ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ভোগবিলাসের মাঝে

 


আল্লাহ আপনাকে সবধরণের উপকরণ সরবরাহ করেছেন যেন হেদায়েত পেতে পারেন। এই জীবনটা ব্যবহার করে যেন চিরস্থায়ী জান্নাত অর্জন করতে পারেন। কিন্তু, আপনি কী করলেন? ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ভোগবিলাসের মাঝেই নিজেকে ডুবিয়ে রাখলেন। আপনার কাছে আছে কুরআন, আপনার কাছে আছে রাসূলের শিক্ষা। আপনাকে দেওয়া হয়েছে দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, অন্তঃকরণ এবং বিবেক বুদ্ধি। আপনি ইচ্ছে করলে সবচেয়ে সেরা মানুষ হতে পারতেন। কিন্তু খারাপ হওয়াটাকেই নিজের জন্য পছন্দ করলেন। দোষ কার?

আল্লাহ কাউকে ঘৃণা করেন না। নিজের অন্যায়ের জন্য আল্লাহকে দোষ দিবেন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে চান্স্ দিয়েছেন। আপনার হেদায়েত পাওয়াটাকে তিনি দারুন ভালোবাসেন। জীবনটা তো একটি উপহার। কারণ, এ জীবনে তাঁর কথামত চললে আপনার জন্য আছে অকল্পনীয় চিরসুখের জান্নাত। পাবেন চিরস্থায়ী জীবন। ভোগ বিলাস এবং আনন্দ ফুর্তি করতে পারবেন চিরকাল। আরো আছে মহাবিশ্বের মালিকের চিরকালীন সন্তুষ্টি। তিনি কোনোদিন জান্নাতবাসীদের উপর অসন্তুষ্ট হবেন না। পৃথিবীর গাছপালা, পশুপাখির তো জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মানুষের আছে। তাই, এ মহা সুযোগটাকে কাজে লাগান। আমাদের তিনি কুরআন দিয়েছেন, রাসূল দিয়েছেন, নামাজ পড়া শিখিয়েছেন। আমরা একটু দৃঢ়তা দেখালে পাপ কর্ম থেকে বিরত থাকতে পারি। জান্নাতে যাওয়ার জন্য সবকিছু আমাদের হাতের সামনে। কেন এ সুযোগ মিস করবেন? এ আয়াতটি স্মরণে রাখুন। وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ - "তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে আর যাকাত দিবে। আর এটাই সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন।" ৯৮:৫ জাস্ট খাঁটি মনে আল্লাহর ইবাদাত করতে থাকুন। দৈনিক নামাজগুলো আদায় করুন। আল্লাহর পথে দান করুন। টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে সৎ থাকুন। বিপদ এলে আল্লাহর পুরস্কারের আশায় সবর অবলম্বন করুন। একজন বিনয়ী মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করুন। যারা ভাবছেন জীবনের বিশাল একটা সময় পার করে ফেলেছেন, পরকালের জন্য কিছুই করেননি। হতাশ হবেন না। এখনো সময় আছে। আবু বকর সিদ্দিক (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন সম্ভবত ৩৮ বছর বয়সে। ৬৩ বছর বয়সে মারা যান। এ অল্প কয়েক বছরের ইসলাম দিয়েই তিনি এই উম্মার সবচেয়ে সেরা ব্যক্তিতে পরিণত হোন। তাই আপনার জন্যেও সুযোগ আছে। জীবনের বাকি সময়টা নিজের জান্নাত বিনির্মাণে ব্যয় করুন। ওস্তাদ নোমান আলী খান তার এক আলোচনায় বলেছেন, উনার এক বন্ধু তাওবা করে ফিরে আসার পর নিজের জীবনটা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দেন। দিনরাত শুধু দীনী কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। তো একবার তিনি ভয়ংকর অ্যাক্সিডেন্টের কবলে পড়েন। কিন্তু আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন। পরে তিনি এক্সিডেন্টের মুহূর্তটা এভাবে বর্ণনা করেছেন—"আমার মাথায় তখন স্ত্রী সন্তান কোন কিছুর চিন্তা ছিল না। আমি শুধু ভাবছিলাম পরকালে নাজাত পাওয়ার জন্য যথেষ্ট আমল কি করেছি? নাজাত পাবো তো? জান্নাত পাবো তো? এটাই তখন আমার একমাত্র ভাবনা ছিল।" সূরা মুনাফিকুনে এসেছে—"আর আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু কাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদাকা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোন প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।" তাই চলুন, আমাদের নির্ধারিত সময়টা এসে যাওয়ার আগেই আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। আমাদের আশেপাশে যেসব সৎকর্মশীলরা আছেন তাদের মত হয়ে যাই। নাজাত পাওয়ার জন্য, জান্নাত পাওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেই।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে