কুরআনে বর্ণিত সবচেয়ে বিস্তারিত ঘটনা


 কুরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলো নিয়ে আমি কিছু কথা বলতে চাই। এ ক্ষেত্রে একটি ব্যাপার লক্ষ্য করবেন যে, একই ঘটনা বিভিন্ন সূরাতে বার বার এসেছে। শুধু ইউসুফ (আ) এর ঘটনা ব্যতীত কোনো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা এক স্থানে উপস্থাপন করা হয়নি।

অর্থাৎ, ইউসুফ (আ) এর সম্পূর্ণ ঘটনা একটি সূরাতে একত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। কোন সূরাতে? সূরা ইউসুফে। কিন্তু, মূসা (আ) এর ঘটনা এভাবে এক সূরায় একত্রে বর্ণনা করা হয়নি। তাঁর ঘটনা বিভিন্ন সূরাতে বিভিন্নভাবে এসেছে। বনী ইসরাইলের সকল ঘটনাও এক সূরাতে একত্রে তুলে ধরা হয়নি। ইব্রাহিম (আ) এর ঘটনাও এক স্থানে আসেনি। আদম (আ) এর ঘটনাও সমগ্র কুরআন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এসেছে এবং পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। তাহলে এখানে দুইটি ইস্যু। এক, ঘটনাগুলো কুরআনের বেশ কয়েক জায়গাতে এসেছে। দুই, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বা ঘটনার কিছু অংশ কয়েকবার তুলে ধরা হয়েছে। এখন, কেউ প্রথম প্রথম কুরআন পড়তে এলে তার মনে প্রশ্ন জাগ্রত হয়, এই রিপিটিশনের কারণ কী? ঘটনাগুলো এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বর্ণনা করার কারণ কী? কেন মূসা (আ) এর সকল ঘটনা এক সূরাতে একত্রে বর্ণনা করা হয়নি? সূরাটির নাম দেওয়া যেত সূরা মূসা। এভাবে আসেনি। কেন? কুরআনের প্রায় সত্তর জায়গায় মূসা (আ) এর ঘটনা এসেছে। কুরআন পড়তে গেলে বার বার মূসা (আ) এর ঘটনা সামনে এসে পড়ে। এখন প্রশ্ন হলো কুরআনের সূরাগুলোকে কিভাবে সাজানো হয়েছে? এটা নিয়েই আমি মূলত কথা বলতে চাই। এভাবে চিন্তা করুন। কুরআনের প্রতিটি সূরা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাঠের সমষ্টি। আর সবগুলো পাঠ একটি আরেকটির সাথে এক ধরণের বন্ধনে আবদ্ধ। তো, একটি সূরা একটি থিসিসের মত। ভার্সিটির একটি কোর্সের মতো। অনেক সময় আমরা একটি আয়াত এক সূরা থেকে পড়ি অন্য আরেকটি আয়াত অন্য আরেকটি সূরা থেকে পড়ি। কুরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলোকেও বিভিন্ন জায়গা থেকে একত্র করে পড়ি। অন্য কথায়, সূরার সীমানা থেকে বেরিয়ে আমরা বিষয়গুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে অধ্যয়ন করি। কিন্তু একটি সূরা আসলে একটি সমন্বিত সমগ্র। এর সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য আছে। এর হয়তো অনেকগুলো শিক্ষা আছে। কিন্তু শিক্ষাগুলো একটি বৃহৎ ধারণার দিকে নির্দেশ করে। কখনো সাপোর্টিং এভিডেন্সের কথা শুনেছেন? সমর্থনকারী প্রমাণের কথা? কুরআনের ঘটনাগুলো শুধু ঘটনা বলার জন্য উল্লেখ করা হয়নি। কোনো সূরাতে যে শিক্ষাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে ঐ শিক্ষাগুলোর সমর্থনেই কেবল ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি সূরার সুনির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা রয়েছে। ঐ শিক্ষাগুলোর সমর্থনেই কেবল কোনো ঘটনা বা ঘটনার অংশ বিশেষ উল্লেখ করা হয়। ঘটনার অন্য কোনো অংশ সূরাটিতে উল্লেখ করা হয় না। তাই, কুরআনের সন তারিখ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। ঘটনাগুলো কোথায় সংঘটিত হয়েছে সেসব স্থানের বিস্তারিত বর্ণনাও কুরআনে পাওয়া যায় না। কুরআনে বর্ণিত সবচেয়ে বিস্তারিত ঘটনা হলো ইউসুফ (আ) এর ঘটনা। কিন্তু, এখানে কি ইউসুফ (আ) এর ভাইদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে? বা মন্ত্রীর নাম? ইউসুফ (আ) এর মায়ের নাম কি উল্লেখ করা হয়েছে? মন্ত্রীর স্ত্রীর নামও কি এসেছে? সমগ্র সূরাতে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট মাত্র দুইটি নাম এসেছে। কার কার নাম? ইউসুফ এবং ইয়াকুব (আ) এর নাম। কেন উল্লেখ করা হয়নি? কারণ, এসব বিস্তারিত জানানো ঘটনাটির উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্যটা আরও বড় কিছু। তাই, যা কিছু বড় উদ্দেশ্য শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় তা বাদ দেওয়া হয়েছে। আপনারা হয়তো ভাবছেন সুরা ইউসুফের মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদেরকে ঘটনাটা শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু, আসলে ঘটনাটা মূল উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো রাসূলুল্লাহ (স) এর সিরাত। জানতেন এটা? সমগ্র সূরাটি রাসূলুল্লাহ (স) এর জীবনী নিয়ে। সূরা ইউসুফ এবং রাসূলুল্লাহ (স) এর জীবনীর মাঝে অসাধারণ সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সূরাটি নাজিল হয় রাসূলের দুঃখের বছর। আর সূরাটি হলো ইউসুফ (আ) এবং তাঁর পিতার দুঃখ নিয়ে। ইউসুফ (আ) এর ভাইয়েরা তাঁকে নির্যাতন করেছিলো। আর রাসূলের স্বগোত্রের লোকজন তাঁকে নির্যাতন করেছিলো। ইউসুফ (আ) কে একটি কুয়ায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আর রাসূলুল্লাহ (স) কেও শিয়াবে আবু তালিব নামক গিরি সংকটে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। ইউসুফ (আ) পরিশেষে তাঁর বাবা ইয়াকুবের ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করেন। রাসূলুল্লাহ (স)ও পরিশেষে তাঁর পিতা ইব্রাহীমের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনেন। ইউসুফ (আ) তাঁর ভাইদের বললেন- لَا تَثۡرِیۡبَ عَلَیۡکُمُ الۡیَوۡمَ - আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনই অভিযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (স)ও মক্কা বিজয়ের পর কুরাইশদের একই কথা বললেন। উভয় রাসূলের ঘটনার মাঝে খুবই অসাধারণ সব সাদৃশ্য পাওয়া যায়!! - নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে