খলিফা শব্দের অর্থ
খলিফা শব্দের অর্থ—নোমান আলী খান আল্লাহ বলেছেন, إِنِّى جَاعِلٌ فِى الْأَرْضِ خَلِيفَةً "আমি পৃথিবীতে খলিফা পাঠাচ্ছি" (সূরা বাকারা ২:৩০)। আর খলিফার অনেক অর্থ রয়েছে, তবে আমি আপনাদের শুধু তিনটি উল্লেখ করব। প্রথমটি হলো, উত্তরসূরি। শব্দটা অনেক বড়, আমি জানি। ব্যাখ্যা করে সহজ করে দেব। আমি একজন উত্তরাধিকারী পাঠাচ্ছি পৃথিবীতে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল উত্তরসূরি বলতে কখনো বলেন... আচ্ছা ধরুন, কোনো বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ যখন অবসরে যান, অন্য কেউ তার স্থান নেয়। মানে বিদ্যালয় নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলো। এই নতুন অধ্যক্ষ হলেন উত্তরসূরি। এদিক দিয়ে তিনি একজন খলিফা। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না, আরবি ভাষার দৃষ্টিতে। আরবি ভাষায় তিনি একজন খলিফা। অথবা ধরুন, পরিবারের একজন কর্তা ছিলেন। সেই প্রধান কর্তা অর্থাৎ দাদা মারা গেলেন। এখন বড় চাচা... তার কাছে সবাই পরামর্শের জন্য যাতায়াত করে। এই বড় চাচা এখন কী? খলিফা। তার উপরেই এখন দায়িত্ব বর্তেছে। তাহলে এটা হলো দায়িত্বশীলতার বিষয়। আমি কাউকে রেখে যাবো যে দায়িত্ব হস্তান্তরিত করে যেতে থাকবে। এটাই হলো খলিফা শব্দের প্রথম অর্থ। ভিন্নভাবে বললে, আপনার পূর্ববর্তীরা আপনাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আর আপনাকে পরবর্তীদের উপর দায়িত্ব হস্তান্তর করে দিয়ে যেতে হবে। এটা পরিবারের মধ্যে খুব বেশি প্রযোজ্য। আপনার বাবা-মা আপনাকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। একদিন আপনি মা কিংবা বাবা হবেন অথবা হয়েই গেছেন। তাই আপনিও আপনার সন্তানদেরকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে দেবার মাঝে আছেন। এই বিষয়ে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল কুরআনে বলেন, وَرَبُّكَ الْغَنِىُّ ذُو الرَّحْمَةِ "তোমার রব, তোমার প্রভু হচ্ছেন গনি; তাঁর কারো প্রয়োজন নেই; তিনিই সমস্ত দয়া-মমতার আঁধার" (সূরা আনআম ৬:১৩৩)। এরপর তিনি বলেন, إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَسْتَخْلِفْ مِنۢ بَعْدِكُم مَّا يَشَآءُ "তিনি চাইলে তোমাদের সবাইকে সরিয়ে দিতে পারেন এবং তোমাদের পর তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন যা ইচ্ছে তা দিয়ে" (সূরা আনআম ৬:১৩৩)। আরেক স্থানে তিনি বলেন, وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓا أَمْثٰلَكُم "যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি অন্য কোনো জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তারা তোমাদের মতো হবে না" (সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৩৮)। এটা ছিল খলিফার প্রথম অর্থ। দ্বিতীয় অর্থ: স্বাধীনতা দেওয়া খলিফা শব্দের দ্বিতীয় অর্থটি খুবই চমকপ্রদ। খলিফা মানে কাউকে নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া। এখন যদি আমি আমার বাসায় চলে যাই, আমার সব বাচ্চারা ঘুমুচ্ছে—শুধু ওয়ালিদ জেগে আছে। বললাম, "ওয়ালিদ, তুমি জেগে আছো; তোমাকে দায়িত্ব দিলাম।” তার বয়স মাত্র পাঁচ! আমি বললাম, “তোমার দায়িত্ব হলো বিস্কুটগুলো খাবে না; পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।” ওই পাঁচ মিনিটের জন্য ওয়ালিদ কী? সে খলিফা! খলিফা ওয়ালিদ! বুঝতে পারছেন? আপনারা জানেন ওয়ালিদ কেন খলিফা? প্রথম কারণ হলো, আমি তাকে ছেড়ে এসেছি—সে আমার স্থান নিয়েছে এবং ছোট মানুষটি এখন দায়িত্বে আছে। কিন্তু দ্বিতীয় কারণটি হলো, এই পাঁচ মিনিটে তার স্বাধীনতা আছে যা করার—যা ইচ্ছে তা-ই করার! অন্যভাবে বললে, যখন খলিফার অর্থ হয় কাউকে নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়া, তখন সেটার ফলাফল হলো তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি (চয়েস) থাকে। আপনি যা চান সে তা করতেও পারে আবার না-ও করতে পারে। আল্লাহ ফেরেশতাদের ঘোষণা দিলেন: "আমি পৃথিবীতে কাউকে পাঠাবো আর তাকে নিজ দায়িত্বেই সিদ্ধান্ত নিতে ছেড়ে দেব।” আল্লাহ কোনো সিদ্ধান্তই আপনার ওপর চাপিয়ে দেবেন না। আপনার নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়বেন কি না; সত্য কথা বলবেন কি না; জায়েয উত্তম সম্পর্ক রাখবেন নাকি নাজায়েয সম্পর্ক করবেন—পুরোটাই আপনার ইচ্ছাধীন। আপনারই সিদ্ধান্ত থাকবে কী ডাউনলোড করবেন আর কী ডাউনলোড করবেন না। আপনি হবেন একজন খলিফা। এটা হচ্ছে দ্বিতীয় অর্থ। তৃতীয় অর্থ: ব্যবস্থাপক খলিফা শব্দের তৃতীয় অর্থ হলো ব্যবস্থাপক। কেউ একজন অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়েছে—সে শুধু স্থলাভিষিক্ত হবে না বরং সেই দায়িত্বও গ্রহণ করবে। এটি মালিকানা থেকে ভিন্ন একটি বিষয়। কারণ খলিফা মানে হলো কেউ আমাকে কিছু দিয়েছে এবং আমাকে সেটি অন্য কাউকে দিয়ে দিতে হবে। এর মানে আমি এর মালিক নই—এটি আমার নিজের নয়। মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে এবং যারা বুঝবে যে তারা খলিফা, তারা অনুধাবন করবে যে আসলে তাদের মালিকানায় কিছুই নেই। لِّلَّهِ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ "আল্লাহ্ই একমাত্র দুনিয়া আর পৃথিবীতে যা কিছুই আছে সবকিছুর মালিক" (সূরা বাকারা ২:২৮৪)। আমি-আপনি নিজেদের যা কিছুরই মালিক মনে করি না কেন... এই পোশাক আমার, এই জুতো আমার, এই গাড়ি আমার... আমরা মনে করি এগুলোর মালিক আমরা। কিন্তু আসলে এসবকিছুই একদিন আমাদের ফেরত দিতে হবে। সত্যি বলতে গেলে আমরা এমনকি আমাদের শরীরেরও মালিক নই! বিচার দিবসে এই শরীর আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে (সূরা নূর ২৪:২৪)। আমরা এর মালিক নই; আমরা শুধু চালক বা তত্ত্বাবধায়ক মাত্র
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন