সুউচ্চ উদ্যান

 


এই জীবনে আপনি সম্পূর্ণরূপে পরিতুষ্ট হতে পারবেন না। আর জান্নাতে কি হবে? আল্লাহ তায়ালা বলেন—فَهُوَ فِیۡ عِیۡشَۃٍ رَّاضِیَۃٍ فِیۡ جَنَّۃٍ عَالِیَۃٍ সে জান্নাতের জীবনে পরিতৃপ্ত হবে। সুউচ্চ উদ্যানে অবস্থান করবে..."

কুরআনের অন্যত্রও আল্লাহ উদ্যানের কথা বলেছেন, কিন্তু এখানে তিনি শুধু উদ্যানের কথা বলছেন না, তিনি এটাকে বলছেন—সুউচ্চ উদ্যান। বিষয়টা কৌতূহল জাগ্রতকারী, কারণ عَالِيَةٍ - ‘আলীয়াহ' শব্দটি আক্ষরিক এবং রূপক উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হতে পারে। এর অর্থ কী? এটি এমন একটি বাগান যা শুধু সুউচ্চই নয়, এর ফলে আপনি চমৎকার একটি ভিউও (view) পাবেন—এটি হলো এর একটি অর্থ। আমরা জানি, যখন দর্শনীয় কোনো স্থানে যান, যেমন পাহাড়ের চূড়ায় বা হাইকিং-এ, অথবা গাড়ি চালিয়ে দূরে কোথাও যান যেখানে চমৎকার ভিউ রয়েছে; দৃশ্যটা দেখা মাত্র নিজের ভেতরে চমৎকার একটা প্রশান্তি অনুভব করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে পরিবেশটা উপভোগ করতেই ভালো লাগে; শুধু এক মুহূর্তের জন্য অনুভব করতেই মনের মাঝে কেমন জানি প্রশান্তির একটি পরশ বয়ে যায়। এমনকি যখন গাড়ি চালিয়ে দূরে ভ্রমণ করেন, কোথাও কোথাও দর্শনীয় স্থান থাকে যেখানে আপনি কিছুক্ষণের জন্য রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করেন। যদিও আপনার তাড়া থাকে, তবু বলেন, “শুধু এক মিনিট, শুধু এক মিনিট। এক মুহূর্তের জন্য দৃশ্যটি দেখে নেই”। সকলে থেমে যায়। আর যখন উঁচু কোনো স্থানে থাকেন, তখন কিছুটা সাকিনাহ (শান্তি) অনুভব করেন। আল্লাহ বলেছেন, جَنَّةٍ عَالِيَةٍ - জান্নাতিন ‘আলীয়াহ—প্রত্যেকবার যখন আপনি বাইরে তাকাবেন, আপনার হৃদয়ে প্রশান্তি যুক্ত হবে, স্বস্তি বাড়বে। এর দ্বারা এটাও বোঝায় যে, জান্নাতে যতদূর দেখা যাবে, সবই হবে আপনার। আপনি এর চূড়ায় থাকবেন, আর যতদূর দেখা যাবে, সব দিক থেকে এটা হবে আপনার রাজত্ব। فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ - ফি জান্নাতিন ‘আলীয়াহ। তবে এর আরও অর্থ রয়েছে। এটা এমন উদ্যান যা হবে অত্যন্ত অভিজাত। দুনিয়াতে হয়তো শুনেছেন, “ওহ! ওই মানুষগুলো উঁচু স্তরের মানুষ, এদের অবস্থান অনেক উঁচুতে, এরা উঁচু সমাজের মানুষ”। আপনি যদি সমাজের উঁচু স্তরে না-ও থাকেন, তারপরেও যদি উঁচু স্তরের কোনো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান, সেখানে প্রবেশ করে ভাবেন, “ওয়াও, এই স্থানটি কল্পনাতীত সুন্দর! জানি না, এর জন্য উপযুক্ত পোশাক পরেছি কিনা! আমার তুলনায় স্থানটি অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ! আমি কোনো কিছু নষ্ট করতে চাই না! আমি কি এখানে বসতে পারবো? সোফাটি অনেক দামি মনে হচ্ছে। জানিনা এখানে থাকতে পারবো কিনা”! আপনি অস্বস্তি বোধ করেন, কারণ এটা অতি উঁচু স্তরের, অতি অভিজাত। উদাহরণস্বরূপ, কোনো পরিপাটি জাদুঘরে গেলেন যেখানে লেখা থাকে— “স্পর্শ করা নিষেধ”। এমনকি লেখা না থাকলেও, আপনি যখন কোনো বিলাসবহুল অট্টালিকায় প্রবেশ করেন, “স্পর্শ করা নিষেধ”— কথাটি আপনি নিজের ভিতরেই অনুভব করেন। “উ.. আমাকে সতর্ক হতে হবে। আমি কি জুতা খুলে প্রবেশ করবো? আমি কি ওখানে যাবো”? আপনি তখন অতিরিক্ত সতর্ক থাকেন। কিন্তু যদি অতিরিক্ত সতর্ক থাকেন, তখন অস্বাভাবিক বোধ করেন। কারণ আপনি তাল মিলে চলতে পারছেন না। তো আল্লাহ সেখানে কি করবেন? আল্লাহ আপনাকে তৎক্ষণাৎ স্বাভাবিক বোধ করাবেন। তিনি বলেছেন, قُطُوْفُهَا دَانِيَةٌ - ক্বুতুফুহা দানিয়াহ—ফলগুলো আপনার কাছে চলে আসবে এবং তৎক্ষণাৎ তা আপনার সামনে পরিবেশন করা হবে। সুবহানাল্লাহ! আপনার মনে হবে না যে আপনি অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছেন। না, না, না। আপনাকে সেই স্থানের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে না। বরং সেই স্থানটিই আপনাকে সম্মান দেখাবে। قُطُوْفُهَا دَانِيَةٌ - ক্বুতুফুহা দানিয়াহ। তিনি বলেছেন, كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الأيَّامِ الْخَالِيَةِ - কুলু ওয়াশরাবু হানিআম বিমা আসলাফতুম ফিল আইয়্যামিল খলিয়াহ—এখন খাও এবং পান করো; তৃপ্তি সহকারে, নিশ্চিন্তে, উপভোগ করো; রিল্যাক্স। কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ জান্নাতের এমন কাপের কথা উল্লেখ করেছেন, যা থেকে পানীয় উথলে পড়ছে। অর্থাৎ পানীয় ছিটকে পড়ছে কিনা—আপনি তার কোনো পরোয়া করবেন না। এর দিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোনো প্রয়োজন বোধ করবেন না। এটা কোনো ব্যাপার না। আপনারা একে অপরের সাথে খেলা করবেন। হাসি-ঠাট্টা করবেন, তখন সকলে মিলে খাবার উপভোগ করবেন; একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করবেন। بِمَاۤ اَسۡلَفۡتُمۡ فِی الۡاَیَّامِ الۡخَالِیَۃِ —"বিগত দিনসমূহে তোমরা যা অগ্রে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে।" সেই দিনগুলো, যা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে, যা শূন্য হয়ে গিয়েছে। প্রতিনিয়ত এই দিনগুলো শূন্য হয়ে যাচ্ছে। আপনি এক দিনও পেছনে ফিরে যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহ পেছনে ফিরে যেতে পারবেন না। গত কয়েক দিনের কথা চিন্তা করুন; আমরা হিসাবও রাখতে পারছি না, সময় এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই দিনগুলো হবে এমন—আপনি পেছন ফিরে তাকাবেন, আর জীবনকে মনে হবে এটা যেনো একটা বোতল যা দ্রুত শূন্য করা হয়েছে। আল্লাহ এই ধারণাটিকেই এখানে বর্ণনা করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো, যেন আপনি এবং আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, এই পৃথিবীতে আমাদের হাতে যে কয়েক দিন সময় রয়েছে, আসুন এর সর্বোত্তম ব্যবহার করি। যেন আমরা আমলনামাটি এমন কৃতকর্ম দিয়ে পরিপূর্ণ করতে পারি, যার ফলে আমরা তা উন্মুক্ত করে অন্য একজনকে দেখাতে পারবো যে, “দেখো, আমি কত চমৎকার চমৎকার আমল করেছি! আর আল্লাহ আমার প্রতি অসম্ভব করুণা করেছেন”! মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে ডান দিকের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা ডান হাতে আমলনামা গ্রহণ করবেন। আর মহান আল্লাহ আমাদেরকে মিলিত করুন—তাঁর জান্নাতে, চমৎকার সুউচ্চ সেই উদ্যানে। —নোমান আলী খান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে