প্রতিটি মানুষের জান্নাতুল ফিরদাউস অর্জন করার সুযোগ

 


আমরা সবাই এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মোহে বিভোর হয়ে পড়ি। কিন্তু শুধু মৃত্যুর বাস্তবতাই আমাদের সবাইকে জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আপনি সবকিছু অস্বীকার করতে পারেন কিন্তু মৃত্যুকে তো অস্বীকার করতে পারবেন না।

যদি কোনো কিছুই আমাদের মন পরিবর্তন না করে, মৃত্যু তো অবশ্যই আমাদের মন পরিবর্তন করবে। যদি কোন কিছুই আমাদের চিন্তা করতে অনুপ্রাণিত না করে, মৃত্যু তো অবশ্যই আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করবে। এই দুনিয়াতে আমরা কেউই চিরকাল বেঁচে থাকবো না। আমরা সবাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট ফেরত যাবো। এই পৃথিবীতে আমাদের অবশিষ্ট সময় এবং দিনগুলো নম্বর দিয়ে নির্ধারিত। প্রতিটি দিন শুধু একবারই আসে। আজকের দিনটি আর কোনোদিন ফেরত পাবো না। প্রতিটি সকালে আমাদের চিন্তা উচিত—আজ আমি আমার পরবর্তী জীবনের জন্য কি কি পাঠাবো। আমার আসল জীবনের জন্য আজ আমি কী বিনিয়োগ করবো। আমরা সবাই জানি, আল্লাহ এই দুনিয়াতে সবাইকে সমান জীবনোপকরণ প্রদান করেননি। আমাদের প্রত্যেককে পৃথক করে সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রত্যেককে পৃথক সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের প্রতিভা ভিন্ন, আমাদের দুর্বলতা ভিন্ন, আমাদের শক্তিমত্তা ভিন্ন, আমাদের সম্ভাবনা ভিন্ন। বস্তুত: মানব ইতিহাসের সমগ্র সময়কালটা জুড়ে এমন দুইজন মানুষ খুঁজে পাবেন না, যাদের রয়েছে একেবারে অভিন্ন চারিত্রিক গুণাবলী, সম্ভবনা, পরিবেশ এবং প্রভাব বলয়। আপনি একদম শতভাগ ইউনিক। ইতিহাস জুড়ে গোটা মানব জাতির তথা বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের মাঝে আপনি একদম অনন্য। আমাদের ধর্মের এক অতি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো— এতো বেশি বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও, ১৫-২০ বিলিয়ন বৈচিত্র! কল্পনা করা যায়! যখন কোনো দুইজন মানুষও একদম একরকম নয়, যখন কোনো দুইজন মানুষের প্রতিভা একরকম নয়, যখন কোনো দুইজন মানুষের পরিবেশ-পরিস্থিতি একরকম নয় এতো অসংখ্য নানারূপতা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষের জান্নাতুল ফিরদাউস অর্জন করার সুযোগ আছে। প্রতিটি ব্যক্তিকে যে পরিবেশ এবং উপায়-উপকরণ প্রদান করা হয়েছে যদি সে তার আলোকে সর্বোত্তম কাজ করতে পারে। আল্লাহ তার জন্য যে স্বতন্ত্র পরীক্ষা নির্ধারণ করেছেন যদি সে ঐ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হতে পারে। তাহলে সে জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রবেশ করবে। আল্লাহ আমাকে আপনাকে একটি সহজ জীবন অতিবাহিত করার জন্য এ দুনিয়াতে রাখেননি। আল্লাহ আমাদের এ দুনিয়াতে রেখেছেন একটি পরীক্ষায় পাশ করার জন্য। আমাদের প্রত্যেকের পরীক্ষাটা ইউনিক। আপনার পরীক্ষাটা সম্পূর্ণ পৃথকভাবে শুধু আপনারই জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন- لِّيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ - "...আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি ওগুলোর মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য...।" (৬:১৬৫) প্রতিটি ব্যক্তির পরীক্ষা অনুপম, স্বতন্ত্র এবং শুধুই ঐ ব্যক্তির জন্য বানানো হয়েছে (custom-made)। নিজের পরীক্ষাটা বুঝতে পারার পর এ পরীক্ষায় পাস করার জন্য সবকিছু উৎসর্গ করে দিন। এই পরীক্ষায় পাস করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছুর অস্তিত্ব নেই। কারণ শেষ বিচারের দিন মানুষ এতোটাই মরিয়া হয়ে উঠবে যে— "সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি পণস্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে, তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে, তার গোষ্ঠীকে যারা তাকে আশ্রয় দিত এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।" সূরা মা'আরিজ। তাই, নিজের জীবন এনালাইসিস করে বুঝতে চেষ্টা করুন যে, আমাকে কিভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটা কি হারাম টাকা? কোনো মেয়ে? হারাম সম্পর্ক? বিপদাপদ? অসুখ-বিসুখ? যদি হারাম কিছু হয় তাহলে এটা থেকে হিজরত করুন। বহুদূর পালিয়ে যান। কারণ, শেষ বিচারের দিন আপনার অবস্থা যেন সে ব্যক্তির মত না হয় যে আফসুস করে বলবে- "যদি মন্দ কাজ ও তার মধ্যে বহুদূর ব্যবধান হত!" (৩:৩০) যদি পাপ থেকে হিজরত করতে পারেন এবং এরপর উত্তম আমল করেন তাহলে আল্লাহ আপনার পাপগুলোকে পুণ্যে রূপান্তরিত করে দিবেন। আর যদি কষ্টকর কিছু হয় তাহলে ধৈর্য ধরুন। ধৈর্য যে শুধু আপনাকে শাস্তি থেকে বাঁচাবে তা নয়, ধৈর্য আপনাকে জান্নাতে প্রবেশকারীদের একেবারে প্রথম দিকে নিয়ে আসবে এবং জান্নাতে প্রবেশের আটটি দরজার সবগুলো আপনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়বে। -- ড. ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে