যে দশটি উপায়ে আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়

 যে দশটি উপায়ে আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়

-------------------------------------------

আমরা জানি, সাধারণ নিয়ম হলো কুরআনে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে কেউ কোনো মন্দ কাজ করলে তাকে সে কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে। তাহলে, কোনো ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করলে তার ঐ কাজের জন্য একটি শাস্তি নির্ধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- اِنَّا مِنَ الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُنۡتَقِمُوۡنَ- নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (৩২:২২) এখন, আমরা তো এ শাস্তি চাই না। কেউ অপরাধ করে ফেললে এর থেকে বাঁচার উপায় কী? কি কি উপায়ে আমাদের অপরাধগুলো মাফ করে দেওয়া হয়? শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (র) কুরআন হাদিস থেকে এরকম দশটি উপায় খুঁজে বের করেছেন যার মাধ্যমে আমরা আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে নিতে পারি; চূড়ান্ত শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বে। অবশ্যই চূড়ান্ত শাস্তি হলো দোজখের আগুন। আমরা আল্লাহর আশ্রয় চাই। আমরা ঐ শাস্তি ভোগ করতে চাই না। সংক্ষেপে এ দশটি উপায় নিম্নরূপঃ ১। তাওবা। ২। ইস্তেগফার। তাওবা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পথে ফিরে আসা আর ইস্তেগফার হলো আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া। ৩। ভালো ভালো কাজ। উত্তম আমল। আল্লাহ বলেন- اِنَّ الۡحَسَنٰتِ یُذۡهِبۡنَ السَّیِّاٰتِ - “নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়।” (11:114) ৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াত এবং উম্মার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা। ৫। আপনার জন্য অন্য ঈমানদারদের দোয়া। এ ব্যাপারটা আংশিকভাবে আমাদের হাতে। কার কথা মানুষ বেশি মনে করবে এবং তার জন্য বেশি করে ক্ষমা চাইবে? যার কার্যক্রম অনেক বেশি মানুষের উপকার করে। যিনি বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। যার উত্তম চরিত্র এবং উত্তম আচার-ব্যবহারের কথা মানুষ মনে রাখে। ৬। পরপারে চলে যাওয়ার পর আপনাকে দেওয়া ঈমানদারদের উত্তম আমল। এটা দুআর চেয়ে ভিন্ন। কোনো পুণ্যের কাজ উপহার দেওয়া। যা অনেক বেশি দুর্লভ। কে আপনাকে হজ্জ এবং উমরা উপহার দিবে? আপনার মৃত্যুর পর কে আপনার নামে এক লাখ টাকা দান করবে? এমন ঘটনা একেবারেই বিরল। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ আপনার জন্য এটা করতে পারে যাদের জীবনে আপনার প্রভাব অপরিসীম। অথবা কোনো না কোনো ভাবে আপনি তাদের সীমাহীন উপকার করেছেন। আমি এমন ঘটনার কথা জানি। আমার শিক্ষক আমাকে বলেছেন। তাঁরা সুদূর অতীতের বিখ্যাত উলামাদের জন্য হজ্জ করতেন। কারণ তাঁরা বলতেন, আমরা তাঁদের লেখা থেকে এতো বেশি উপকৃত হয়েছি যে, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অন্ততপক্ষে তাঁদের জন্য উমরা এবং হজ্জ করতে পারি। যেমন, ইমাম নববীর জন্য হজ্জ করতে পারি; ইবনে হাজমের জন্য করতে পারি বা অমুক আলেমের জন্য করতে পারি। আক্ষরিক অর্থেই তাঁরা হাজার বছর আগের কোনো আলেমের জন্য উমরা করতেন। কারণ তাঁরা বলতেন, আমি ঐ ব্যক্তির নিকট কত যে ঋণী! এগুলোই হলো রেখে যাওয়া সৎ কর্মের উপকারিতা। এরপরের তিনটি ব্যথা এবং কষ্ট ভোগের সাথে জড়িত। আমরা এগুলো চাই না। কিন্তু তবু এগুলো চূড়ান্ত শাস্তি অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন থেকে উত্তম। ৭। দুনিয়াতে যে কোনো কষ্টভোগ। শারীরিক বা মানসিক যে কোনো ধরণের। এ ক্ষেত্রে শুধু এটাই শর্ত- আমাদের এহতেসাব থাকতে হবে। অর্থাৎ, আমরা আশা করবো এর কারণে আল্লাহ আমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন। ৮। কবরের আজাব। এমন অনেক মানুষ থাকবে যারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। আর আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া দেখিয়ে তাদেরকে শুধু কবরেই শাস্তি দিবেন; আখিরাতে আর শাস্তি দিবেন না। তাদেরকে জাহান্নামে আর ফেলবেন না। আর আমরা এটা কোনোভাবেই চাই না। সাত নাম্বার তো জীবনের অংশ। দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট কিছুটা ভোগ করতে হবে। আমরা এটা কমাতে চাই। আর আট নাম্বারের একটুও আমরা চাই না। কিন্তু, এটা এর বিকল্পের চেয়ে ভালো। আর বিকল্পটা হলো দোজখ। ৯। নয় নাম্বারটা এমনটি আট নাম্বারের চেয়েও ভয়ংকর। আর তা হলো বিচার দিবসের কষ্ট। আমরা এটা একেবারেই চাই না। আমরা বরং তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন- مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَهٗ خَیۡرٌ مِّنۡهَا ۚ وَ هُمۡ مِّنۡ فَزَعٍ یَّوۡمَئِذٍ اٰمِنُوۡنَ - “যারা সৎকাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য আছে উৎকৃষ্টতর প্রতিদান, সেদিন তারা ভীতি শঙ্কা থেকে নিরাপদ থাকবে।” (২৭:৮৯) আমরা এই দলের অংশ হতে চাই। ১০। আল্লাহর সর্বব্যাপী সাধারণ ক্ষমা। এমন একদল মানুষ থাকবে যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজ ইচ্ছায় ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ হলেন মালিক, আল্লাহ হলেন আলা কুললি শাইইন কাদির। আল্লাহ হলেন গাফুর, গাফফার এবং রাহমান। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। তিনি নিজ ইচ্ছায় একদল মানুষকে ক্ষমা করে দিবেন। যার কারণ আমরা জানি না।

- শায়েখ ইয়াসির কাদির আলোচনা থেকে। একেবারে সংক্ষেপে উপায়গুলো লিখেছি এখানে। মূল বক্তব্য ১৮:৩৭ মিনিটের।

*********************************************************************

কেন আমরা প্রত্যেকবার সালাতে যখন সিজদায় যাই, উঠে দাঁড়ানোর জন্য ছটফট করি? যেমন, খুবই তড়িৎ গতিতে বলি— "সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা, সুবহানা রাব্বিয়াল আলা, সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।" এতোই তাড়াতাড়ি বলি আমি। কারণ আমার সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে ইচ্ছে হয় না। মনের মধ্যে জুরুরি কাজের চিন্তা এসে পড়ে— "আমার তো অনেক কাজ আছে। আমার জরুরি কাজ শেষ করতে হবে।" এরকমই তো হয় তাই না?

আল্লাহ্‌র সামনে নিজের মাথা নিচু করার চাইতে জরুরি আর কি হতে পারে? আমি বুঝি না। আমরা কীভাবে নিজেদের বুঝ দিতে পারি এটা নিয়ে? সেই একটি জিনিস যা আল্লাহ ইবলিছকে করতে বলেছিলেন। সেই একটি জিনিস যা সে করতে অস্বীকার করেছিল। এই একটি জিনিস আমাদের তিনি প্রতিদিন করতে বলেছেন। আর আমরা যদি করিও সেটা যেন একটা কৌতুক। কোনরকম করে দৌড়। যেন এটা তো কিছুই না… কি এটা? এর নাম কি সেজদা? —নোমান আলী খান (ধীরে ধীরে উচ্চারণ করে বলুন। বলার সময় অর্থটা মাথায় রাখুন। সুবহানা রাব্বিয়াল আলা অর্থ: আমার সর্বোচ্চ রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে