মুমিনদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য

 


আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ১৭ নম্বর আয়াতে মুমিনদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- اَلصّٰبِرِیۡنَ وَ الصّٰدِقِیۡنَ وَ الۡقٰنِتِیۡنَ وَ الۡمُنۡفِقِیۡنَ وَ الۡمُسۡتَغۡفِرِیۡنَ بِالۡاَسۡحَارِ - "যারা ধৈর্যশীল, সত্যপরায়ণ, আনুগত্যশীল, দানশীল এবং ঊষাকালে ক্ষমাপ্রার্থী।"

উক্ত আয়াতের শেষ অংশটি "ওয়াল মুস্তাগফিরিনা বিল আছ্হার" নিয়ে আমরা এখন কথা বলবো। এ অংশটি আয়াতটির সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। লক্ষ্য করুন, এখানে অন্য গুণগুলোর জন্য নির্দিষ্ট করে কোনো সময়ের উল্লেখ করা হয়নি। ধৈর্যশীল, সত্যপরায়ণ, আনুগত্যশীল, দানশীল...কিন্তু যখন 'আল-মুস্তাগফিরিনদের' অর্থাৎ যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের কথা এলো আল্লাহ বললেন, ওয়াল মুস্তাগফিরিনা বিল আছ্হার। ঊষাকালে, ভোরে বা সকালে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। আরেকটি ব্যাপার খেয়াল করুন, এখানে 'اَسۡحَارِ-আছহার' ব্যবহার করা হয়েছে যা বহুবচন। অর্থাৎ ভোরগুলোতে, সকালগুলোতে, ঊষাকালগুলোতে। কেন? কারণ, আল্লাহ এসব মানুষদের কাছ থেকে আশা করেন যে তারা তাদের সকালগুলোতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। যারা সত্যিই আল্লাহর সামনে নিজেদের বিনম্র করে দিয়েছে (যা আগের একটি শব্দ কনিতিন এর অর্থ), আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া তাদের নিকট শুধু একবার করার কাজ নয়, তাদের জীবনের ভোরগুলো এমনি। প্রতিটি ভোরে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। তাই, এখানে 'মুস্তাগফিরিনা বিস্ ছুহুর' না বলে 'মুস্তাগফিরিনা বিল আছ্হার' বলা হয়েছে। তাদের সকাল শুরু হয় আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার মাধ্যমে। আপনি জীবনে ভালো অবস্থায় থাকেন বা কষ্টকর অবস্থায় থাকেন, আল্লাহর সাথে আপনার অবস্থান একইরকম। আমরা শুধু কষ্টে পড়লে আল্লাহকে ডাকি না, আমরা সবসময় আল্লাহকে ডাকি। যে অবস্থাতেই থাকি না কেনো, আল্লাহর নিকট আমাদের বিনম্র মনোভাব কখনো হারিয়ে যায় না। আমরা সর্বদা তাঁর নিকট মাফ চাই। সকাল বেলা মাফ চাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো... আচ্ছা শেষ বিচারের দিন মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কী হবে? আল্লাহর ক্ষমা। যখন তারা কবর থেকে উঠে আসবে তারা বলবে— "মামবাআসানা মিম মারকাদিনা-কে আমাদের ঘুম থেকে জাগালো?" এরপর কোন জিনিসটি তাদের মন ও মস্তিষ্ক একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলবে? আল্লাহর ক্ষমা লাভের আকাঙ্ক্ষা। প্রতিটি সকালে আল্লাহ আমাদের মৃত্যু থেকে জীবিত করেন। প্রতিটি সকালে। ঘুম থেকে জেগে উঠার দুআ- "সকল প্রশংসা তাঁর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যুর পর আবার জীবন দিয়েছেন।" প্রতিটি সকালের জেগে উঠা শেষ বিচারের দিনে জেগে উঠার একটি রিমাইন্ডার। একটি স্মরণিকা। তাই, ভোরে জেগে উঠেই আপনি সেই দিনের জেগে উঠার কথা স্মরণ করবেন। আর সেইদিন যে জিনিসটি আপনার তীব্র আকাঙ্ক্ষার বস্তু হবে—আল্লাহর ক্ষমা—তা এখন আপনি দুনিয়ার প্রতিটি সকালে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকবেন। যে জিনিসটি আমাদেরকে আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো ইস্তেগফার। তাঁর ক্ষমা। (তাই, প্রতিটি ভোরে অন্তত একশ বার আল্লাহর কাছে মাফ চান। এটাকে আপনার দৈনিক রুটিনের অংশ করে ফেলুন।) -- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে -- 06. 'Ali 'Imran - Ayah 16-18 Ramadan 2018

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে