যারা শিশু সন্তান হারিয়েছেন

 


যারা শিশু সন্তান হারিয়েছেন তাদের জন্য খুবই সান্ত্বনাদায়ক হাদিস

----------------------- * ----------------------- শেষ বিচারের দিন শিশুদের শাফায়াত করার অধিকার থাকবে। যারা শৈশবে মারা গেছে। আর তাদের মাতা-পিতারা সে সময় ধৈর্য ধারণ করেছে। এসব শিশুদের শেষ বিচারের দিন শাফায়াত করার অধিকার দেওয়া হবে। আর অবশ্যই তারা তাদের পিতা-মাতার জন্য শাফায়াত করবে। এ সম্পর্কে বহু হাদিস আছে। তার মধ্যে মুসলিম শরীফের বিখ্যাত একটি হাদিস। রাসূলুল্লাহ (স) মহিলাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। প্রসঙ্গত: এটা রাসূলুল্লাহ (স) এর সুন্নাহ ছিল, তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্যে নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করতেন। বুখারী শরীফের একটি হাদিসে বর্ণিত আছে। মহিলারা রাসূলুল্লাহ (স) এর নিকট অভিযোগ করে বলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষেরা সব সময় আপনাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পায়। আমাদের সময় হয় না। অতঃপর তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার মহিলাদের জন্য সময় নির্ধারণ করেন। (আমার এটা বলা উচিত না। আমি বোনদের জন্য মাসে একবার সময় প্রদান করি। তিনি করেছিলেন সপ্তাহে একবার। তিনি তো ছিলেন আল্লাহর রাসূল। তাঁর মাকাম আমাদের সবার চেয়ে উচ্চে। আমার পক্ষে সপ্তাহে একবার করা সম্ভব না।) যাইহউক, তিনি সবসময় সপ্তাহে একবার শুধু মহিলাদের জন্য প্রোগ্রাম করতেন। এই রকম একটি প্রোগ্রামে তিনি বলেন- "তোমাদের মধ্যে যে নারীই তিনটি শিশু সন্তান হারিয়েছে এবং এমতাবস্থায় সে ধৈর্য ধারণ করেছে, অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" এখানে একটু থামি। তিন সন্তান!! মানে কি? ইতিহাসের ঐ সময়কালে শিশু মৃত্যুর হার ছিল অত্যন্ত বেশি। আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি যে ঐ সময়টা পার হয়ে গেছে। আমি এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত অনুসন্ধান চালিয়েছি। খুঁজে পেলাম, এক দল গবেষক মধ্য যুগের ইউরোপে তথা ১৪শ থেকে ১৬শ সালের ইউরোপে শিশু মৃত্যুর হার নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছেন। তারা উদঘাটন করেছেন যে, তখনকার ইউরোপে দুই বছর বয়সের পূর্বেই প্রতি চারজন শিশুর একজন মারা যেত। আর পনের বছর বয়সে পৌঁছার পূর্বেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর মৃত্যু ঘটতো। চিন্তা করে দেখুন। এটা ছিল মধ্য যুগের ইউরোপ। পাঁচশ বছর পূর্বে। আর রাসূলুল্লাহ (স) এর সময়কালের আরবে এ সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। আপনাদের দাদা-দাদীদের গল্প থেকেও আপনারা জেনে থাকবেন। আমার দাদীও আমাকে বলেছে, শিশু মৃত্যু তাদের সময়েও খুবই কমন একটা ব্যাপার ছিল। তো, তিন সন্তান হারানো সে সময় বিরল কোনো ঘটনা ছিল না। এরপর একজন মহিলা সাহাবী জিজ্ঞেস করলো- যদি দুইজন মারা যায়? রাসূল (স) বললেন, এমনকি দুইজন মারা গেলেও। আমরা এখান থেকে বলতে পারি- সে সময়ের দুইজন আর আমাদের সময়ে একজন মারা গেলেও এটা বিশাল শোকের ব্যাপার। শিশু মৃত্যুর হার এখন এক শতাংশেরও কম। আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি। এটি আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম বড় একটি অর্জন। যে দ্রুত গতিতে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে এটা আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম বড় একটি অর্জন। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। আলহামদুলিল্লাহ। তাই, শিশু মৃত্যু এখন খুবই বিরল ঘটনা। যদিও একশ দুইশ বছর আগেও এটা সাধারণ ঘটনা ছিল। যারা সন্তান হারিয়েছেন কেবল তারা জানেন এটা কতটা কষ্টের! মানুষের অভিজ্ঞতায় এর চেয়ে কষ্টের কোনো বিষয় নেই। নিজের সন্তানকে কবর দেয়ার কষ্টের চেয়ে কঠিন কোনো কষ্ট নেই। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে এর থেকে রক্ষা করুন। আমরা এখান থেকে বলতে পারি, ইনশাআল্লাহ, একজন মারা গেলেও। বস্তুতঃ এক জনের জন্যেও প্রমাণ রয়েছে। মুসলিম শরীফের হাদিস। এক ব্যক্তি আবু হুরায়রা (রা) এর কাছে এসে বলল, ‘আমার সন্তান মারা গিয়েছে। (এক বর্ণনায় এক সন্তান আর অন্য বর্ণনায় দুই সন্তানের কথা এসেছে) "আপনি কি রাসুল (স) থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমার অন্তর সান্ত্বনা পায়?" এটি মানব প্রকৃতির অংশ। মানুষ শোকাহত সময় কাটানোর সময় অনুপ্রেরণামূলক কিছু শুনতে চায়। তিনি আবু হুরায়রা (রা) এর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি কি আমাকে এমন কিছু শুনাতে পারেন যা আমার অন্তরকে শান্ত করবে? আবু হুরায়রা (রা) বললেন, তোমার সন্তানেরা 'دَعَامِيصُ الْجَنَّةِ -(দাআমিসুল জান্নাহ)। দাআমিস মানে বাচ্চা ঘোড়া। তাদের কেন বাচ্চা ঘোড়া বলা হচ্ছে? এখানে বাচ্চা ঘোড়ার ধারণাটা হলো- তৎকালীন আরব সমাজে বাচ্চা ঘোড়া ছিল সবার অত্যন্ত আদরের পাত্র। বাচ্চা ঘোড়াটি যেখানে যেতো মানুষ তাকে আহার করাতো, আদর করতো, ভালবাসত। মানুষের মন অত্যন্ত নরম ছিল বাচ্চা ঘোড়ার প্রতি। কারণ, তারা চাইত এটি বড় হউক। তৎকালীন বাজারে ঘোড়া ছিল অতি মূল্যবান এক পণ্য। তাই, সমগ্র সমাজে ঘোড়ার বাচ্চাটার দারুণ কদর ছিল। তো, আবু হুরায়রা (রা) বললেন, তোমার সন্তান হবে জান্নাতের বাচ্চা ঘোড়ার মত। সে চরম আদর আহ্লাদে থাকবে। সে তোমার জামা ধরবে… (আবু হুরায়রা ঐ লোকের জামা ধরলেন) যেভাবে আমি তোমার জামা ধরে আছি, এবং সে বলবে, আমি ছাড়ব না যতক্ষণ না আমি আপনাকে সাথে করে জান্নাতে প্রবেশ করছি। এখন একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন। আবু হুরায়রা (রা) এ কথা বলছেন। কিন্তু, তিনি তো নিজের মন থেকে এ কথা বলতে পারেন না। অতএব, তিনি অবশ্যই এ তথ্য রাসূলুল্লাহ (স) এর কাছ থেকে জেনে থাকবেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে এটি রাসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণিত একটি মারফু হাদিস। এ বিষয়ে মুসনাদে ইমাম আহমাদে খুব সুন্দর আরেকটি হাদিস আছে। হাদিসটি বলছে, শেষ বিচারের দিন শিশুদের বলা হবে জান্নাতে প্রবেশ কর। শিশুরা বলবে, না। যতক্ষণ না আমাদের পিতা-মাতাও আমাদের সাথে প্রবেশ করে। তখন ফেরেশতারা আসবে... মনে হচ্ছে, শিশুরা এ সংবাদটা শুনবে। ফেরেশতারা আসবে এবং আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা শিশুদের বলবেন, "উদখুলুল জান্নাহ।" কিন্তু বাচ্চারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এবং তারা বলবে, না। যতক্ষণ না আমাদের মাতা-পিতারাও আমাদের সাথে আসেন। তখন তাদের জিজ্ঞেস করা হবে, কেন শিশুরা...আরবি শব্দটি হল মুহবানতিইন। আমি কৌতূহলী এখানে উপস্থিত কোনো আরব কি জানেন মুহবানতিইন মানে কী? মূল শব্দ হলো 'ইহবানতআ'। কোনো আরব কি এ শব্দটি আগে কখনো শুনেছেন? আমার নিজেকেই এর অর্থ খুঁজতে হয়েছিল। সত্যি বলছি। আমি হাদিসটি পড়ার সময়...কি? মুহবানতিইন!! মুহবানতিইন মানে কী? হা নুন বা ত হামযা ইয়া নুন। আমাকে 'লিসানুল আরব' ডিকশনারিতে এর অর্থ খুঁজতে হয়েছিল। "ইহবানতআ, ইয়াহবানতিয়ু, ফাহুয়া মুহবানতিহ।" শব্দটি দেখে অবাক হলাম। এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, তারা রাগে লাল হয়ে যাবে এবং রাগের দৃষ্টিতে তাকাবে। অর্থটা দেখে আমি হেসে দিলাম। কারণ, আমার চার সন্তান আছে। দুই-চার বছর বয়সে যদি তারা কোনো কিছু নিয়ে রাগ করে তখন তারা কী করে? (শ্রোতাদের একজন অভিনয় করে দেখালো) ঠিক। ঠিক এরকম করে। শব্দটি বাচ্চাদের বর্ণনা দিচ্ছে, যখন তারা খুব রাগ দেখায়। আক্ষরিক অর্থে। এটি খুবই বিরল একটি শব্দ। তারা রাগে ফুঁসতে থাকবে এবং রাগে লাল হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ শিশুদের বলবেন, কেন তোমরা মুহবানতিইন? কেন তোমরা এতো রেগে আছ? তারা বলবে, আমরা আমাদের বাবা-মাকে চাই। আমরা আমাদের সাথে তাদেরকে চাই। আমরা একা একা জান্নাতে থাকতে চাই না। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেবন, উদখুলুল জান্নাতা আনতুম ওয়া আবায়ুকুম। তোমরা তোমাদের পিতা-মাতাদের নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! - ড. ইয়াসির কাদি

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে