অন্ধ ভক্ত

 


~~~~অন্ধ ভক্ত~~~~~

কোন আলেম যখন ইসলামের কোনো বিষয়ে অসাধারণ পান্ডিত্য দেখায়, মন গলানো কথা বলে, এতে সাধারণ ব্যক্তি সাধারণভাবেই মুগ্ধ হয়ে তার উপর পূর্ণ আস্থা নিয়ে আসে। অথবা কোন দায়ী যে অসাধারণ বক্তৃতা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে প্রভাবিত করে। বা কোন পরহেজগার যার নিষ্ঠা আর ইবাদাত দেখে খুবই মুগ্ধ। এ রমক আলেম, দাঈ আর পরহেজগার লোকদের কিছু ভক্তকুল আর একনিষ্ঠ ছাত্র তৈরী হয়। এসব ভক্তকুলদের উপর আসলে নির্ভর করে তারা তাদের আলেম বা দায়ীর জনপ্রিয়তা কোনদিকে নিয়ে যাবে। পৃথিবীর প্রথম শিরক কিন্তু এমন ভক্তদের থেকেই সুত্রপাত। সমস্যা তৈরী হয় আলেম, দাঈ আর পরহেজগার ব্যক্তিদের উপর যখন পরিপূর্ণ আস্থা চলে আসলে। কোন আলেম হয়ত ইসলামের ৮০% বিষয়ে তার গবেষনা করেছেন আর বাকি ২০% এ করার সুযোগ পান নাই। কিন্তু এই ২০% বিষয়েও তার মতামত পাওয়া যেতে পারে যেসব এ ভুল থাকতে পারে তার গবেষনা না থাকার কারণে। তারা মানুষ, তারা কিছু ভুল করবেই করবে। ভক্তরা/ছাত্ররা যদি তার আলেমের উপর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার জন্য ঐ ২০% বিষয়ে কুর’আন আর হাদীস থেকে সুস্পষ্ঠ দলীল আসার পর আলেমের মতকে উপরে উঠান তাহলেই সমস্যা, এটাই অন্ধ ভক্ত। কোন প্রশ্ন ছাড়া মুহাম্মদ (সাঃ) কে অনুসরণ করতে হবে আর বাকিদের ব্যাপারে সৎ সাহস থাকতে হবে প্রশ্ন করার। ইমাম,আলেম, দায়ী এরা ডাক্তারের মত। ডাক্তার পড়ালিখা করে যদি রোগের ভাল সমাধান দেয় ভাল। আর না দিলে তা বাদ দেয়। ভুল ঔষুধ কেউ জেনে খায় না। আলেমদের কাজ কুর'আন হাদীসে ডুব দেওয়া যেটা আমাদের অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়, মণি মুক্তা নিয়ে আসা, সমাধান নিয়ে আসা। এই প্রক্রিয়ায় যদি তিনি তথ্যের অভাবে, বা অন্য কোন কারণে ভুল করে তাহলে বাদ দিব। জেনে শুনে ভুল গ্রহন করা অন্ধ ভক্তদের লক্ষন। মাঝে মাঝে আলেম পরিস্থিতি অনুযায়ী সাময়িক কোন সমাধান বা কাজের আদেশ দেন মানুষদের ইসলামের দিকে টানার জন্য। সমস্যা হয়, যদি তার ভক্তকুল ঐ সাময়িক সমাধানকে স্থায়ী বা ইসলামের অংশ মনে করে বসে। কোন ইমাম তাদের জীবত অবস্থায় বলেলনি যে আমাকে নিয়ে স্কুল তৈরী করবা। যুক্তি তর্ক দিয়ে যে কোন মূল্যে আমার মতকে সবার উপরে রাখবা । কোন ইমাম এ কথা বলেলনি। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলতেন, আমার ইচ্ছা হয়, আমার লিখা মানুষজন পড়ুক বুঝুক এর পর আমাকে ভুলে যাক। যদি রাসুল (সাঃ) এর কথার বিপরীতে আমার কথা পায় তাহলে সহজেই আমার কথা বাদ দিতে পারবে। আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক, সালাহ এর ব্যাপারে ২০০ বছর আগে একটি বই লিখা হয়েছে যা ইন্ডিয়ার বড় বড় মাদ্রাসায় পড়ানো হয়। এই বইয়ে ভাল কিছু আছে কিন্তু সুন্নাহর বাইরেও অনেক কিছু আছে। নামাযের ৫২টি সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা আছে যা আসলেই সুন্নাহ কিনা সন্দেহ। কিন্তু যেটা হয়েছে, যেহেতু এই বই শুরুতে পড়ে, এই বই এর সবকিছু একদম মনের গভীরে চলে যায় এবং এটিই হয় তাদের ভিত্তি। এরপর কোন সুষ্পষ্ট হাদীস বা সুন্নাহ আসলেও তারা ঐ বইকেই প্রাধান্য দেয়। এ ধরণের আচরণ ক্ষতিকর। আমাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর রাসুল (সা) যেভাবে নামায পড়েছেন ঐভাবে পড়া। যেই কুর'আন হাদীস থেকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ নিয়ম প্রমাণ সহ নিয়ে আসতে পারে সেটা নিজের প্রিয় আলেম, বই থেকে প্রাধান্য দেওয়ার মন মানিসকতা থাকতে হবে। আমি শুধু নামাযের ব্যাপারে বলছি না, ইসলামের যেকোনো ব্যাপারে। যেমন ইমাম গাযালী (রহঃ) এর অনেক অবদান ইসলামে, কিন্তু কিছু বিষয়ে তার গবেষণা ছিল না যেমন ইসলামে নারীর ব্যাপারে। তিনি বলেছেন, নারীদের সাথে পরামর্শ করো না, যদি করোও তারা যা বলবে তার বিপরীত করবা! বলুন এটা কি ইসলামের শিক্ষা? রাসূল (সা) কি হুদায়বিয়ায় সময় তার স্ত্রী উম সালামা (রাঃ) এর সাথে পরামর্শ করে তা প্রয়োগ করেননি? এই ব্যাপারে ইমাম গাযালী (রহঃ) এর অন্ধ ভক্তদের আচরণ হবে যেকোন উপায়ে নারীর ব্যাপারে তার এই মতকে প্রাধান্য দেওয়া। আর সত্য সন্ধানীদের আচরণ হবে এমন, ইমাম গাযালী (রহঃ) ইসলামের ক্রান্তিকালে অনেক খেদমত করেছেন, কিন্তু নারীর এই বিষয়ে তার মতামত রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহর বিপক্ষে যায় তাই এই ব্যাপারে আমি সুন্নাহকে ইমাম গাযালীর (রহঃ) উপর প্রাধান্য দিব। মুমিনদের আচরণ এমনই হওয়া উচিত যে কোন আলেম, দায়ী, জনপ্রিয় বক্তা আর পরহেযগার ব্যক্তিদের নিয়ে। তাদেরকে যথেষ্ঠ শ্রদ্ধা করতে হবে কিন্তু অন্ধ হওয়া যাবে না। কোন একবিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা তাকে অশ্রদ্ধা করা বা তাকে ঘৃণা করা এমন কিছু নয়। সত্যকে আমাদের সবার উপর রাখতে হবে। সত্য যদি আমাদের দল, মত প্রিয় আলেম এর বিরুদ্ধে যায় তারপরও তাকে গ্রহন করতে হবে। শত্রুদের কাছ থেকে সত্য আসলেও সত্যকে সত্য মেনে নেওয়ার সাহস আর বিনয় থাকতে হবে। সত্যের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই।

-- শাইখ মুহাম্মদ আকরাম নদভী এর সুরা আলে ইমরান এর আলোচনা থেকে অনুপ্রাণিত।


নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরে অন্তর প্রশান্ত হয়। কোন কারণে যদি মনটা বিক্ষিপ্ত থাকে তবে মনটাকে প্রশান্ত করতে আল্লাহর জিকিরে মগ্ন হোন।

সবচেয়ে সেরা জিকির চারটি। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। অথবা "হিসনুল মুসলিম" অ্যাপটা খুলে পছন্দমত জিকিরগুলো পড়তে থাকুন। ইনশাআল্লাহ বিক্ষিপ্ত অন্তরটা প্রশান্ত হয়ে যাবে।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে