জিকিরের ফজিলত

 


হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-র বরাতে এ হাদিসের বর্ণনা আছে।

হজরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।’ অর্থাৎ, এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতি ও সও বস্তুর ওপর তিনিই ক্ষমতাবান।এই দোয়া যিনিই দিনে একশ বার পড়বেন, তাঁর ১০টি দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব অর্জিত হবে, একশটি সওয়াব লেখা হবে, তাঁর একশটি গুনাহ মোচন করা হবে। ওই দিনের সন্ধ্যা অব্দি এটি তাঁর জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ হবে। তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম কাজ করতে পারবে না, যদি না কেউ তার চেয়ে বেশি আমল করে। (বুখারি, হাদিস: ৬,৪০৩, মুসলিম, হাদিস: ৭,০১৯)

তিনি আরও বলেছেন, দিনে যিনি একশবার ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহি’ পড়বেন, তাঁর গুনাহগুলো মোচন করা হবে; যদি তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়, তবুও।

বুখারি, হাদিস: ৬,৪০৫, মুসলিম, হাদিস ৭০১৮


আয়াতুল কুরসি পড়ার অনেক উপকার

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-র বরাতে এ হাদিসের বর্ণনা আছে।

তিনি বলেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে রমজানের জাকাত–ফিতরা দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। মূলত আমি পাহারা দিচ্ছিলাম। এ সময় একজন এসে খাদ্যদ্রব্য চুরি করতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করে বললাম, ‘তোমাকে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাব।’

সে বলল, ‘আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার ওপর। আমার দারুণ অভাব।’ কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

 সকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে হাজির হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা, গত রাতে কেমন আচরণ করেছ?’

 আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। এ কারণে তার প্রতি দয়া হওয়ায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সতর্ক থেকো। সে আবার আসবে।’

আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কথা শুনে নিশ্চিত হলাম যে সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম। সে এসে আবারও খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে বললাম, ‘অবশ্যই তোমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাব।’

 সে বলল, ‘আমি অভাবী, পরিবারের দায়িত্ব আমার ওপর। (আমাকে ছেড়ে দাও,) আমি আর আসব না।’ তাতে আমার মনে দয়া হলো। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকালে উঠে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে গেলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘আবু হুরায়রা, গত রাতে তোমার বন্দী কেমন আচরণ করেছে?’

 আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তান-পরিবারের অভিযোগ জানাল। তাই আমার মায়া লাগলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’

তিনি বললেন, ‘সতর্ক থেকো। সে আবার আসবে।’

তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে আবারও খাদ্যদ্রব্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, ‘এবার তোমাকে নবী (সা.)–এর কাছে হাজির করবই। এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার। ফিরে আসব না, এ কথা বলে তুমি আবার ফিরে এসেছ।’

 সে বলল, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু শব্দ শিখিয়ে দেব, যার কারণে আল্লাহ তোমার কল্যাণ করবেন।’

 আমি বললাম, ‘সেগুলো কী?’

 সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমানোর জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’

তখন আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকালে আবার রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে গেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার বন্দী কেমন আচরণ করেছে?’

আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সে বলেছে, আমি তোমাকে এমন কিছু শব্দ শিখিয়ে দেব, যার ফলে আল্লাহ তোমার কল্যাণ করবেন। এ কারণে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’

 তিনি বললেন, ‘শব্দগুলো কী?’

 আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আয়াতুল কুরসি পড়বে। সে আরও বলল, এর ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সব সময় তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসবে না।’

 এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘শোনো, সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী, তবে তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবু হুরায়রা, তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে?’

আমি বললাম, ‘না তো।’

তিনি বললেন, ‘সে ছিল শয়তান।’

বুখারি, হাদিস: ২,৩১১

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট