তাওবা এবং নিজের সংশোধন

 


তাওবা এবং নিজের সংশোধন

------------------------------------- পৃথিবীতে এমন কোনো পাপ নেই যা ক্ষমারযোগ্য নয়। পৃথিবীতে কৃত সকল পাপ ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য। এ ক্ষমা পাওয়ার জন্য আপনাকে তাওবা করতে হবে। সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ তায়ালা বলেন- "আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ কীরূপে সেই সম্প্রদায়কে সুপথ দেখাবেন যারা ঈমান আনার পর, এ রসূলকে সত্য বলে স্বীকার করার পর এবং তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল আসার পর কুফরী করে? বস্তুতঃ আল্লাহ যালিম কওমকে পথ দেখান না। এরাই তারা যাদের প্রতিফল এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং সমুদয় মানবের অভিসম্পাত। তারা ওতেই চিরকাল থাকবে, তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে বিরামও দেয়া হবে না।" তাহলে দেখা যাচ্ছে এদের উপর আল্লাহ দারুণ অসন্তুষ্ট। এদের অপরাধ ছোটো কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু এখন ঠিক এর পরের আয়াতটি খেয়াল করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এমনকি এদেরকেও বাঁচার একটি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন- "কিন্তু তারা ছাড়া যারা এরপরে তাওবা করেছে এবং নিজেদের শুধরে নিয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" এ আয়াতটি সকল ঈমানদারদের এ আশা প্রদান করে যে, যে কোনো পাপেই আমরা নিজেদের নিমজ্জিত করে ফেলি না কেন, আমরা তাওবা করে ফিরে আসতে পারি। অনেকে এভাবে বলে- "আমি তাওবা করেছি কিন্তু নিশ্চিত না আল্লাহ আমার তাওবা গ্রহণ করেছেন কিনা।" আপনার আশা থাকা উচিত যে, আল্লাহ গ্রহণ করে নিবেন। কিন্তু তিনি শুধু এটুকু চান না যে, মানুষ শুধু অনুশোচনা ফিল করে থেমে যাক। কারণ, অনেক মানুষ আছে যারা কোনো পাপ করে ফেলার পরে এভাবে বলে- "ইয়া আল্লাহ! আমি সরি। আমি খুবই দুঃখিত। খুবই লজ্জিত। কিন্তু আমি আগামী সপ্তাহে আবার করবো। আমি আগামী সপ্তাহের জন্যেও সরি। ইয়া আল্লাহ! পাপটি বন্ধ করতে আমাকে সাহায্য করুন। পাপটি করে আমি খুবই মজা পাই। কিন্তু আমি সরি।" অর্থাৎ আমি সরি। আমি খুবই অনুশোচনা ফিল করছি। কিন্তু পাপ কাজটা আমি করতে থাকবো। এছাড়া তারা আরো কী বলে জানেন? তারা বলে- "আল্লাহ বুঝেন। আল্লাহ আমার অবস্থা জানেন। আমি জানি কুরআনে আমাকে এ পাপ কাজটি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমার পরিস্থিতি স্পেশাল। আল্লাহ আমার অবস্থা জানেন। আপনি আমাকে বিচার করতে আসবেন না।" আমি তখন বলি। ঠিকাছে। আমি আপনার অবস্থা বিচার করতে যাচ্ছি না। আল্লাহর কালাম আপনার অবস্থা বিচার করবে। কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহর একটি নাম হলো আল-আলিম। অর্থাৎ যিনি সবকিছু জানেন। আল্লাহ আপনার সকল অবস্থা জেনেই আপনাকে অমুক পাপটি থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তাই, সকল অজুহাত বাদ দিয়ে পাপ কাজটি থেকে বিরত থাকুন। আমি এতোসব কিছু বলছি আয়াতের পরবর্তী অংশটির কারণে। আল্লাহ বলেছেন- اِلَّا الَّذِیۡنَ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ وَ اَصۡلَحُوۡا - "যারা তাওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় তারা ব্যতীত।" হ্যাঁ, আমি তাওবা করেছি। তাওবা মানে অনুশোচনা ফিল করা। আমি অনুশোচনা ফিল করেছি, মনে মনে লজ্জিত হয়েছি। এখন আমাকে পরবর্তী পদক্ষেপটি নিতে হবে। আর তা হলো নিজের এই মন্দ কাজটি বা স্বভাবটি শুধরে নিতে হবে। নিজেকে সংশোধন করে নিতে হবে। নিজের সংশোধন করা আসলে অনেক কঠিন কাজ। অনুশোচনা ফিল করা সহজ। কান্নাকাটি করা, ভয়ানক অনুতাপ ফিল করা আসলে অনেক সহজ। কিন্তু এরপরে সাহসী একটি পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সেই সাহসী পদক্ষেপটি হলো আমি ভুল যা কিছু করছিলাম তা বাদ দিবো। নিজেকে শুধরে নিবো। যদি খারাপ কিছু করে থাকেন এটা হয় নিজেকে আনন্দ দেওয়ার জন্য বা অন্য কাউকে আনন্দ দেওয়ার জন্য। এ কথাটা মনে রাখুন। তাই, যখন এটা শুধরে নিতে চাইবেন তখন হয় নিজেকে বঞ্চিত করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বা অন্য কাউকে বঞ্চিত করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। নিজের আনন্দকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে বা অন্য কারো আনন্দকে চ্যালেঞ্জ জানতে হবে। আর এটা খুবই আতংকের। কারণ ব্যাপারটা কাছের মানুষজনেক ক্ষুব্ধ করবে বা আপনি নিজেই হয়তো দুঃখ পাবেন, একাকিত্ব ফিল করবেন। সাইকোলোজিতে একটি টার্ম আছে। স্টেইং ইন এ সেইফ প্লেস। জানেন? অনেক সময় সম্পর্কটা ঝগড়াবিবাদপূর্ণ হলেও মানুষ তা ছেড়ে যায় না। কারণ, পরিবেশটা পরিচিত। অপর পক্ষের কাছ থেকে এমনকি শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হলেও পরিবর্তন আনতে চায় না, কারণ অপরিচিতের ভয়। অনিশ্চয়তার ভয়। তাওবা সহজ। "আমার কাছে খুবই খারাপ লাগে। আমি এমন অবস্থায় থাকতে চাই না।" যখন বলেন- "তাহলে পরিবর্তন আনো না কেন? পাপটি ছেড়ে দাও না কেন?" সে তখন ফিল করে "আমি পারি না। পরিবর্তন ভয়ের, উদ্বেগের।" আর আল্লাহ বলছেন মানুষ যদি আল্লাহর এবং সকল সৃষ্টির চিরস্থায়ী অভিসম্পাত থেকে বাঁচতে চায়, তাদের শুধু অন্তরে অনুশোচনা ফিল করলে হবে না, তাদেরকে নিজেদের শুধরে নিতে হবে। وَ اَصۡلَحُوۡا - এবং নিজেদের সংশোধন করে নিতে হবে। যদি তারা এটা করতে পারে فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ - "নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।" শুরুতে যে "ইন্না" অর্থাৎ "নিশ্চয়ই" শব্দটি এসেছে তা এসেছে ক্ষমার গ্যারান্টি প্রদান করতে। যখন তাওবা করেন তখন আপনি প্রথমে আল্লাহর অভিসম্পাত থেকে বের হয়ে আসেন এবং এরপর প্রবেশ করেন আল্লাহর ক্ষমা, দয়া এবং ভালোবাসার রাজ্যে। যা আমরা আয়াতে উল্লেখিত 'গাফুর এবং রহিম' নাম দুইটি থেকে বুঝতে পারি। -- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে -- 42. Ali 'Imran - Ayah 85-91 -- বায়্যিনাহ

"নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। আর কোন পূণ্য কাজ হলে আল্লাহ সেটাকে বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।" (৪ঃ৪০) আল্লাহর একটি নাম হলো "শাকুর" অর্থাৎ যিনি চরম গুণগ্রাহী। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি ভালো কাজের কদর করেন। কিয়ামতের দিন মানুষ শুধু তাদের মন্দ কাজ দেখে অবাক হবে না, তারা তাদের ভালো কাজগুলো দেখেও অবাক হয়ে যাবে— ইয়া আল্লাহ! আমার এই সামান্য সৎ কাজটাও আপনি লিখে রেখেছেন! তাই, কোনো সৎ কাজকেই ছোটো মনে করবেন না। আপনার পক্ষে যে ভালো কাজই করা সম্ভব, করুন। এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার আশা রাখুন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট