আকাবার শপথের পর

 


মদিনার নতুন মুসলমানেরা যখন মক্কায় এসে রাসূলুল্লাহ (স) কে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অর্থাৎ আকাবার শপথের পর, তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন তাদের পুরস্কার কী হবে? এ সাহায্যের বিনিময়ে তারা কী পাবে? উত্তরে রাসূল (স) বলেছিলেন, জান্নাত। জান্নাত তোমাদের পুরস্কার।

তিনি তাদের বলেননি, যদি তোমরা আমাকে সাহায্য করো তাহলে আমরা এক সাথে পারস্য এবং রোমান সাম্রাজ্য জয় করবো। ফলে তোমরা প্রত্যেকে বিশাল ধনী যাবে। না। তিনি এমনটি বলেননি। তিনি বলেছিলেন, তোমাদের পুরস্কার হলো জান্নাত। এমনকি কুরআনেও আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার পুরস্কার হিসেবে প্রথমে জান্নাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়ার বিজয়ের কথা সেকেন্ডারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়ার বিজয়কে "উখরা বা সেকেন্ডারী" বলা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে তোমরা এটা ভালোবাসো। কিন্তু তোমাদের প্রকৃত পুরস্কার হলো জান্নাত। [সূরা সফ ৬১:১০-১৩ দেখুন] লিবিয়ার 'মরুসিংহ' ওমর আল মুখতার বিশ বছর ধরে ইতালির উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান। তবু শেষ পর্যন্ত উনি রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে কি উনি পরাজিত হয়েছেন? কক্ষনো না। কারণ, মুমিনদের কাছে দুনিয়ার রাজনৈতিক বিজয় হলো সেকেন্ডারি বিষয়। আমাদের নিকট প্রাইমারী বিজয় হলো জান্নাত। এ জন্য আমরা কখনো বশ্যতা স্বীকার করি না। আমৃত্যু লড়ে যাই।

=====================================================

সূরা বাকারার ৩য় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন— الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ - যারা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনে... অদৃশ্যে বিশ্বাসের অনেকগুলো দিক রয়েছে। আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিকটি হলো— মনের মাঝে আশা ধরে রাখা। গায়েবের প্রতি ঈমান কখনো আমাদের নিরাশ হতে দেয় না। মুসলিম উম্মাহ যখন একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে থাকে, অবস্থা দিন দিন শুধু খারাপই হতে থাকে, এরপর আরো খারাপ...এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে। আমাদের একটি জিনিস উপলব্ধি করতে হবে— আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে আমাদের কিছু ওয়াদা দিয়েছেন। সেই ওয়াদাগুলো জানার পর চামড়ার চোখে আমি কী দেখছি তা নিয়ে আর পরোয়া করি না। কারণ, অন্তর্চক্ষু দিয়ে আমি যা অবলোকন করি তা আরো বেশি শক্তিশালী। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেছেন- وَ لَا تَهِنُوۡا وَ لَا تَحۡزَنُوۡا وَ اَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ - "আর তোমরা নিরাশ হয়ো না ও বিষন্ন হয়ো না এবং যদি তোমরা বিশ্বাসী হও তাহলে তোমরাই বিজয়ী হবে।" (৩:১৩৯) তাই এটা কোনো ব্যাপার না যদি উম্মাহকে পরাজয়ের পর পরাজয় হজম করতে হয়, যদি আমরা একটার একটা খারাপ খবর পেতে থাকি সমগ্র দুনিয়াজুড়ে— এতে আমাদের হীনবল হওয়ার কিছু নেই। কারণ, শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ অমাবশ্যার সমাপ্তি আসবেই আর মুক্তির সূর্য উদিত হবেই। জেলের তালা ভাঙবেই। আল্লাহর কাছ থেকে এ আশা দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ ঈমানদারদের বিজয় দিবেন। যদি তারা ঈমানের উপর টিকে থাকে। একজন ঈমানদারের কাছ থেকে আপনি সবকিছু কেড়ে নিতে পারেন, কিন্তু কখনো তাদের আশা কেড়ে নিতে পারবেন না। —নোমান আলী খান

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে