“আমি তো জন্মাতে চাইনি! জানিনা কেন আমার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে!"

 


আল্লাহ এই পৃথিবী বানিয়ে এতে কী রাখতে চেয়েছেন? একজন খলিফা। খলিফা কী করে? নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়। তারপর তিনি একটি পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলেন।

কিন্তু, তোমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ইচ্ছে করতে হবে, যদিও তোমার ক্ষমতা ও সামর্থ্য আছে ভুল সিদ্ধান্ত নেবার, যদিও ভুল সিদ্ধান্তটি লোভনীয়, বারবার তোমাকে ডাকছে। তবুও তোমাকে সঠিক কাজ করতে হবে আর সেই সামর্থ্য তোমার আছে। যদি তুমি সঠিক সিদ্ধান্তটি বারবার নাও... যদি কখনো ভুল করে ফেলো তবে উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করো, এরপর আবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে থাকো… যদি এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারো তবে আমি তোমাকে পদমর্যাদা দেব এমন দিনে যাকে বলে? বিচার দিবস। যদি তুমি সেটা পাশ করো তবেই আমি তোমাকে জান্নাত দেব। আচ্ছা, এখন। এইযে নিজের মতো পছন্দ করার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, এটা হলো আল্লাহ্‌র বানানো সবচাইতে বড় পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষাটা বিশাল দায়িত্ব, তাই না? কারণ তিনি আপনাদের পৃথিবীতে নিজে নিজে থাকার দায়ভার দিচ্ছেন! আরবিতে এটার মানে হলো আমানাহ। শব্দটি কি? আমানাহ।إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنسٰنُ (আহযাব ৩৩:৭২) অর্থঃ "আমি আসমান, যমীন ও পর্বতের প্রতি (ইসলামের বোঝা বহন করার) আমানাত পেশ করেছিলাম। কিন্তু তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল, তারা তাতে আশংকিত হল, কিন্তু মানুষ সে দায়িত্ব নিল।" আল্লাহ বলছেন, আমি এই আমানত পেশ করেছি আসমান সমূহকে, মানে আকাশের সবকিছুকে, সব সৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তুমি কি সিদ্ধান্ত নিতে চাও? এই পরীক্ষা চাও? কারণ এই পরীক্ষায় পাশ করলে জান্নাতে যাবে। আর পরীক্ষাটিতে ব্যর্থ হলে কোথায়? জাহান্নাম দেখতে এমন… যেতে চাও ওখানে? জান্নাত দেখতে এমন, যেতে চাও? যদি যেতে চাও তাহলে সবচাইতে কঠিন এই পরীক্ষা দিতে হবে। আল্লাহ বলছেন, আমি এই পরীক্ষা সমস্ত সৃষ্টির সামনে পেশ করেছি, আর সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। সবাই বলেছে, “ইয়া আল্লাহ! যেমন আছি ভালো আছি। দরকার নেই। মনে হয় না এই ঝুঁকি নিতে পারবো। খুব ঝুঁকিপূর্ণ!” এতো ঝুঁকি কারণ ফেইল করলে কোথায় যেতে হবে? জাহান্নামে! এরপর আল্লাহ সৃষ্টি করলেন আমাদের। মানবজাতি! সমৃদ্ধ এক পরাশক্তি দ্বারা। সেটা কি? রুহ! এরপর তিনি আমাদের বললেন, “শোনো। আমি এই অফার সবাইকে দিয়েছি। তাদের অফার দিয়েছি যে পৃথিবীতে খলিফা হিসেবে পাঠাবো, আর নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার আমানত দেব। কিন্তু অস্তিত্বশীল কোন সৃষ্টিই আমার এই অফার গ্রহন করেনি। কিন্তু আমি তোমাদের এক বিশেষ শক্তি দিয়েছি। সেটা হলো, তোমাদের শুধু ভারসাম্যই নেই, ভারসাম্য মনে আছে? মানে তোমাদের ভালো মন্দের বোধ আছে, এই ভারসাম্যের কারণে। একই সাথে আমি তোমাদের এমন কিছু দিয়েছি যা আমার সাথে তোমাদের সর্বক্ষন সংযুক্ত রাখবে। তোমাদের ভেতর এমন নুর যা আমার সাথে সংযুক্ত থাকবে। সেটা কি? রুহ! আর একারনেই তোমরা এই পরীক্ষায় পাশ করতে আমার অন্য যে কোন সৃষ্টির তুলনায় বেশী সক্ষম। তোমরা কি তবে পরীক্ষাটি নেবে? আমি জোরাজুরি করছি না। তোমাদের ইচ্ছে। তোমরা কি পৃথিবীতে এসে এই পরীক্ষা নিতে চাও? আচ্ছা, পরীক্ষাটি নিয়ে আরও কিছু জানাই তোমাদের আমি। যখন এই পৃথিবীতে আসবে, এই যে কথোপকথন হচ্ছে এখানে, যে পরীক্ষাটিতে পাশ করলে একটি বিচার দিবস আসবে আর তোমরা ওই জান্নাতটি পাবে, ঐ যে! কিন্তু এই পরীক্ষায় ফেল করলে বিচার দিবসে তোমরা পাবে ওই জাহান্নাম। দেখতে পাচ্ছো? হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি! আর তোমাদের শত্রু থাকবে এই পৃথিবীতে। যারা চাবে তোমরা জাহান্নামে যাও। অনেক শক্তিশালী শত্রু থাকবে তোমাদের। কিন্তু আমি যা তোমাদের দিয়েছি, তোমাদের ভেতরের যেই ভালোত্ব, আর যেই ওহী দেব তোমাদের, সেগুলোই যথেষ্ট হবে পরীক্ষা পাশ করবার জন্য। তোমাদের মধ্যে সমস্ত গুণ, সমস্ত ক্ষমতা ও সামর্থ্য দেয়া আছে যেগুলো পরীক্ষাটি পাশ করার জন্য প্রয়োজন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি তোমাদের সেই সামর্থ্য অবশ্যই আছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত তোমাদের।” প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলছি। কোনো কাজের সামর্থ্য থাকা মানেই কিন্তু কাজটি করে ফেলা নয়। তাই না? মেধাবি ছাত্র মানেই কি সে অনেক পড়াশুনা করে? না? বরং পড়াশুনা করার সিদ্ধান্তটা তাকে নিতে হয়। তাই না? আপনার সামর্থ্য আছে তবে কাজটি করেননি। আল্লাহ বলেন আমি তোমাদের সমস্ত সামর্থ্য দিয়েছি, সাথে আমার কথা দ্বারা সাহসও জোগাবো। এখন, প্রত্যেকটি মানুষকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল, এই পরীক্ষা নেবার কিংবা না নেবার। সবাইকেই। আমার থিওরি, শুধুই থিওরি, বলছি না যে এটাই সত্য, তবে এই ধারণা করি, যে আমাদের প্রত্যেককেই আমাদের নিজ নিজ পরীক্ষা সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। তুমি! ক্যান্সার। তুমি! ডিভোর্স। তুমি! তুমি ছোটবেলায় বাবা-মা কে হারাবে। তুমি।তোমার এই সমস্যা… তোমাকে মিথ্যে মামলায় ফাসানো হবে আর পরিবার থেকে বিচ্যুত হবে। ইবরাহিম তোমাকে তোমার বাবা ঘর থেকে বের করে দেবে। তোমার এটা হবে, তোমার ওটা হবে, তোমার সেটা হবে, তোমার ওটা হবে… তিনি আমাদের সব ধরণের সমস্যা বলে দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন সে সব পরীক্ষায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে কি হবে। আমরা এই সব পরীক্ষার কথা শুনে কি বললাম বলুন তো? অবশ্যই! পাশের জনকে ইশারা করে হয়তো বলেছি, দেখেছো জান্নাতটা? আসলেই অসম্ভব সুন্দর! কীসের শত্রু! আমরা সব দেখে নেবো! কোনো সমস্যা নেই!... আমাদের নিয়ে নিন! কুরআনে এসেছে--وَحَمَلَهَا الْإِنسٰنُ (৩৩:৭২)"মানুষ এই ভার বহন করতে তাড়াহুড়ো করছিল।" তিনি আমানত পেশ করলেন, আমরা নিয়ে নিলাম! আমরা সবাই গ্রহন করলাম। সবাই! নিজ ইচ্ছায়! কখনো শুনেছেন কাউকে বলতে? “আমি তো জন্মাতে চাইনি! জানিনা কেন আমার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে! আরে! আমি তো জান্নাত জাহান্নাম চাইনি!” অ্যাঅ্যা… হ্যাঁ তুমি চেয়েছিলে!... কুরআন অনুযায়ী। তুমি চেয়েছিলে! আল্লাহ তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, এটা চাও? আমরা বলেছি, হ্যাঁ! আমরা আছি!! অবশ্যই আছি! আল্লাহ তো আমাদের সামর্থ্য দিয়েছেনই! রুহ! সেখানে আপনি ছিলেন আর বলছিলেন যেন, “উফ! জন্ম নিতে আর তর সইছে না! শুরু হয় না কেন!?” - নোমান আলী খান - স্টোরি নাইট সিরিজ এর অংশ বিশেষ

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে