লোকমান তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন
সুরা লোকমান পবিত্র কোরআনের ৩১তম সুরা। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ৪ রুকু, ৩৪ আয়াত। যারা নামাজ পড়ে, জাকাত দেয় এবং পরলোকে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য পবিত্র কোরআন একটি একক কিতাব ও পথনির্দেশক। লোকমান হাকিম একটি পরিচিত নাম। লোকমান স্বীয় পুত্রের প্রতি আল্লার একত্ব বা তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার, মা-বাবার সেবা, নামাজ আদায়, জাকাত প্রদান ও বিপদে ধৈর্য ধারণ সম্পর্কে যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। অহংকার না করা, সংযতভাবে চলাফেরা এবং নম্রভাবে কথা বলার জন্য উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, গলার আওয়াজের মধ্যে গর্দভের গলাই সবচেয়ে শ্রুতিকটু।
লোকমান তার ছেলেকে উপদেশ দিয়েছিলেন। উপদেশগুলো বদলে দিতে পারে জীবনে চলার ধরন।
উপদেশ–১: আল্লাহর কোনো শরিক কোরো না । আল্লাহর শরিক করা তো চরম সীমালঙ্ঘন।
উপদেশ–২: নামাজে দাঁড়ালে অন্তরের হেফাজত করা। নামাজে দাঁড়ালে তখন মনকে স্থির রাখা কষ্ট হয়ে পড়ে। ধরা যাক কোনো একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছেন। অনেক খুঁজেও পাননি। দেখা যায়, নামাজে দাঁড়াতেই মনে পড়ে, জিনিসটা অমুক জায়গায় শয়তান মনকে স্থির থাকতে দেয় না। নামাজে দাঁড়ালেই সারা দিনের হিসাব কষে। নামাজে দাঁড়ালে কাজের রুটিন তৈরি করে। লোকমান হাকিম বলেন, নামাজের সময় অন্তরের হেফাজত কর।
উপদেশ–৩: খাবার ধীরেসুস্থে খাওয়া। তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গিয়ে গলায় আটকে যায় অথবা খাবার ওপরে উঠে নাক জ্বালাপোড়া করে। একটু অসতর্কতায় বড় বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। এজন্য লোকমান হাকিম খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেছেন।
উপদেশ–৪ : অন্যের ঘরে গিয়ে এদিক-ওদিক না তাকানো। এ অভ্যাস থাকলে দূর করা উচিত। লোকমান হাকিম বললেন, অন্যের ঘরে যেন চোখের হেফাজত করে। আপনার জন্য তারাও যেন লজ্জিত না হয় আপনিও যাতে লজ্জিত না হন।
উপদেশ–৫: কথা বলা বা ভাষণ দেওয়ার সময় নিজেকে সংযত রাখা। অসতর্কভাবে কথা বললে বিপদ হতে পারে। বেশি কথা বললে নিজের মর্যাদার হানী হয়।
উপদেশ–৬: মৃত্যুকে এক মুহূর্তের জন্যও না ভুলে যাওয়া। মৃত্যুর কথা স্মরণ রাখা। কারণ যে কোনো সময় মৃত্যু চলে আসতে পারে।
উপদেশ–৭: আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কোরো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)। যার অন্তরে সব সময় আল্লাহর জিকির থাকবে, যার জিভ সব সময় আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত থাকবে, আল্লাহ তাঁকে প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করে নেবেন।
উপদেশ–৮ : কারো উপকার করলে সেটা একেবারের জন্য ভুলে যাওয়া । কেউ কারও কাছে সহজে হাত পাতে না; অভাবে পড়ে কিংবা বিপদে পড়ে মানুষ সাহায্য চায়। উপকার করলে তা নিয়ে খোঁটা দেওয়া যাবে না।
উপদেশ–৯ : কেউ আঘাত দিয়ে থাকলে ভুলে যেতে হবে।
======================================================================
কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’বাক্যটি পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ৩০ নম্বর আয়াতের অংশ। কোরআনে ইঙ্গিত রয়েছে যে, প্রতিটি কাজ বিসমিল্লাহ বলে আরম্ভ করতে হবে। আবু দাউদে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কাজ বিসমিল্লাহ ছাড়া আরম্ভ করা হয়, তাতে কোনো বরকত থাকে না।’
আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। আল্লাহর নামের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করলে, তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। যেকোনো কাজ বা কিছু শুরু করার আগে তাই পড়তে হবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’, অর্থ পরম করুণাময়, পরম দয়াময় আল্লাহর নামে।আবু দাউদে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কাজ বিসমিল্লাহ ছাড়া আরম্ভ করা হয়, তাতে কোনো বরকত থাকে না।’
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের সঙ্গে আল্লাহর নামের সম্পর্ক রয়েছে। কোরআন তিলাওয়াত ছাড়া অন্য কাজে বিসমিল্লাহ পাঠ সুন্নত। আর কোরআন তিলাওয়াতের সময় আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম এবং বিসমিল্লাহ দুটোই পাঠ করা সুন্নত। বিসমিল্লাহ দুটি সুরার মাঝখানে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়াত, যা প্রতিটি সুরার প্রথমে লেখা হয় এবং দুটি সুরার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে।চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা সুন্নত। অনেকে বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লিখে থাকেন, কিন্তু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখাই উত্তম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন