নামাজ পড়তে অলসতা
তোমরা যারা নামাজ পড়তে অলসতা দেখাও
--------------------- * --------------------------মনে করো, তোমাদের বাবা তোমাদের সাথে কথা বলছে। আমি ধরে নিচ্ছি যে, আমি আমার নিজের সন্তানদের সাথে কথা বলছি। আমি মিম্বরে না, আমি বাসায় বসে আমার বাচ্চাদের সাথে কথা বলছি। তখন কীভাবে আমি তাদের নামাজ পড়তে বলবো? প্রথম যে বিষয়টা বলে আমি কথা শুরু করতে যাচ্ছি তা হলো— প্রিয় সন্তান! এমন একটি সময় ছিল যখন আমি তোমার কথা জানতাম না। তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তোমার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আমি তোমার ব্যাপারে কোনো পরোয়া করতাম না। তোমার কথা কখনো চিন্তা করতাম না। তুমি আমার নিকট কিছুই ছিলে না। "লাম ইয়াকুন শাইয়াম মাজকুরা।" কুরআন বলেছে- "মানুষের জীবনে এমন একটি সময় ছিল যখন কেউ তাকে স্মরণ করতো না।" একেবারেই না। আমিও এর অন্তর্ভুক্ত। আমি তোমার কথা মনে করতাম না। আমি জানতাম না তোমার নাম কী হবে। আমি তোমাকে একটুও ভালবাসিনি, কারণ, তুমি আমার নিকট জিরো ছিলে। কিছুই না। কিন্তু হঠাৎ করে আমার জীবনে তোমার আগমন ঘটলো। এমনকি যখন আমি জানতে পারলাম যে, তোমার মা তোমার জন্ম দিবে। যখন সে তার পেটের মধ্যে তোমাকে বহন করে চলছিল, এমনকি তোমার মাও ভাবতো, কেমন হবে আমার সন্তানটা। কিন্তু আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমার কাছে কোনো তথ্য ছিল না। আমার একটি অংশ এই ভয়ে থাকতো যে, তুমি হয়তো আমার মত হবে। কিন্তু আমার কোনো ধারণাই ছিল না কেমন মানুষ হবে তুমি। এমনকি তুমি যখন একটু একটু করে বড় হচ্ছিলে, তুমি যখন একদম ছোট বাচ্চা ছিলে, আমি আসলে জানতাম না কে তুমি। আমি শুধু জানতাম তোমাকে খাওয়াতে হবে। আর মাঝে মাঝে তোমার থেকে দুর্গন্ধ আসতো। এছাড়া তোমার সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানতাম না। তোমাকে আমার পরিষ্কার করতে হত এবং আহার করাতে হতো কিন্তু আমি তোমার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। এখন, তুমি যেহেতু বড় হয়ে উঠছ। এখন, আমরা পরস্পর কথা বলতে পারি এবং যোগাযোগ করতে পারি। তুমি স্কুলে যাচ্ছ, আমরা একই বাড়িতে বাস করি। আমি শুধু তোমাকে জানাতে চাচ্ছি, আমাদের এই সম্পর্কটি সবসময় বর্তমান ছিল না। আমি তোমাকে আরও জানাতে চাই, এই সম্পর্কটি সবসময় বর্তমান থাকবেও না। খুবই অল্প কিছু সময়ের জন্য আমরা দুজন একত্রে থাকবো। বেশি একটা সময় আমরা একত্রে থাকবো না। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তুমি পুরোপুরি বড় হয়ে যাবে। তুমি যুবক হওয়ার পথে। এটা খুব দূরের জিনিস না। বস্তুত, তোমার বাচ্চাকাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়টাকে আমার কাছে এক মাসের মত মনে হয়। চোখের পলকে তুমি, এখনকার তুমি হয়ে গেছ। কিছু বুঝে উঠতে উঠতেই তুমি বড় হয়ে যাবে। একদিন ইউনিভার্সিটিতে যাবে। চাকরি করবে। বিয়ে করবে। এরসবকিছুই ঘটবে ইনশাআল্লাহ। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করেন। যখন ঐ ব্যাপারগুলো ঘটবে, তখন আমাদের সম্পর্কটা আর আজকের মত থাকবে না। বাড়িতে এসেই তুমি আমার কাছে আসবে না। তুমি আমার সাথে সময় কাটাবে না। তোমার নিজের চাকরি থাকবে, পরিবার থাকবে, স্ত্রী থাকবে বা স্বামী থাকবে। তোমার তখন নিজের জীবন থাকবে। সুতরাং, আমাদের হাতে একত্রে যে সময়টুকু আছে তা খুবই সীমিত। এমনকি এ সময়টুকুতেও তোমার স্কুল আছে, আমার চাকরি আছে। আমাকে বাজার করতে হয়। আমাদের হাতে হয়তো দৈনিক বিশ মিনিট সময় থাকে, সত্যিকারের কথাবার্তা বলার জন্য। আমাদের একসাথে অতিশয় সংক্ষিপ্ত কিছু সময় থাকে। তুমি যখন বড় হয়ে যাবে তখন আমার সম্পর্কে তুমি শুধু আমাদের একত্রে কাটানো ঐ গুটিকতক মুহূর্তগুলোর কথাই স্মরণে রাখবে। কারণ, আমাদের কাছে একত্রে কাটানোর মত ২৪ ঘণ্টা নেই। আমাদের নেই। তো মোটকথা, প্রথম যে জিনিসটি আমি তোমাকে জানাতে চাই তা হলো- আমি তোমাকে কোনোমতে চিনি। আমি জানি আমরা একত্রে বাস করি। কিন্তু আমি সত্যিই তোমার সম্পর্কে খুব অল্পই জানি। কেন জানো? কারণ, কোনো মানুষই অন্য কোনো মানুষকে সত্যিকার অর্থে চিনে না। তুমি যা যা চিন্তা করো তার সবটা তো আমাকে বলো না। আর আমিও নিজ চিন্তার সবকিছু তোমাকে জানাই না। কিন্তু এমন এক সত্ত্বা আছেন যিনি তোমাকে চিনতেন এমনকি যখন তুমি আমার নিকট কিছুই ছিলে না, তখনো। এমন এক সত্ত্বা আছেন যিনি তোমাকে তখনো ভালবাসতেন যখন সৃষ্টিজগতের কেউ তোমাকে ভালবাসত না। এমন একটা সময় ছিল যখন এই জগতের কেউই তোমাকে স্নেহ করতো না। কিন্তু তিনি তোমাকে স্নেহ করতেন। এমন এক সত্ত্বা আছেন যার সাথে তোমার সম্পর্ক আগামীতেও থাকবে। যদিও তোমার আমার সম্পর্ক আগামীতে পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। এখানে উপবিষ্ট বড়দের অনেকেই জানেন এটা। আমি জানি, ছোটবেলায় আমার বাবার সাথে আমার এক ধরণের সম্পর্ক ছিল। কলেজে পড়ার সময় তাঁর সাথে সম্পর্কটা অন্য ধরণের ছিল। আর এখন তাঁর সাথে আমার সম্পর্কটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। যদিও আমরা একই মানুষ আছি। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে আমূল পরিবর্তন এসে গেছে। কিন্তু এমন একজন আছেন যিনি সর্বদা তোমাকে ভালোবেসে গেছেন, তোমাকে নিরাপত্তা দিয়ে গেছেন, তোমার ভালোর জন্য পরিকল্পনা করে গেছেন, তোমার যত্ন নিয়েছেন একেবারে শুরু থেকেই। আর তিনি সবসময় তা করে যাবেন। আর সে সত্ত্বা আমি নই। আমি তোমার জীবনের একটি এপিসোড/পর্ব মাত্র। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু নই। সুন্দর একটি এপিসোড যা আল্লাহ তোমাকে আমাকে একত্রে দান করেছেন। কিন্তু এটি স্থায়ী কোনো এপিসোড নয়। কিন্তু এমন এক সত্ত্বা আছেন যার সাথে তোমার সম্পর্কটা সবসময় ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আর সে সত্ত্বা হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। আর তিনিই তোমাকে নামাজ পড়তে আদেশ করেছেন। তবুও কি পড়বে না? - নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন