কুরআনের একটি মিরাকল

 


কুরআন কথ্য ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। বক্তব্য আকারে নাজিল হয়েছে। লেখ্য ভাষায় নয়। কোনো লিখিত ফর্মে অবতীর্ণ হয়নি।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও লিখতে জানতেন না। কারণ আল্লাহ তায়ালা এটি মানুষের নিকট সুস্পষ্ট করতে চেয়েছেন যে, এই কিতাব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রচিত কোনো কিতাব নয়। এটি আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব। আচ্ছা, এখন কুরআনের একটি মিরাকল আপনাদের নিকট উপস্থাপন করতে চাই। আমি তো কয়েক ঘন্টা ধরে আপনাদের সামনে কথা বলছি। আপনাদের তো মনে নেই ঠিক ত্রিশ মিনিট পূর্বে আমি কী বলেছি। আমি নিশ্চিত। একেবারে শব্দে শব্দে সম্পূর্ণ কথাটা আপনাদের মনে নেই। আর এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আদতে আমারও স্মরণে নেই আমি কী বলেছি। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলতে পারবো না। সম্ভবত আমি কথা বলার ফাঁকে একটি বাক্যের মাঝখানে এক সময় বলেছি 'মা-বাবা'। অথবা বলেছি 'বাবা-মা'। সম্ভবত আমি বলেছি 'প্রাইভেট কার এবং মোটর সাইকেল'। অথবা বলেছি 'মোটর সাইকেল এবং প্রাইভেট কার'। সম্ভবত আমি বলেছি 'দিন-রাত'। অথবা বলেছি 'রাত-দিন'। এগুলো তো কয়েকটি শব্দ মাত্র। আমি তো এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করিনি যে কোনটা আগে বলবো আর কোনটা পরে। শব্দগুলোর এই ক্রম মুখ থেকে এমনিতেই বেরিয়ে গেছে। আগে পরে চিন্তা করে আমি বলিনি। এখন পনেরটি বাক্য বলার পরে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কোনটি আগে বলেছিলেন মা নাকি বাবা? রাত নাকি দিন? আমার মনে থাকবে না। আমি বলতে পারবো না। আমার এটাও স্মরণে থাকবে না যে, পনেরটি বাক্য বলার পরে আগে শব্দের যে ক্রম আমি উল্লেখ করেছিলাম ঠিক সে অনুযায়ী আমাকে এখন বলতে হবে। অর্থাৎ, আগে যদি আমি দিন উল্লেখ করে থাকি, তাহলে এখন দিনের কথা আগে বলবো। পরে বলবো রাতের কথা। কয়েক মিনিট পূর্বে 'মা-বাবা' শব্দ দুইটি উল্লেখ করার সময় যদি মা আগে বলে থাকি তাহলে এখন মায়ের কথা আগে বলবো। পরে বাবার কথা। অথবা যদি বাবা আগে উল্লেখ করে থাকি তাহলে বাবার কথা এখন বলবো পরে মায়ের কথা। কারণ, আমাকে শব্দের ক্রম অনুযায়ী কথা বলতে হবে। মানুষের পক্ষে এভাবে চিন্তা করে কথা বলা অসম্ভব। আমাদের এরকম ব্রেইন ক্যাপাসিটি নেই। আমাদের মস্তিষ্কের এরকম সামর্থ্য নেই। আসুন, এখন দেখি আল্লাহ তায়ালা কিভাবে কথা বলেন। সূরা জাসিয়া। ৪৫তম সূরা। এই সূরার ২৩ তম আয়াতে আল্লাহ বলেন- اَفَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ وَ اَضَلَّهُ اللّٰهُ عَلٰی عِلۡمٍ وَّ خَتَمَ عَلٰی سَمۡعِهٖ وَ قَلۡبِهٖ وَ جَعَلَ عَلٰی بَصَرِهٖ غِشٰوَۃً ؕ فَمَنۡ یَّهۡدِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اللّٰهِ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ - "তুমি কি লক্ষ্য করেছ তার প্রতি যে তার খেয়াল-খুশিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং তিনি তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তার চোখের উপর স্থাপন করেছেন আবরণ। আল্লাহর পর আর কে (আছে যে) তাকে সঠিক পথ দেখাবে? এরপরও কি তোমরা শিক্ষাগ্রহণ করবে না?" এখানে বলা হয়েছে- خَتَمَ عَلٰی سَمۡعِهٖ وَ قَلۡبِهٖ - "তিনি তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন।" আগে বলেছেন কান পরে বলেছেন অন্তর। এখন, চলুন সূরার ৮ম আয়াতে ফেরত যাই। ওখানে উনি বলেছেন- یَّسۡمَعُ اٰیٰتِ اللّٰهِ تُتۡلٰی عَلَیۡهِ ثُمَّ یُصِرُّ مُسۡتَکۡبِرًا کَاَنۡ لَّمۡ یَسۡمَعۡهَا ۚ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ - "যে আল্লাহর আয়াত শোনে যা তার সামনে পাঠ করা হয়, অতঃপর অহমিকার সাথে (কুফুরীর উপর) থাকে যেন সে তা শোনেইনি; কাজেই তাকে ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ দাও।" এখানে কিসের কথা বলা হলো? শ্রবণ করার কথা। যেহেতু ৮ম আয়াতে শ্রবণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাই ১৫ আয়াত পরে ২৩তম আয়াতে যখন মোহর মারার কথা আসলো তিনি আগে উল্লেখ করলেন কানের কথা। এখন, ব্যাপারটাকে আরো চমৎকার করে তোলে সূরা বাকারার একটি আয়াত। সেখানেও অন্তর এবং কানে মোহর মেরে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আপনারা সবাই সম্ভবত আয়াতটি মুখস্ত পারেন। সূরা বাকারার ৭ম আয়াত। আল্লাহ বলেন - خَتَمَ اللّٰهُ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ وَ عَلٰی سَمۡعِهِمۡ ؕ وَ عَلٰۤی اَبۡصَارِهِمۡ غِشَاوَۃٌ ۫ وَّ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ - "আল্লাহ তাদের অন্তর ও কানের উপর মোহর করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখে আছে আবরণ আর তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি।" সূরা বাকারার এই আয়াতে আগে কিসের উল্লেখ এসেছে? অন্তর। পরে কান। আর সূরা জাসিয়াতে আগে কান পরে অন্তর। পার্থক্যটা ধরতে পেরেছেন? এখন কেন আল্লাহ সূরা বাকারাতে আগে অন্তরের কথা উল্লেখ করলেন? প্রথম থেকে আয়াতগুলোর অর্থ পড়ুন। "জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিইহি।" এটি এমন একটি কিতাব যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সন্দেহ কোথায় থাকে? অন্তরে। হুদাল্লিল মুত্তাকিন। মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত। তাকওয়া কোথায় থাকে? অন্তরে। আল্লাযীইনা ইউ'মিনুনা বিল গাইব। যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস কোথায় অবস্থান করে? অন্তরে। সমগ্র আলোচনাটা অন্তর নিয়ে। এ জন্য যখন সিল মারার কথা আসলো আল্লাহ আগে অন্তরের কথা উল্লেখ করলেন। সুবহানাল্লাহ! এটা মাত্র একটা উদাহরণ। এরকম উদাহরণ ভুরি ভুরি। কুরআনে যেভাবে সিকোয়েন্স বা ক্রম রক্ষা করা হয়েছে তা দেখে আপনাকে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে যেতে হয়!! একটু পর বিনম্র চিত্তে বলতে হয়-- تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ - এটি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। (৬৯:৪৩) -- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে