নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার

 


আল্লাহ তায়ালা বলেন - وَ اِنَّ لَکَ لَاَجۡرًا غَیۡرَ مَمۡنُوۡنٍ - "তোমার জন্য অবশ্যই রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।" (৬৮ঃ০৩)

এখানে 'আজরান গাইরা মামনুন' অর্থ এমন পুরস্কার যা কোনোদিন কাটা পড়বে না, শেষ হবে না, অন্তহীন, অফুরন্ত unending reward. এখন, কুরআন কেন নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কারের কথা বলছে? এর কারণ হলো, আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা এই বিশ্ব তৈরী করেছেন শুধু একটি উদ্দেশ্যে। আর সেই উদ্দেশ্যটি হলো, আপনি এখানে কঠোর পরিশ্রম করবেন জান্নাত পাওয়ার জন্য। এটাই উদ্দেশ্য। মানুষ এখানে ঈমান আনবে, সৎ কাজ করবে, আল্লাহর ইবাদাত করবে তারপর তারা এর বিনিময়ে জান্নাত পাবে। কিন্তু কিছু কিছু প্রয়োজন পূরণ হওয়া ছাড়া আপনি আল্লাহর ইবাদাত করতে পারবেন না। এই দুনিয়াতে আপনার খাদ্য এবং পানীয় দরকার। বসবাসের জন্য ঘর-বাড়ি দরকার যেখানে আপনি রাত কাটাবেন। আপনাকে আবার বিবাহ করতে হবে। কারণ, যদি বিয়ে না করেন তাহলে মানব জাতি কিভাবে চলমান থাকবে? তাহলে দেখা যাচ্ছে আল্লাহর ইবাদাত করতে হলে মানুষের কিছু কিছু জিনিসের প্রয়োজন। কিন্তু এই জিনিসগুলো এখানে দেয়া হয়েছে শুধু ইবাদাতের কাজে সাহায্য করার জন্য। তাই, আপনার মৃত্যুর সাথে সাথে আপনার জন্য এই জিনিসগুলোর সমাপ্তি ঘটে। এগুলোর কিছুই আপনার সাথে যায় না। কারণ জিনিসগুলোর উদ্দেশ্য এই দুনিয়া কেন্দ্রিক। অর্থাৎ, খাওয়া, পান করা, নর-নারীর সম্পর্ক এসবকিছুর সমাপ্তি ঘটে মৃত্যুর সাথে সাথে। মানুষকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু সেটাই মৃত্যুর ওপারে যায়। তাদের ঈমান, ভালো কাজ, সততা এগুলো ওপারে যায়। আর এগুলোর জন্যই তারা পুরস্কার পাবে। এমন পুরস্কার যা কোনোদিন শেষ হবে না। মানুষ আহার করার কারণে কোন পুরস্কার পায় না। এমন হবে না যে, আপনি যদি অনেক বেশি পরিমানে আহার করেন তাহলে অনেক বড় জান্নাত পাবেন। না, এমনটি হবে না। আপনার খাদ্য এবং পানি আপনাকে আল্লাহর ইবাদাত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে মাত্র। তাই, মানুষ যখন খাওয়া এবং পান করার জন্য সকল চেষ্টা চালায় তাদের এই প্রচেষ্টার ফলাফল আসলে ক্ষণস্থায়ী, দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। কারণ, যখন তারা মারা যাবে এই কর্মফল শেষ হয়ে যাবে। তাই, যদি আমার বাসায় অনেকগুলো রুটি থাকে, আমি যতক্ষণ জীবিত থাকবো ততোক্ষণ এগুলো খেতে পারবো। মৃত্যুর পর তো আর খেতে পারবো না। পানির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই, কুরআন বার বার এই কথার উপর জোর দিয়েছে যে, যে জিনিসগুলো মানুষকে আল্লাহর ইবাদাত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে - খাদ্য, পানীয়, অর্থ, সম্পদ - এগুলোর উদ্দেশ্য খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। কিন্তু সত্যিকারের যে জিনিস মানুষের সাথে টিকে থাকবে তা হলো, যে উদ্দেশ্যে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে- তাদের প্রভুর ইবাদাত এবং অন্যদেরকে তাদের প্রভুর ইবাদাতে আহবান জানানো। এটা এমন কিছু যা এই দুনিয়াতেও টিকে থাকবে আবার তাদের মৃত্যুর পরেও এর ফলাফল অনন্তকাল ধরে মানুষ পেতে থাকবে। এখন, কুরআন খুব পরিষ্কার করে বলছে - কেউ যদি তার গোটা জিন্দেগী শুধু খাওয়া এবং পান করার জন্য ব্যয় করে সে তো একটা পাগল। কারণ, তুমি এখানে অল্প কিছুদিন বেঁচে থাকবে আর এর জন্যই তুমি সব চেষ্টা ব্যয় করে ফেলছো কিন্তু যে জগতে তুমি কোনোদিন মারা যাবে না তার ব্যাপারে তোমার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই?? কে পাগল? যে এই দুনিয়ার জন্য কাজ করে সে? নাকি যে পরকালের জন্য কাজ করে সে? এজন্য সূরা কালামে আল্লাহ বলেছেন - "অতঃপর শীঘ্রই তুমি দেখতে পাবে এবং তারাও দেখতে পাবে- তোমাদের মধ্যে কে পাগলামিতে আক্রান্ত।" একই সাথে আরেকটি কথাও মনে রাখা দরকার, এই দুনিয়াতে যত ভোগ্য সামগ্রী আল্লাহ আমাদের দান করেছেন তার সবগুলোই জান্নাতে যা দিবেন তার একটা প্রিভিউ মাত্র, সামান্য স্বাদ। এই দুনিয়াকে শুধু এতটুকু পরিমাণেই উপভোগ্য করা হয়েছে যেন আপনি উপলব্ধি করতে পারেন এরচেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য এক জগৎ সামনে আসছে। অনেক ভালো এক জগৎ সামনে আসছে। জান্নাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। আমরা এখন যে জীবন পার করছি এটা পরিপূর্ণ জীবন নয়। এটি আংশিক জীবন। আমরা খাই, পান করি, ঘুমাই এবং আমরা মারা যাবো। এটি চূড়ান্ত জীবন নয়। জান্নাতে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খেতে এবং পান করতে হবে না। আমরা খাবো এবং পান করবো আনন্দের জন্য। জান্নাতে আমাদের ঘুমাতে হবে না। জান্নাতে কোনো মৃত্যু নেই। সেটাই চূড়ান্ত জীবন। আমরা জান্নাতে জাগ্রত থাকবো। পরিপূর্ণ জীবন হবে জান্নাতের জীবন। আমরা এখন যে জীবন যাপন করছি, আমরা আসলে জীবনের প্রকৃত স্বাদ পাইনি। সেটা পাবো পরবর্তী জীবনে। আর তাইতো আল্লাহ একে বলেছেন, প্রকৃত জীবনের গৃহ। وَ اِنَّ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ لَهِیَ الۡحَیَوَانُ ۘ لَوۡ كَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ - "আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন- তারা যদি জানত!" (২৯:৬৪) -- আকরাম নদভি, ইয়াসির কাদি এবং নোমান আলী খানের আলোচনা থেকে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে