ছবর অথবা ধৈর্য

 


কুরআন থেকে আজকের শিক্ষাটি রয়েছে সূরা নাহলের শেষে। সূরা নাহলের ১২৭ নম্বর আয়াত। আল্লাহ বলেছেন, وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়াছবির, ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ, অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল, আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, ওয়াছবির। এরপর যে বাক্যাংশটি রয়েছে তা আমরা আজকে বিশ্লেষণ করবো। وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ, অর্থাৎ আপনার ছবর কোথা থেকে আসবে, আপনার ছবর কোথা থেকে আসবে, একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে আসা ছাড়া ? আয়াতের দ্বিতীয় অংশে যাওয়ার আগে, সংক্ষেপে একটা বিষয় পুনরালোচনা করে নিবো।

ছবর অথবা ধৈর্য হলো কুরআনে উল্লেখিত সর্বাধিক আলোচিত চারিত্রিক গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম। ৪০ টির উপরে আয়াতে ছবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ছবরের ধারণাটি বহুল পরিচিত, যেহেতু বহু আলোচনা এবং দারসে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। আর সমগ্র কুরআনই সবরের আলোচনায় পরিপূর্ণ। আল্লাহ সূরা বাকারায় বলেছেন, لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ - লাইসাল বিররা আন তুওয়াল্লু উজুহাকুম ক্বিবলাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব, অর্থাৎ, “পূর্বমুখী অথবা পশ্চিমমুখী হওয়াতে ধর্মপরায়ণতা নেই”। আপনি যে দিকেই মুখ ফিরান এতে তাকওয়া তৈরী হয় না। বরং যার দ্বারা তাকওয়া তৈরী হয়, এই আয়াতে সেই গুণাবলীর দীর্ঘ তালিকা দেয়া হয়েছে— যে ইমান আনে আল্লাহর উপর, ফেরেশতাদের উপর, বিচার দিবসের উপর, নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, এরপর আল্লাহ বলেছেন, وَٱلصَّـٰبِرِينَ فِى ٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلْبَأْسِ ۗ أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ - ওয়াস সবিরিনা ফিল বাসাই ওয়াদ দররাই ওয়া হিনাল বাস, উলাইকাল্লাযিনা ছদাকু, অর্থাৎ যারা সবর প্রদর্শণ করে দারিদ্রতার সময়, হতাশার সময় এবং যুদ্ধকালীন সময়। তিনটি ভিন্ন ধরণের সবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যখন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তারা সবর প্রদর্শন করে। যখন স্বাস্থ্যহীনতা এবং শোকের কারণে কষ্ট পায়, তারা সবর প্রদর্শন করে। আর যখন যুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তারা সবর প্রদর্শন করে। আল্লাহ বলেছেন, أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ - উলাইকাল্লাযিনা ছদাক্বু, অর্থাৎ এই মানুষগুলোই সত্যবাদীতার স্তরে পৌঁছে গেছে। আমরা জানি যে, সবরের ধারণাটি সমগ্র কুরআন জুড়েই বারবার উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন যে, ধর্মপরায়নতার চিহ্ন হলো সবর অবলম্বন করা। লোকমান তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الأُمُورِ - ওয়াছবির ‘আলা মা আছবাক, ইন্না যালিকা মিন ‘আযমিল উমুর, অর্থাৎ তোমার উপর যে দুর্দশা আপতিত হয়, তার জন্য ধৈর্য অবলম্বন করো, কারণ এটাই মর্যাদাশীলতার মূল কথা। إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الأُمُورِ - ইন্না যালিকা মিন ‘আযমিল উমুর। সবরের মাত্রা আপনার ইমানের অবস্থা নির্দেশ করে। আল্লাহ বলেছেন, وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ - ওয়াল্লাহু ইউহিব্বুস সবিরিন। আল্লাহ বলেছেন, وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ - ওয়াল্লাহু মা’আস সবিরিন, অর্থাৎ আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। আল্লাহ বলেছেন যে, সবর হলো সেরকম কতিপয় গুণাবলীর অন্যতম যার প্রতিদান কোনো পরিমাপ ছাড়াই দেয়া হবে। إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ - ইন্নামা ইউওয়াফফাস সবিরুনা আজরাহুম বিগইরি হিসাব, অর্থাৎ যারা ধৈর্যশীল, তাদের প্রতিদান দেয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়া। অনেক সময় আমরা এই বাক্যাংশটি নিয়ে চিন্তা করি না। কারণ সাধারণ অবস্থায় আমাদের কৃতকর্মের জন্য প্রতিদান দেয়া হবে ১০ থেকে ৭০০ গুণের মথ্যে। আমি যদি আন্তরিকতার সহিত ১ টাকা দান করি, সর্বনিম্ন যে প্রতিদান আমি পাবো তা হলো ১০ টাকা। আর সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা। এটা নির্ভর করবে আমার পরিস্থিতি এবং আন্তরিকতার উপর। ধনী ব্যক্তির ১ টাকা দান করা আর দরিদ্র ব্যক্তির ১ টাকা দান করা সমান নয়। তো এটা হবে ১০ থেকে ৭০০ এর মধ্যে। আমি একটি আয়াত পাঠ করলে, এর জন্য আমি ১০ আয়াতের সমান প্রতিদান পাবো। আমি একটি অক্ষর পাঠ করলে, এর জন্য ১০টি অক্ষরের সমান প্রতিদান পাবো। এক রাকাতের জন্য ১০ রাকাত, রমজান মাসে তা ৭০০ রাকাত। কিন্তু এটা সবসময়ই ১০ থেকে ৭০০ গুণের সমীকরণে আবদ্ধ। কোনটা সমীকরণের উর্ধে ? إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ - ইন্নামা ইউওয়াফফাস সবিরুনা আজরাহুম বিগইরি হিসাব। আল্লাহ বলছেন, এক্ষেত্রে আমি গণনা করবো না। এখানে কোনো সমীকরণ থাকবে না - ১০ গুণ, ৫০ গুণ অথবা ১০০ গুণও না। ধৈর্যশীলদের প্রতিদান হলো, بِغَيْرِ حِسَابٍ - বিগইরি হিসাব। আর সেজন্যই আপনি যদি সবরের অধিকারী হন, আপনি জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরটি অর্জন করবেন। আল্লাহ গুরাফের কথা উল্লেখ করেছেন। গুরাফ হলো জান্নাতের ভি.আই.পি. এলাকা। গুরাফ হলো জান্নাতের অভিজাত এলাকা। গুরাফ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর। জান্নাতের সেই গুরাফের অধিকারী কে হবেন ? وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ - ওয়াল মালাইকাতু ইয়াদখুলুনা ‘আলাইহি মিন কুল্লি বাব, সালামুন ‘আলাইকুম বিমা ছবারতুম ফানি’মা ‘উকবাদ্দার, অর্থাৎ ফেরেশতারা বলবে, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা সবর অবলম্বন করতে। আপনি গুরাফ অর্জন করতে চান ? তাহলে আপনাকে সবর প্রদর্শন করতে হবে। তো জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরটি প্রদান করা হবে তাঁদেরকে যারা সবরের অধিকারী। প্রকৃতপক্ষে এই পৃথিবীতেও নেতৃত্বের সর্বোচ্চ অবস্থানটি তাদেরকে প্রদান করা হয় যারা সবরের অধিকারী। আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, جَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً لَمَّا صَبَرُوا - জা’আলনা মিনহুম আইম্মাতান লিমা ছবারু, অর্থাৎ আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা বানিয়েছি, যখন তারা ধৈর্য অবলম্বন করেছে। ইবনুল ক্বইয়্যিম বলেছেন, إِنِّمَا تُنَالُ الْإِمَامَةُ بِالدِّيْن بِالصِّبْرِ وَالْيَقِيْنِ - ইন্নামা তুনালুল ইমামাতু বিদ্দিন বিসসবরি ওয়াল ইয়াক্বীন, অর্থাৎ আপনি আইম্মাহ হতে পারবেন, এখানে আইম্মাহ অর্থ নেতা, আপনি নেতা হতে পারবেন যখন আপনি ধৈর্য এবং আন্তরিকতা প্রদর্শন করবেন। এভাবে সবরের সুফল বর্ণনা চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে। এটা ইমানেরই বাস্তবতা। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন, اَلصَّبْرُ ضِياءٌ - আসসবরু দিয়াউন, অর্থাৎ ধৈর্যশীলতা হলো আলো। তিনি ধৈর্যকে ইমানের মেরুদন্ডও বলেছেন। এই বিষয়গুলো আমরা জানলাম। কিন্তু সবর আসলে কী ? সবর আসলে কী ? সবর মানে, যখন আপনার উপর কোনো দুর্যোগ আপতিত হয়, তখন আপনি আপনার জিহ্বা এবং অঙ্গগুলোকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখেন যা আল্লাহর দৃষ্টিতে মানাসসই। সবরের সাথে হৃদয়ের যন্ত্রণার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার সবর থাকতে পারে, আর একইসাথে আপনার হৃদয়ে প্রবল রক্তক্ষরণও হতে পারে। এটা সবরের পরিপন্থি নয়। সবরের সাথে মনকষ্টের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার সবর থাকতে পারে, একইসাথে আপনি হয়তো দুঃখে ভারাক্রান্তও হতে পারেন। সবরের সাথে কান্নার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার সবর থাকতে পারে, একইসাথে আপনি কান্নাও করেত পারেন। তবে সবর অর্থ, আপনার জিহ্বা শুধু সেই কথাই বলবে যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। সবর অর্থ আপনার দেহ এমন অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ করবে, দুর্যোগ অবস্থায় যে আচরণটা যথাযথ। আপনি এমন কিছু করবেন না যা যথাযথ না, মানানসই না। আপনি এমন কিছু বলবেন না বা করবেন না যা শরীয়াতের বিরুদ্ধে যায়। মনস্তাত্ত্বিকভাবে সবর হলো, যখন খারাপ কিছু ঘটে যায়, আপনি এই বাস্তবতাকে আল্লাহর পুরষ্কারের সাথে সম্পর্কযুক্ত করবেন। তখন আপনার মন ভিন্ন এক জগতে চলে যাবে। আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা পুরষ্কারের কথা চিন্তা করতে থাকবেন। যখন আল্লাহকে নিয়ে আসবেন, তখন আকস্মিকভাবেই ভিন্নভাবে ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ করতে শুরু করবেন, এবং ভিন্ন আচরণ করতে শুরু করবেন। তো সবর দাবী করে একটি নির্দিষ্ট স্তরের ইমান এবং তাক্বওয়া। সবর দাবী করে আল্লাহর সাথে বিশেষ একটা সম্পর্ক যা আপনাকে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করে। আর সেজন্যই আল্লাহ বলেছেন, وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ - ওয়াসতা’ইনু বিসসবরি ওয়াস সলাহ। ওয়াসতা’ইনু অর্থ, যখন আপনি দুর্দশার মধ্যে থাকেন, যখন জীবন দুর্বিসহ হয়ে যায়, তখন কিভাবে আপনি জীবনকে সহজ করবেন ? وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ - ওয়াসতা’ইনু বিসসবরি ওয়াস সলাহ। সবর এবং সলাতের মাধ্যমে আপনি প্রশান্তি খুঁজে পাবেন। সবর এবং সলাতের মাধ্যমে কঠিন সময় সহজ হয়ে যাবে। আমাদর সকলেরই দুঃখ-কষ্ট রয়েছে। আমাদের সকলেরই এমন বিষয় রয়েছে যা হৃদয়ে যন্ত্রণা এবং দুশ্চিন্তা নিয়ে আসে। আমরা সকলেই অন্তর্নিহিত যন্ত্রণায় ভুগে থাকি। কিভাবে আমরা সেই যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসবো ? وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ - ওয়াসতা’ইনু বিসসবরি ওয়াস সলাহ। সবকিছুই ঠিক আছে; কিন্তু এখন আমরা একটি প্রশ্ন দিয়ে আলোচনার সমাপ্তি টানবো। কিভাবে সবর অর্জন করা যাবে ? কিভাবে আমরা সবর অর্জন করবো ? যখন একটি দুর্দশা নেমে আসে, হয়তো আমরা এর জন্য প্রস্তুত থাকবো না। আমার এক আত্মীয়া বড়ো একটি দুরবস্থার শিকার হয়েছিলেন, তাঁর পরিবারের এক সদস্য হঠাৎ মারা গেলেন। তাঁর ধারণাই ছিলো না যে এমনটা ঘটবে। আমি সান্ত্বনা দিতে তাঁর সাথে কথা বলছিলাম। আর তিনি বললেন, “আমি কখনো আশা করিনি যে এমন কিছু ঘটে যাবে। আমি এই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমার কাঙ্ক্ষিত সবর নেই”— আক্ষরিকভাবেই তিনি একথা বলেছিলেন। তিনি বললেন, “এই ধরণের সবরের জন্য আমার কোনো প্রস্তুতি ছিলো না”। আমি তাঁকে বলেছিলাম, সবর এমন কিছু না যার জন্য আপনি প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আর আমি এই আয়াতটি উল্লেখ করেছিলাম, وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়াছবির, ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ। সবর কোথা থেকে আসে ? সবর আসে সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে। সবর আসে আল্লাহর কাছে থেকে। আর যখনই এর প্রয়োজন হবে, আপনার শুধু যা করতে হবে তা হলো, আপনাকে আল্লাহর মুখাপেক্ষি হতে হবে। তখন আল্লাহ আপনাকে সেই সবর প্রদান করবেন। এই বিষয়ে চমৎকার একটি হাদিস রয়েছে। হাদীসটি বুখারী এবং মুসলিম শরীফে রয়েছে। রাসূল (স) বলেছেন, ومَن يَتَصبَّرْ يُصَبِّرْه اللهُ - ওয়ামান ইয়াতাছব্বার ইউসব্বিরহুল্লাহ, অর্থাৎ যে আন্তরিকভাবে সবর অর্জনের আকাঙ্ক্ষা করে, যে সবর লাভের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে, সহজ বাংলায় বলতে গেলে, যে আসলেই সবর অর্জন করতে চায়, يُصَبِّرْه اللهُ - ইউসব্বিরহুল্লাহ - আল্লাহ তাকে সেই সবর প্রদান করবেন। আমি চাই যে আপনার মন-মানসে এই কথাটি গেঁথে যাক। সবর সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা একটি উপহার। وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়াছবির, ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ। এমনকি রাসূল (স) - কেও বলা হয়েছিলো, আল্লাহ ছাড়া কোথা থেকে আপনি সবর পাবেন ? ইয়া রসূলাল্লাহ, আমি আপনাকে সবর অবলম্বন করতে বলছি, আর আমিই আপনাকে সেই সবর প্রদান করবো যা আপনার প্রয়োজন। وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়াছবির, ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ।এর পরে যখন আপনি দুর্দশায় পতিত হবেন, এর পরে যখন আপনি দুর্যোগের শিকার হবেন, এটা চিন্তা করবেন না যে, আমার তো সবর নেই; এটা চিন্তা করবেন না যে, আমার তো যোগ্যতা নেই, এটা আমার সামর্থের বাইরে। বরং এটা উপলব্ধি করুন যে, যিনি আপনাকে এই পরিস্থতিতে রেখেছেন, তিনিই সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায়ও দিয়ে দিবেন। আপনাকে শুধু যা করতে হবে তা হলো, তাঁর কাছেই চাইতে হবে যা আপনার প্রয়োজন। আপনি আল্লাহর মুখাপেক্ষি হোন এবং বলুন, ইয়া রব, আমার সবর প্রয়োজন। ইয়া রব, আমাকে সেই সবর প্রদান করুন যা আমার প্রয়োজন। ইয়া রব, আপনি তো সবুর (صَبُوْر), আপনিই সেই সত্ত্বা যিনি সবর প্রদান করেন। ইয়া রব, আপনিই শুধু সবর প্রদান করতে পারেন। وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়াছবির, ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ। তাই উপলব্ধি করুন, সবর আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আর কিভাবে আমরা তা পাবো ? আপনাকে শুধুমাত্র যা করতে হবে, তা হলো এর জন্য আকাঙ্ক্ষা করুন। আক্ষরিকভাবেই, এর জন্য আকাঙ্ক্ষা করুন। শুধু আপনার হৃদয়ে আকাঙ্ক্ষা করুন, হৃদয় দিয়ে কামনা করুন। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, ইয়া রব, আমার সবর প্রয়োজন। আর আপনি যদি তা করেন, কুরআন আমাদেরকে বলছে, আপনার কাছে সবর আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে। সংক্ষেপে সবরের তিনটি শ্রেণীবিভাগ উল্লেখ করছি। اَلصَّبْرُ بِالله ، اَلصَّبْرُ لِلَّه ، اَلصَّبْرُ فِى اللهِ وَمَعَ الله - আসসবরু বিল্লাহ, আসসবরু লিল্লাহ, আসসবরু ফিল্লাহি ওয়া মা’আল্লাহ। আসসবরু বিল্লাহ হলো সর্বনিম্ন স্তর, যেখান থেকে এটা শুরু হয়। وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়াছবির, ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ। আপনি সবরের জন্য আল্লাহর মুখাপেক্ষি হবেন। যখন আপনি নিয়মিত এরকম করতে থাকবেন, তখন উপরের স্তরের সবরে উন্নীত হবেন। وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ - ওয়ালিরব্বিকা ফাসবির। আপনি এই পর্যায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানের প্রত্যাশা করবেন। আপনার সবর হবে আল্লাহরই জন্য। আসসবরু বিল্লাহর ক্ষেত্রে আপনি সবরের জন্য আল্লাহর সাহায্য পাবেন। আসসবরু লিল্লাহর ক্ষেত্রে আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সেই ধৈর্য, বিজয় এবং প্রতিদানের প্রত্যাশা করবেন। আর তারপর রয়েছে সর্বোচ্চ স্তর। اَلصَّبْرُ فِى اللهِ وَمَعَ الله - আসসবরু ফিল্লাহি ওয়া মা’আল্লাহ। إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ - ইন্নাল্লাহা মা’আস সবিরিন। তখন আপনি আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করবেন। আপনি অনুভব করবেন যে আল্লাহর অপার করুণা আপনার উপর নেমে আসছে। এটাই সর্বোচ্চ স্তর। কিন্তু আপনি তখনই এটা অর্জন করতে পারবেন যদি এই প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করেন - وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ - ওয়াছবির, ওয়ামা ছবরুকা ইল্লা বিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে সবর দান করুন এবং সবরকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [ ১.আসসবরু বিল্লাহ—আল্লাহর কাছে সবর চাইবেন। সবর আসবে আল্লাহর কাছ থেকে। ২.আসসবরু লিল্লাহ—এই সবরের জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করবেন। সবর আল্লাহর জন্য। ৩.আসসবরু ফিল্লাহি ওয়া মা’আল্লাহ—সবর প্রদর্শনের সময় আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করবেন। আপনি অনুভব করবেন যে আল্লাহর অপার করুণা আপনার উপর নেমে আসছে। ] —ইয়াসির কাদি

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট