নারীদের নিজস্ব মতে রাসুল (সা.)-এর শ্রদ্ধা প্রদর্শন
এক আনসারি সাহাবির বারিরা নামের এক বাঁদি ছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম ছিল মুগিস। বারিরা স্বাধীন হওয়ার জন্য ব্যগ্র হয়ে ওঠেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি মনিবের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে ‘স্বাধীন’ চুক্তি করেন। আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) স্বাধীন হওয়ার জন্য বারিরাকে আর্থিক সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এভাবে বারিরা স্বাধীন হয়ে যান। মুগিসকে তিনি ছেড়ে দেন।
মুগিস বারিরাকে পাওয়ার জন্য কাঁদতে কাঁদতে মদিনার অলিগলিতে তাঁর পিছু পিছু ঘুরতে শুরু করলেন। কিন্তু বারিরা নির্বিকার রয়ে গেলেন। বারিরাকে পাওয়ার জন্য নিরাশ মুগিস ছুটে গেলেন নবীজি (সা.)-এর কাছে, বারিরার কাছে তাঁর জন্য সুপারিশ করার আবেদন করলেন।
নবীজি (সা.) বারিরাকে বললেন, ‘তুমি যদি তাঁর সঙ্গে ঘরসংসার করতে! সে তো তোমার স্বামী! তোমার সন্তানের পিতা!’
বারিরা নবীজি (সা.)-কে বলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন?’
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কেবল সুপারিশ করছি।’
বারিরা বললেন, ‘তাহলে তাঁকে আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই।’
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘বারিরার স্বামী ছিলেন একজন ক্রীতদাস। তাঁকে মুগিস নামে ডাকা হতো। আমি যেন এখনো তাঁকে দেখছি, তিনি বারিরার জন্য কেঁদে কেঁদে ঘুরছেন, আর তাঁর দাড়ি বেয়ে অশ্রু ঝরছে।’
নবীজি (সা.) আব্বাস (রা.)-কে বললেন, ‘আব্বাস! বারিরার প্রতি মুগিসের ভালোবাসা এবং মুগিসের প্রতি বারিরার সিরাসক্তি দেখে আপনি কি আশ্চর্য হন না?’
রাসুল (সা.) বারিরাকে বললেন, ‘তুমি যদি তার কাছে আবার ফিরে যেতে, তাহলে কতই–না ভালো হতো!’
বারিরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাকে হুকুম দিচ্ছেন?’
রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি কেবল সুপারিশ করছি।’
বারিরা বললেন, ‘তাঁকে আমার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ৫২৮৩)
==============================================================
জুমার খুতবা শুনে গাছের গুঁড়ি কেঁদেছিল
হাদিসটি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা)–এর বিবরণে পাওয়া যায়।
প্রতি শুক্রবার রাসুল (সা.) একটি গাছের নিচে দাঁড়াতেন। খুতবা দেওয়ার সময় তিনি সেই গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন। আনসারদের এক নারী এটা দেখে বলেছিলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি আপনার জন্য একটি মিম্বার-মঞ্চ তৈরি করব?’ রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘আপনারা চাইলে করতে পারেন।’
সাহাবারা রাসুল (সা.)–এর জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করলেন। সবাই অবাক হয়ে লক্ষ করল, রাসুল (সা.) জুমার খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বারে ওঠার সময় খেজুর গাছটি শিশুদের মতো কাঁদতে লাগল। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৮৪)
কোনো কোনো সাহাবা গাছের কান্নাকে গর্ভবতী উটের কান্নার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কোনো কোনো সাহাবা বর্ণনা করেছেন, গাছটি বাচ্চাদের মতো কাঁদছিল।রাসুল (সা.) তখন মিম্বার থেকে নেমে গাছটির কাছে গেলেন। গাছটিকে তিনি এমনভাবে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন, সেটি একটি শিশু। রাসুল (সা.) গাছটিকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, আর সাহাবারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন।
রাসুল (সা.) বললেন, গাছটি কাঁদার কারণ এটি আল্লাহর জিকিরের কথা স্মরণ করছে। খুতবা দেওয়ার সময় সে তা শুনত।’ রাসুল (সা.) জায়গা পরিবর্তন করে মিম্বারে খুতবা দিয়েছিলেন বলে গাছটি কষ্ট পেয়েছিল। কারণ রাসুল (সা.) আর গাছটিতে হেলান দেবেন না, এর নিচে দাঁড়িয়ে আর খুতবা দেবেন না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন