নারীদের জন্য ইসলামই সবচেয়ে সুন্দর জীবন বিধান।

 


নারীদের জন্য ইসলামই সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে নিরাপদ জীবন বিধান।

স্বামী স্ত্রী উভয়ে যদি উত্তীর্ণ হয়ে আসতে পারে তাহলে উভয়ে একত্রে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন- اُدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ اَنۡتُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ تُحۡبَرُوۡنَ - "তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর।" (৪৩:৭০) আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কয়েকবার উল্লেখ করেছেন যে, দম্পতিরা একত্রে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দম্পতিরা জান্নাতে একত্রে বসে হাসি আনন্দে মেতে থাকবে। দম্পতিরা একত্রে বিভিন্ন ধরণের পানীয় পান করবে। দম্পতিরা একত্রে ছায়ায় এবং মূল্যবান আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। এরপর বলা হলো تُحۡبَرُوۡنَ - 'তুহবারুন।' 'তুহবারুন' মানে তোমরা একত্রে সুখী হবে। আনন্দিত হবে। তোমরা জান্নাতে পরস্পর পরস্পরকে সুখী করবে। সুবহানাল্লাহ! এই পৃথিবীতে অনেক সময় বিয়ে সুখের হয় না। হয়তো দুজনেই ধার্মিক। তবু দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না। কিন্তু উভয়ে যদি জান্নাতে যেতে পারেন আপনারা সেখানে সুখী হবেন। আপনাদের যাদের বিয়েতে সুখ নেই....প্রসঙ্গত একটি কথা বলে রাখি- দুনিয়ার কোনো বিয়েই পুরোপুরি আনন্দের নয়। ব্যাপারটা হলো ইনশাল্লাহ, আমাদের ভালো দিক বেশি। ভালো মুহূর্ত বেশি, খারাপ মুহূর্তের চেয়েও। কোনো বিয়েই ইস্যু ছাড়া নেই। কোনো না কোনো ইস্যু থাকবেই। ঝগড়াবিহীন নিখুঁত ভালোবাসার জীবন হবে জান্নাতে। তাই যদি এই দুনিয়াতে আপনার পার্টনারের সাথে পুরোপুরি মানিয়ে চলতে না পারেন, চিন্তা করবেন না, যদি উভয়ে ধার্মিক হয়ে থাকেন এবং বিয়ের বন্ধনে যুক্ত থাকেন, আল্লাহ বলছেন- 'উদখুলুল জান্নাতা আনতুম ওয়া আজওয়াজুকুম তুহবারুন।' তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীগণ জান্নাতে প্রবেশ কর একত্রে সুখে থাকার জন্য। দুনিয়ার রূপকথার গল্পে আমরা পড়ে থাকি, এরপর দুইজন সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলো। দুনিয়াতে এটা রূপকথা। যা কখনো ঘটে না। কিন্তু জান্নাতে এটি বাস্তবতা। আপনার স্বামী/স্ত্রী আপনার সুখের উৎসে পরিণত হবে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আপনার স্ত্রীকে পুনরায় নতুন করে সৃষ্টি করবেন। এটা সূরা ওয়াকিয়ায় পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন- اِنَّاۤ اَنۡشَاۡنٰهُنَّ اِنۡشَآءً - "তাদেরকে আমি সৃষ্টি করবো এক অভিনব সৃষ্টিতে।" এরপর কী করবো? فَجَعَلۡنٰهُنَّ اَبۡکَارًا - عُرُبًا اَتۡرَابًا - "অতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়সী।" 'উরুবান' অর্থ: সোহাগিনী, ভালোবাসায় পূর্ণ। দুনিয়ার বিয়ে কখনো কখনো ভালোবাসা নির্ভর হয় না। মাঝে মাঝে কটু কথা শুনতে হয়। কঠোরতা দেখা যায়। কিন্তু, জান্নাতের পার্টনার হবে উরুব। অর্থাৎ, স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের জন্য থাকবে নিখুঁত ভালোবাসা। এবং তাদেরকে পুনরায় নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করা হবে। 'আতরাবা' মানে সমবয়সী। জান্নাতে সবার বয়স হবে ৩৩। আমি এভাবে উদাহরণ দিয়ে থাকি। আপনারা যারা বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগের এক সপ্তাহ...আচ্ছা বিয়ের পরের এক সপ্তাহও যোগ করে দিলাম। ওই সময়টা। শুধু ঐ সময়টার কথা মনে হলেই মুখে লাজুক হাসি ফুটে উঠে। তখন থাকে এন্টিসিপেশন, থাকে প্রবল আগ্রহ। স্ত্রী এমনকি চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জ্বা পায়। কেউ স্ত্রীর নাম নিলেই স্বামীর মুখে লজ্জ্বাজনক হাসি ফুটে উঠে। আবার স্ত্রীর সামনে কেউ স্বামীর নাম নিলে সেও লজ্জ্বায় মুখ নামিয়ে নেয়। মানুষটাকে আবিষ্কার করার অদ্ভুত ধরণের প্রবল একটা টান মনের মাঝে সবসময় কাজ করে। এক ধরণের মোহাচ্ছন্নতায় মনটা কেমন ভেসে বেড়ায়। ১০-১৫ বছর পার হওয়ার পর...স্ত্রীর সামনে কেউ স্বামীর নাম নিলো। "ওয়াক থু! আমি খেতে বসেছি।" হা হা হা। এন্টিসিপেশন হারিয়ে যায়। প্রবল আগ্রহের সেই প্রতীক্ষাটা হারিয়ে যায়। তাই না? সুরাতুর রাহমানে আল্লাহ বলেন--কাসিরাতুর তারফি...আপনি জান্নাতে যখন আপনার স্ত্রীর দিকে তাকাবেন সে লজ্জ্বায় চোখ নামিয়ে নিবে। আনতনয়না। কারণ, দৃষ্টি সংযোগ করতে সে লজ্জ্বা পায়। বিয়ের বিশ বছর পরে স্ত্রী কি এমনটি করে? না। আপনার বাবা-মা কি এমনটি করে এখন? না। করে না। কিন্তু নববিবাহিতরা কি এমনটি করে? হ্যাঁ করে। আল্লাহ জান্নাতে এটাকে চিরস্থায়ী করে দিবেন। জান্নাতে আপনার বিয়ের প্রতিটি দিন হবে যেন বিয়ের প্রথম দিন। ব্যাপারটা মাথা নষ্ট করার মত! অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়! দুনিয়াতে এটা অসম্ভব। কুরআনে অঙ্কিত জান্নাতের চিত্রটা এমনই। জান্নাতের প্রতিটি আনন্দ টেকসই। দিন দিন আনন্দের মাত্রা শুধু বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে আর বাড়তেই থাকবে। জান্নাতের ফল-ফলাদি খেতে খেতে কখনো একঘেয়েমি এসে যাবে না। জান্নাতের পানীয় পানেও কখনো বিরক্তি এসে যাবে না। কারণ, এগুলো কখনো একরকম থাকবে না। সবসময় আগেরবারের চেয়ে উত্তম হবে। আবার খেলে আগের চেয়ে সুস্বাদু লাগবে। দুনিয়াতে সবকিছুর একটা সীমা আছে। একটা পর্যায়ে আসার পর আর ভাল্লাগে না। কিন্তু, জান্নাতে প্রতিটি আনন্দ সবসময় বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এটাই হলো মা-কিসিন। নারীরা জান্নাতি হুরদের চেয়ে বহুগুণে বেশি সুন্দরী হবে। তাদের জন্য তাদের স্বামীদের থাকবে নিখুঁত এবং খাঁটি ভালোবাসা। হুরেরা হলো জান্নাতের একটি নেয়ামত। কিন্তু সঙ্গ এবং বন্ধুত্ব হবে স্ত্রীর সাথে। আল্লাহ হুরদের ব্যাপারে বলেননি যে, তারা মূল্যবান আসনে হেলান দিয়ে পানীয় পান করবে এবং আলাপচারিতায় মশগুল থাকবে। এটা হবে স্ত্রীদের জন্য। আমাদের স্কলাররা বলেছেন, জান্নাতের নারীরা জান্নাতী হুরদের চেয়ে অসীমভাবে বেশি রূপবতী হবে। কারণ, নারীদেরকে জান্নাত উপহার দেওয়া হবে। আর হুরেরা হলো জান্নাতের একটি নেয়ামত। উভয়টার মাঝে কোনো তুলনা চলে না। -- শায়েখ ইয়াসির ও নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে