মৃত্যুর আগে অপূর্ব রোশনাই

 


হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) ছিলেন খুবই ন্যায়পরায়ণ একজন শাসক। মহানবী (সা.) এবং চার খলিফার শাসনের পর লম্বা সময় মুসলিমরা যে নৈরাজ্যের ভেতর ছিল, তিনিই তা দূর করেছিলেন। তার ন্যায়নীতির কারণে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) তাঁকে মুসলিম জাহানের পঞ্চম খলিফা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আলী (রা.)–এর মৃত্যুর সঙ্গে যে খিলাফত শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেই খিলাফতকে যেন আবার ক্ষণিকের জন্য ফিরিয়ে এনেছিলেন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)।

ইসলামের এই মহান ব্যক্তি খুবই অল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর শাসনকাল ছিল মাত্র তিন বছর। ৩৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ অল্প সময়ে তিনি এত বড় কৃতিত্ব রেখে গিয়েছিলেন, যা এখনো মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।ওমর ইবনে আবদুল আজিজ সব সময় তাঁর আমল নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। তিনি সব সময় সন্দেহের ভেতর থাকতেন যে তিনি পর্যাপ্ত ভালো কাজ করে যেতে পারেননি। আল্লাহ তাআলা হয়তো এ জন্য তাঁকে শাস্তি দেবেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে তাঁর এ ধরনের চিন্তা আরও বেড়ে গেল।

শেষ সময়ে মুগিরা ইবনে আবদুল হাকিম নামের এক লোক তাঁর দেখাশোনা করতেন। মুগিরা বলেন, ‘ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) একটি বিশেষ দোয়া সব সময় করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমার আসল চেহারা আপনি তাদের থেকে লুকিয়ে রাখুন মাত্র এক ঘণ্টার জন্য হলেও।’

মুগিরা বলেন, ‘এই দোয়ার মানে কী, তা আমি কখনোই বুঝতে পারতাম না। তিনি কিছু লুকাতে চাচ্ছিলেন। সবাই তাঁকে এত পছন্দ করত এরপরও লুকানোর মতো কী থাকতে পারে। এরপর যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন, সেদিন বুঝতে পারলাম তিনি আসলে কী লুকাতে চাইছেন।’শেষ মুহূর্তে আবদুল আজিজ পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বললেন, সবাই তাঁকে দেখতে এলেন। তাঁকে মানুষ এত ভালোবাসত যে গরিব লোকেরাও তাঁকে শেষ সময়ে দেখার সুযোগ পেল। সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি তাঁর স্ত্রীকে আলিঙ্গন করলেন। তাঁর স্ত্রী কাঁদছিলেন। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) স্ত্রীকে বললেন, ‘ধৈর্য ধরো, প্রিয়তমা।’

এরপর তিনি সুরা জুমারের ১০ নম্বর আয়াত উচ্চারণ করলেন, ‘যারা দুনিয়ায় সৎ কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা ধৈর্য ধরবে, তারাই অগণিত পুরস্কার পাবে।’

এরপর তিনি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইলেন। মুগিরা বললেন, ‘তাঁর পরিবারসহ আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। তাঁর ঘরের এক পাশে ছিদ্র দিয়ে আমি চোখ রাখলাম ভেতরে কী হচ্ছে, তা দেখার জন্য। দেখতে পেলাম তার চেহারা আলোকিত হয়ে উঠছে। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি বলছিলেন, আমন্ত্রণ, হে সুন্দর চেহারার অধিকারী, তোমাদের স্বাগত। এরপর সুরা কাসাস–এর ৮৩ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘এই পরকাল তাদের জন্য যারা দুনিয়ায় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে চায় না। যারা দুর্নীতি করতে চায় না। খোদাভীরুদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম ও চূড়ান্ত সাফল্য।’মুগিরা বলেন, তিনি এই আয়াত পাঠ করতেই থাকলেন এরপর হঠাৎ আর কোনো শব্দ পাওয়া গেল না।

আবদুল আজিজ (রহ.)–এর স্ত্রী যখন ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, তিনি আর নেই। তিনি গালে হাত রেখে শুয়ে ছিলেন। তার চোখ ছিল ওপরের দিকে আর মুখে ছিল মিষ্টি হাসি।

দুনিয়ায় যাঁরা সম্মান ও প্রতিপত্তির পেছনে ছোটেন, পরকাল নিয়ে যাঁরা ভাবেন না, তাঁদের মৃত্যু কিন্তু সুখের হয় না। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বিশাল সাম্রাজ্যের খলিফা হয়েও সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। দুনিয়া কামনা না করে আখিরাত কামনা করতেন, ফলে তাঁর শেষটাও হয়েছিল সুন্দর।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ


পরকালের জবাবদিহি ও ইসলাম

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট