জীবন দেওয়া হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য

 


আপনার জীবনের সকল সমস্যা এবং সমস্যাগুলোর সাথে সম্পর্ক আসলে আপনার জন্য উত্তম। কারণ, এ সমস্যাগুলো আসে আপনার স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তার উন্নতিকল্পে।

যদি নম্রতা দেখানোর পরিবেশ না পান, কিভাবে আপনি একজন বিনম্র মানুষ হবেন? যদি ধৈর্যের পরীক্ষা না দেন, কিভাবে আপনার ধৈর্য্যের কথা জানা যাবে? যদি এমন পরিস্থিতিতে না পড়েন যেখানে আপনাকে সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হয়, তবে কিভাবে আপনার সহনশীলতার কথা জানা যাবে? আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু এই গুণগুলো আমাকে কেন অর্জন করতে হবে? কারণ, কিয়ামতের দিন আপনি একা একা আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবেন। তখন কিছু যোগ্যতা নিয়ে আপনাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। এই পৃথিবীতে থাকাবস্থায় আপনাকে সেগুলো অর্জন করতে হবে। কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তা আল কুরআন আপনাকে শেখাবে। আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে, সৎ হতে হবে, আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে, আপনাকে দয়ালু হতে হবে, মানুষকে সাহায্য করতে হবে, আপনাকে আপনার রবের ইবাদাত করতে হবে, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, বিনয়ী হতে হবে.... এই পৃথিবীতে অবস্থানকালীন সময়ে আপনাকে এই যোগ্যতাগুলো অর্জন করতে হবে। আপনার হয়তো এই যোগ্যতাগুলো এখন নেই, কিন্তু আপনাকে এগুলো নিজের মাঝে তৈরি করতে হবে এবং এগুলোকে ক্ৰমান্বয়ে উন্নত করে যেতে হবে। আর মৃত্যুপর্যন্ত আপনাকে এই কাজ করে যেতে হবে। যখন জন্ম গ্রহণ করেন তখন আপনি ভালো বা খারাপ কোনোটাই নন। আপনাকে ভালো হওয়ার সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর যখন মারা যাবেন আপনাকে অবশ্যই ভালো মানুষ হিসেবে মারা যেতে হবে। যদি খারাপ মানুষ হিসেবে মারা যান কোনো কিছুই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না। আপনি খারাপ মানুষ তখন এটাই হবে আপনার পরিচয়। আর যদি ভালো মানুষ হিসেবে মারা যান তাহলে 'ভালো মানুষ' হবে আপনার পরিচয়। তখন আপনার ভালো চরিত্র, ভালো আচার-ব্যবহার, ভালো যোগ্যতাসমূহ আপনাকে সাহায্য করবে। আপনার পরিবেশ পরিস্থিতি আল্লাহর দান। এগুলো নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করুন। যে সময় এবং পরিবেশ আপনি পেয়েছেন এগুলো আল্লাহর দান। আপনি এগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা, সমাজ, পাড়া-প্রতিবেশী সব আল্লাহর দান। এগুলো ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তি সত্তার উন্নতি সাধন করুন। জান্নাতি মানুষদের গুণগুলো অর্জন করুন। আর এ বিষয়টা আপনার নিজের উপর নির্ভরশীল। কিছু জিনিস আল্লাহ প্রদান করেন আর কিছু কাজ আমাদের করতে হবে। আল্লাহ পরিবেশ এবং আমার জীবনে কিছু মানুষ দিয়েছেন। এখন, আমার কাজ হলো এগুলোর সদ্ব্যবহার করে নিজ চরিত্রের উন্নতি সাধন করা। আপনাকে এই জীবন দেওয়া হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য। এ পরীক্ষা যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন আপনাকে মারা যেতে হবে। একটি ব্যক্তিসত্তা বিনির্মাণের জন্য আপনাকে এ জীবন দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আপনাকে এ দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে। এ দুনিয়া আনন্দ ফুর্তির জন্য নয়। এটা শুধুই পরীক্ষা করার জন্য। এ জন্য ইউসুফ (আ) এর জীবনী পড়লে দেখবেন তার সমগ্র জীবনটা ছিল পরীক্ষায় পরিপূর্ণ। যখন সকল পরীক্ষা সমাপ্ত করলেন তিনি বুঝতে পারলেন তিনি মারা যাবেন। সূরা ইউসুফ পড়লে দেখবেন সবার শেষে তিনি বলেন—"হে আমার রব! আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করুন।" কেন তিনি শুরুতে এ দোয়া করেননি? কারণ, তিনি দেখছেন তাঁকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাকে কূপে নিক্ষেপ করা হলো, কূপ থেকে বাঁচার পর ওই মহিলার বাড়িতে আরো বড় পরীক্ষার কবলে পড়লেন এরপর জেলখানায়। তিনি একটার পর আরেকটা পরীক্ষায় ক্রমাগত পড়তে থাকলেন। সমগ্র জীবন ছিল পরীক্ষায় পরিপূর্ণ। যখন সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল এবং তিনি মিশরের শাসক হয়ে গেলেন তিনি বুঝতে পারলেন এখন আমাকে মারা যেতে হবে। কারণ, বেঁচে থাকার কোনো প্রয়োজন এখন আর বর্তমান নেই। তাই, তাঁর শেষ বক্তব্য হলো তিনি মুসলিম হিসেবে মারা যেতে চান। অতএব, জেনে রাখুন, এই কুরআন শুধু একটি উদ্দেশ্যে এসেছে—আপনাকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম ব্যক্তিতে পরিণত করার জন্য। যেন আল্লাহ ভালো মানুষদের জান্নাত দিতে পারেন। আর খারাপদের পরিণতি জাহান্নাম। - ড. আকরাম নদভির আলোচনা অবলম্বনে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে