সভায় এসে গালিগালাজ

 


একবার ভাবুন তো, আপনি কোনো এক সভায় উপস্থিত হয়েছেন। সামনে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন। সভায় বক্তব্য দেবেন খুবই সম্মানিত একজন ব্যক্তি। হঠাৎ দর্শকদের মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে বক্তাকে অপমান করতে লাগলেন।

এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। কর্তৃপক্ষ সে জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়ে রাখে। ইসলামের সোনালি যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল।

একটি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)। তিনি সেই বিখ্যাত ইমাম, যিনি চার মাজহাবের একটি ‘হাম্বলি মাজহাব’ প্রবর্তন করেছিলেন। মুসনাদ ই আহমদ–এর মতো গুরুত্বপূর্ণ হাদিস গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন।

বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে একজন লোক এসে রূঢ় ভাষায় তাঁকে অপমান করতে লাগলেন। ইমাম আহমদ (রহ.) তাঁর কথায় কান দিলেন না। লোকটিকে থামানোর জন্য তাঁর ছাত্ররা দাঁড়িয়ে গেলেন। ইমাম আহমদ উল্টো তাঁর ছাত্রদের বললেন, ‘তোমরা বসো, কেউ জায়গা থেকে উঠবে না।’ তিনি আবারও সেই লোকের কথায় কান না দিয়ে সাধারণভাবে তাঁর বক্তব্য চালিয়ে যেতে লাগলেন।ইমাম আহমদ কোনো প্রতিবাদ করছেন না দেখে লোকটি এবার অকথ্য ভাষা ব্যবহার করতে লাগলেন। একপর্যায়ে তাঁর পরিবার নিয়েও বলতে লাগলেন। ছাত্ররা এবার আর সহ্য করতে পারলেন না। কয়েকজন দাঁড়িয়ে ইমাম আহমদ (রহ.)–কে বলল, ‘হে আমাদের ইমাম, এবার এই বোকার যথাযথ জবাব দিন, সে অনেক বলে ফেলেছে।’

ইমাম আহমদ বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমি কিছুই বলব না। কোথায় গেল আমাদের শিক্ষা, যা কোরআন আমাদের শেখায়। কী হলো তোমাদের, যে তোমরা কোরআনকে প্রয়োগ করা ভুলে গেছ? কোরআন তো আল্লাহ পাঠিয়েছেন সব স্থানে প্রয়োগ করার জন্য। এখানে তার প্রয়োগ করছ না কেন?’

এরপর তিনি সুরা ফোরকানের ৬৩ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন, ‘রহমানের বান্দা তো তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাচল করে; আর তাদের সঙ্গে যখন মূর্খরা তর্ক করতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।’আল্লাহর সত্যিকার বান্দারা খুবই সাধারণভাবে দুনিয়ায় চলাচল করে। তাদের চালচলনে কোনো অহংকার থাকে না। তারা কোনো মূর্খতার শিকার হলে ধৈর্য ধারণ করে। তারা জানে, মূর্খদের কথার জবাব দিয়ে কোনো লাভ নেই।

যেমন, এই লোকটির কথাই ধরা যাক। তিনি ইমাম আহমদের সঙ্গে কোনো যুক্তি দিয়ে কথা বলেননি। তিনি এসেই খারাপ ভাষা ব্যবহার করতে লাগলেন। তাঁর পরিবার নিয়েও কথা বললেন।

আমরা এ অবস্থায় পড়লে হয়তো উচিত জবাব দেওয়ার কথা ভাবতাম, যেমনটা করেছিল ইমাম আহমদ (রহ.)–এর ছাত্ররা। সেই সভায় তাঁর পাঁচ হাজার ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। ইমাম আহমদ চাইলেই সেই লোকের দফারফা করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি এই কঠিন অবস্থায়ও কোরআনের সদ্ব্যবহার করেছেন।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

ইসলামে কি পুরুষদেরই বেশি প্রাধান্য


ইসলাম সম্পর্কে অনেকের মনে একটা ভ্রান্ত ধারণার উদয় হয়। বিশেষ করে নারীদের প্রসঙ্গে অনেকেই মনে করেন ইসলাম হলো ছেলেদের ধর্ম। অনেকের বলতে চান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ছেলেদের বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন, মেয়েদের খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

পণ্ডিত ব্যক্তিদের বলছেন, এটা ভুল ধারণা। আল্লাহ তাআলা কোরআনে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। আরবি ভাষার নিয়ম অনুসারে, বেশির ভাগ পুরুষবাচক শব্দগুলো নারীদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। যেমন, কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তাআলা ‘হে ইমানদারগণ’ অথবা ‘হে মানুষগণ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছেন যা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হজরত মরিয়ম (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা ‘ক্বনিতিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। লিঙ্গের বিচারে এটি একটি পুরুষবাচক শব্দ।একটি হাদিসে আমাদের নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন, সাত শ্রেণির মানুষ কেয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তাঁদের মধ্যে এক শ্রেণির হলো সেই যুবক, যাঁরা সুন্দরী নারীর কুমন্ত্রণা সত্ত্বেও নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেন।

পণ্ডিত ব্যক্তিরা বলেন, এই হাদিসটি একইভাবে নারীদের জন্যও প্রযোজ্য, অর্থাৎ যে নারী সুদর্শন পুরুষের প্ররোচনা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখেন। ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে আসলেই কোনো বৈষম্য নেই। এটি প্রমাণ পাওয়া যায় একটি ঘটনা থেকে।

কোরআনে নারীদের বিষয় নিয়ে শুধু যে আমরাই প্রশ্ন করছি, এমনটা নয়। একই প্রশ্ন আমাদের নবী (সা.)-এর কাছেও করা হয়েছিল। প্রশ্নটি করেছিলেন তাঁর স্ত্রী, বিশ্বাসীদের জননী হজরত উম্মে সালামা (রা)। তিনি ছিলেন খুবই বিজ্ঞ একজন নারী। ইসলামি জ্ঞানে দক্ষতা লাভের জন্য অনেক সাহাবি তাঁর সান্নিধ্যে আসতেন।উম্মে সালামা (রা.) মহানবী (সা.)-কে একবার প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর নবী, আল্লাহ তাআলা কোরআনে শুধু বিশ্বাসী পুরুষদের কথাই কেন বলেন, বিশ্বাসী নারীদের কী হবে? বিশ্বাসী নারীরা কি তাদের পুরস্কার পাবে না?’ মহানবী (সা.) তাঁর কথার জবাবে কিছুই বললেন না, তিনি শুধু চুপ করে থাকলেন।

উম্মে সালামা (রা.) বলেন, এরপর আমরা অন্য কথায় চলে গেলাম। একটু পর মহানবী (সা.) বাইরে বের হয়ে গেলেন। এরপর তিনি আবার ঘরে ফিরে আসলেন। আমি তখন চুল আঁচড়াচ্ছি। হঠাৎ মহানবী (সা.)-এর কক্ষ থেকে তাঁর গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন সুরা আহজাবের ৩৫ নম্বর আয়াত নাজিল হলো, নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ, মুসলিম নারী, বিশ্বাসী পুরুষ, বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ, রোজা পালনকারী নারী, লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ, লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে যে পুরুষ, আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে যে নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রায় সব ধরনের ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহর চোখে সবাই সমান।

ড. ওমর সুলাইমান

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট