গড়িমসি বা দীর্ঘসূত্রতার ক্ষতি

 


গড়িমসি বা দীর্ঘসূত্রতার ক্ষতি

------ * ----------- আজ যে কাজটি আজ করতে পারবেন আগামী কালের জন্যে তা ফেলে রাখা যে কতটা ক্ষতিকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জীবনে অনেক কিছুই হয়তো সম্পন্ন করতে পারেননি এই গড়িমসি মনোভাবের কারণে। দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা জানতে যদি কুরআন হাদিস অধ্যয়ন করেন তাহলে দেখতে পাবেন, ঈমানের বৃক্ষ তৈরী হয় মূলত আমলের উপর ভিত্তি করেই। সর্বত্র আমলের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ কী বলেছেন? وَ سَارِعُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ جَنَّۃٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ ۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَ - "তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।" (৩:১৩৩) আল্লাহ আরো কী বলেছেন? "قُمۡ فَاَنۡذِرۡ - وَ رَبَّکَ فَکَبِّرۡ কুম ফাআনজির ওয়া রাব্বাকা ফাকাব্বির। "উঠো! সাবধান করো! আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর।" (৭৪:২-৩) গড়িমসি আসে শয়তানের কাছ থেকে। আমাদের অতীতের বহু বড় বড় আলেমেরা এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। ইবনে জাওযী বলেন- "গড়িমসি শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।" কারণ সে এ কৌশল সবকিছুর জন্য ব্যবহার করে। আমি আগামী কাল করবো। এখনো সময় আছে। ইবনে কাইয়্যেম বলেন- প্রতিবার যখনই তোমার সামনে কোনো ভালো আমলের দরজা খুলে যায়, তখন এর সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য "সম্ভবত করবো" এবং "এইতো করে ফেলবো" নামক আরো দুইটি দরজাও উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এর মানে কী? প্রতিবার যখনি আপনার সামনে ভালো কোনো আমল করার সুযোগ তৈরী হয় শয়তান তখন দুইটি প্ররোচনা নিয়ে আপনার সামনে হাজির হয়। এক: সম্ভবত। অর্থাৎ, "আমার কি আসলে এটা করার দরকার আছে? এটা না করে যদি ঐটা করি তবুও তো হয়। মসজিদটা বাসার কাছেই জানি। মসজিদে গেলে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব হবে তাও জানি। কিন্তু আমার কি আসলে মসজিদে যাওয়ার দরকার আছে? বাসায় পড়লেও তো আদায় হয়ে যাবে।" আপনি তখন আর মসজিদে যান না। এভাবে সে আপনাকে ২৭ গুণ সওয়াব থেকে বঞ্চিত করলো। দ্বিতীয় দরজা হলো: এইতো করে ফেলবো। একটু পরে করছি। আগের উদাহরণের ক্ষেত্রে, আপনাকে মসজিদে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করার পর তার পরবর্তী লক্ষ্য হয় বাসায়ও আপনাকে দিয়ে নামাজ না পড়ানো। আপনি গড়িমসি করতে থাকেন। "এই তো পড়তেছি। হাতের কাজটি শেষ করেই পড়ে ফেলবো" এভাবে গড়িমসি করতে থাকেন। শেষে নামাজের সময়টাই পার হয়ে যায় বা একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে আদায় করেন। আর এ রকমটা প্রায়ই ঘটে আসছে। অনেক বেশি সংখ্যক বার। সমাধান: গড়িমসি না করা। ভালো কাজটি করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হওয়া। আল্লাহ যেমন বলেছেন- সারিউ سَارِعُوۡۤا - তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও। سَابِقُوۡۤا সাবিকুও- প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও। قُمۡ কুম - উঠে পড়ো। فَاسۡعَوۡ - 'ফাসআও। ক্ষিপ্রতার সাথে, দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাও। দুনিয়াবী কাজের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে বহু বই পুস্তক লেখা হয়েছে। প্রোডাক্টিভ মানুষের অন্যতম একটি লক্ষ্যণীয় গুণ হলো তারা গড়িমসি করে না। তাদের "টু ডু লিস্টে" যা যা আছে, তারা তা যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলে। আমরা সিরাহ থেকে জানি প্রখ্যাত সাহাবী কাব ইবনে মালিক (রা) তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি এই গড়িমসি মনোভাবের কারণেই। এটা থেকে মাফ পাওয়ার জন্য ওনাকে পরে বিশাল এক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। - ড. ইয়াসির কাদির আলোচনা থেকে। একবার ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর আবার ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কারণ ফ্রি সময়ের অপরিকল্পিত কাজকর্ম শেষ পর্যন্ত পাপের দিকে নিয়ে যায়। তাই সমগ্র দিনের জন্য আপনার পরিকল্পনা থাকা চাই। কারণ এই শেষ জামানায় নিজেকে রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আগের একটি পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম মানবজাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। সূরা সাবার ২০ নাম্বার আয়াতে এসেছে- وَ لَقَدۡ صَدَّقَ عَلَیۡهِمۡ اِبۡلِیۡسُ ظَنَّهٗ فَاتَّبَعُوۡهُ اِلَّا فَرِیۡقًا مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ-”তাদের ব্যাপারে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণিত করল (যে ধারণা ইবলীস আল্লাহর নিকট ব্যক্ত করেছিল যে, অল্প সংখ্যক ব্যতীত সে মানুষদেরকে নিজের বশীভূত করে ছাড়বে)। ফলে মু’মিনদের একটি দল ছাড়া তারা সবাই তার অনুসরণ করল।” তাই দুনিয়ার এ পরীক্ষায় পাস করার জন্য যদি খুব সিরিয়াস না হন, অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আর এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না, কারণ এর পরিণতি যে আগুনে পোড়ার আজাব। তাই মনোযোগী হন। সমগ্র দিনটা কিভাবে কাটাবেন তার জন্য একটা পরিকল্পনা রাখুন মাথায়। তারপর কাজে নেমে পড়ুন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে