর মাধ্যমে আপনি আসলে নফসের বিশাল একটি অংশকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেন এবং আপনার রবের দিকে অনেক বড় একটি পদক্ষেপ নিলেন। তাই, মনের অবস্থা যাই থাকুক না কেন, নামাজ পড়ুন। আপনার অন্তরকে নামাজের দিকে পরিচালিত করুন এবং দেখবেন, ইনশাআল্লাহ্‌, আপনার অন্তরই একদিন আপনাকে নামাজের দিকে নিয়ে যাবে। নিজের মনের অবস্থা যখন একেবারে শোচনীয়, ঈমানের অবস্থা যখন একেবারে দুর্বল তখনো একজন মুসলিম হিসেবে নিজের আত্মসম্মান ধরে রাখুন, ভয়ংকর কোন পাপে জড়িয়ে পড়বেন না। কিছু সময় পর ঈমানের অবস্থা আবার ভালো হয়ে যাবে। ধৈর্যধারণ করুন। -- ওমর সুলেইমানের আলোচনা থেকে অনুপ্রাণিত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

দিরিলিসের আরতুগ্রুলের সকল পর্ব কিভাবে দেখবেন?

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে