পাপীদের জন্যও ক্ষমা পাওয়ার মাস
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আজকের খুৎবাটা আমার নিজেকে এবং আপনাদের সবাইকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, রমজান মাস শুধু ধার্মিক লোকদের মাস নয়, শুধু নেককার লোকদের মাস নয়, শুধু মুত্তাকী বা সালেহীনদের মাস নয়। এ মাসটি সকল মুসলিমের মাস, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। এটি এমন প্রত্যেকের মাস যে কালিমা পাঠ করে। এটি নেককারদের মাস এবং এটি তাদের জন্যও বিশেষ মাস যারা নেককার নয়। এটি যেমন আউলিয়া ও মুত্তাকীদের মাস, ঠিক তেমনি এটি পাপীদের জন্যও ক্ষমা পাওয়ার মাস। এটি এমন একটি মাস যা আল্লাহ্ প্রত্যেক মুসলিমকে উপহার দিয়েছেন, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। হে মুসলিম, যারা দ্বীন থেকে দূরে রয়েছেন, হে মুসলিম, যার হৃদয় অপরাধবোধে জর্জরিত যে, আপনি ইসলামের জীবনবিধান অনুসরণ করছেন না, আপনার বর্তমান জীবনযাত্রাকে রমজান মাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করবেন না। হে মুসলিম, বুঝে নিন যে রমজান আপনার, আমার এবং আমাদের সবার জন্য একটি উপহার, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। আমার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো, একবার আমি ইউরোপ ভ্রমণ করছিলাম। ইউরোপে এমন কিছু স্থান আছে–আপনারা জানেন হয়তো–যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা অনেক বেশি। একটি শহরে এমন একটি এলাকা ছিল যেখানে বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম ছিলেন। আমি আমার আপ্যায়নকারীদের সাথে হাঁটছিলাম এবং এটি রমজানের ঠিক আগের সময় ছিল। লক্ষ্য করলাম একটি দোকানে সাইন ঝোলানো, এটি একটি লটারি বা জুয়ার দোকান ছিল। সেখানে একটি সাইন লেখা ছিলঃ "রমজান মাসের জন্য এই দোকানটি বন্ধ থাকবে।" আমার সাথে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ–আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হিদায়াত দিন–তারা এটাকে কৌতুকের বিষয় মনে করলেন এবং হাসতে লাগলেন। আমি বললাম, এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে হাসবেন না, যে এমনকি পাপে নিজমজ্জিত থাকা সত্ত্বেও, এমনকি যখন সে হারাম কিছু বিক্রি করছে, তবু সে স্বীকার করছে যে, রমজান মাস আসছে, আর তাই সে মুসলিম অমুসলিম সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে–এই দোকানটি রমজান মাসের জন্য বন্ধ থাকবে। যখন আমি এ কথা বললাম, দলের অন্য কিছু লোক আমাকে আরও কিছু তথ্য দিল। তারা জানালো, এই বিশেষ শহরে–আস্তাগফিরুল্লাহ, আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন–অনেক মাদক ব্যবসায়ী, অনেক মাফিয়া গোষ্ঠীর লোক, তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু রমজান মাসে তারা তাদের দোকান পাট বন্ধ করে দেয়। রমজান মাসে তারা সেই কাজ করে না, যা তারা রমজান মাসের বাইরে করে থাকে। আমি আমার আপ্যায়নকারীকে বললাম, যারা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, আমি বললাম, হে ইসলামের প্রিয় ভাইয়েরা! এটাকে কৌতুকের বিষয় হিসেবে না দেখে বা ঠাট্টা-তামাশা না করে, আল্লাহর কসম! এটা আপনার জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ, এই লোকগুলিকে খুঁজে বের করার এবং তাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছাকাছি নিয়ে আসার। একজন ব্যক্তি যিনি পাপে নিমজ্জিত, যার জীবনযাত্রাই পাপ, যে পাপ থেকে উপার্জন করছে, যে হারাম কাজ করছে এবং হারামে জীবনযাপন করছে, তবুও যখন রমজান আসে, এমনকি সেই ব্যক্তিও একধরনের অনুভূতি অনুভব করে–আচ্ছা, এখন আমি মাদক সেবন করতে পারব না। আচ্ছা, এখন আমি জুয়ার টিকেট বা লটারির টিকেট বিক্রি করতে পারব না। এটা আমাদের কী দেখায়? এটা দেখায় যে, তাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে এখনো তাকওয়ার অস্তিত্ব আছে। ঠাট্টা-তামাশা না করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে, আমাদের কাজ হলো–আমরা যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি–আমাদের কাজ হলো তাদের সেই ভালোবাসাকে আরও বাড়ানো, সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগানো এবং এই পাপীকে এই অনুভূতি দেওয়া যে–হতাশ হয়ো না, তুমি ইতিমধ্যে ৫ থেকে ১০% এগিয়েছ, এখন রমজান মাসে আরও এগিয়ে যাও। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন--وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ --আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান দেখায়...[২২:৩২] (شَعَائِرَ) শা'আয়ের হলো আল্লাহর নিদর্শনসমূহ। আল্লাহর নিদর্শনসমূহ কী কী? আল্লাহ্ যা কিছুকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন, তা সবই আল্লাহর নিদর্শন। কাবা আল্লাহর শাআইর (شَعَائِرَ) বা নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। রমজান মাস আল্লাহর শাআইর (شَعَائِرَ) বা নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। কুরআন আল্লাহর শাআইর (شَعَائِرَ) বা নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। আল্লাহ বলেছেন, "যে কেউ আমার শাআইর (شَعَائِرَ) বা নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান দেখায়, এটি একটি লক্ষণ যে এই ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) রয়েছে।" মুসহাফ (কুরআন)-এর প্রতি সম্মান দেখানো তাকওয়ার (আল্লাহভীতি) লক্ষণ, কাবার প্রতি সম্মান দেখানো তাকওয়ার লক্ষণ এবং রমজানের প্রতি সম্মান দেখানোও তাকওয়ার লক্ষণ। হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! এমনকি যখন একজন পাপী পাপে নিমজ্জিত থাকা সত্ত্বেও স্বীকার করে যে, "আচ্ছা যাই হোক, রমজান মাসে আমাকে এই পাপ বন্ধ করতে হবে।" তারা তাদের পাপ সত্ত্বেও কী প্রদর্শন করছে? তাকওয়া। কুরআন অনুসারে তাদের মধ্যে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) রয়েছে। হে পাপী! আমি সবার আগে নিজেকে সম্বোধন করছি, এটি এমন একটি মাস যেখানে ইনশাআল্লাহু তা'আলা, আল্লাহ্ আপনাকে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার অসংখ্য সুযোগ উপহার দিয়েছেন। আমরাই একমাত্র উম্মাহ যাদেরকে এই মাসটি উপহার দেওয়া হয়েছে, আমরাই একমাত্র উম্মাহ যাদের কাছে এই পুরো মাসটি উম্মোচিত করা হয়েছে। আর এর ভেতরে রয়েছে আমাদের সকল পাপ ক্ষমা করার অসংখ্য উপায়। আর এটি কত যে সহজ! আমাদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করা হচ্ছে না। আমরা যেন ক্ষমা পেতে পারি এ জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা প্রতিটি উপায় সহজ করে দিয়েছেন।হে মুসলিম! বুঝে নিন এবং উপলব্ধি করুন, আল্লাহ্ আপনাকে শাস্তি দিতে চান না। আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করতে চান। বুঝে নিন এবং উপলব্ধি করুন, এই দ্বীন কঠিন নয়, এটি সহজ। يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ "আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, আর কঠিন করতে চান না।" সূরা আল-বাকারাহ (২:১৮৫) وَ اللّٰهُ یُرِیۡدُ اَنۡ یَّتُوۡبَ عَلَیۡكُمۡ "আর আল্লাহ্ চান তোমাদের তাওবা গ্রহণ করতে।" সূরা আন-নিসা (৪:২৭) আল্লাহ্ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তিনি আমাদের রমজান মাস উপহার দিয়েছেন যাতে যে কেউ, আমি আবার বলছি, যে কেউ, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই, ক্ষমা পেতে চায়, সে এই মাসে ক্ষমা পাবে। এই মাসে এমন কেউ নেই, যে ক্ষমা চাইবে কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাকে তার গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। শুধুমাত্র একটি শর্ত এবং তা হলো: আপনি কি ক্ষমা চান? আপনি কি আল্লাহর রহমত চান? আপনি কি আল্লাহর মাগফিরাত চান? সুবহানাল্লাহ! আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন? এই মাসে জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং সব দুষ্ট শয়তান ও জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়। আপনি আর কী চান? জান্নাতের দিকে উঠার পথ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই! আপনি আর কী চান? আপনার কোনো অজুহাত নেই। শয়তানদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। আপনি আর কী চান? প্রতি রাতেই, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ অগণিত মানুষকে মুক্তি দেন যারা অন্যথায় জাহান্নামের জন্য নির্ধারিত ছিল। আল্লাহ্ তাদের জান্নাতের দিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। লক্ষ্য করুন, এই মাসে... নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন? যারা জাহান্নামের উপযুক্ত ছিল... আমরা শীর্ষ ১% নিয়ে কথা বলছি না, আমরা মুত্তাকী বা তাহাজ্জুদ পড়া লোকদের কথা বলছি না। আমরা পাপীদের কথা বলছি, যাদের দ্বীনের মধ্যে টিকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা তাদের কথা বলছি যারা মদ্যপান, পর্নোগ্রাফি বা হারাম সম্পর্কে জড়িত। সেই লোকদের কথা বলছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন? إِنَّ لِلَّهِ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ عُتَقَاءَ مِنَ النَّارِ "রমজানের প্রতি রাতে আল্লাহ্ অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।" মুসনাদ আহমাদ (হাদীস নং ৭৪৫০) রমজানের প্রতি রাতেই! কিন্তু কেন? কারণ তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। কেন? কারণ তারা আল্লাহর কাছে হাত তুলে বলে, "ও আল্লাহ! আমি স্বীকার করছি আমি পাপপূর্ণ জীবন যাপন করছি। কিন্তু আমিও একটি ভালো জীবন যাপন করতে চাই। ইয়া আল্লাহ! আমার জন্য এটা সহজ করে দিন। ইয়া আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।" এই লোকেরা নিঃসন্দেহে আল্লাহর রহমত লাভ করে। কিন্তু শুধুমাত্র একটি শর্তে: তারা কি আন্তরিক? তারা কি সত্যিই রহমত চায়? হে পাপী! আমি নিজেকে এবং আপনাদের সবাইকে সম্বোধন করছি, لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ আল্লাহর রহমত থেকে কখনো হতাশ হবেন না, বিশেষ করে এই মাসে। এটি রহমতের মাস। এটি মাগফিরাতের মাস। এটি সেই মাস যেখানে আল্লাহ্ জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেন আর প্রতিদিন ও প্রতি রাতে রহমত ও মাগফিরাত নাজিল করেন। এটি সেই মাস, যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি ন্যূনতম চেষ্টা করে, সে ইমান ও আল্লাহর প্রতিদানের আশায় প্রতিদিন রোজা রাখে, তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" যে ব্যক্তি ন্যূনতম চেষ্টা করে, সে প্রতি রাতে কিছুটা হলেও তাহাজ্জুদ বা তারাবির নামাজ পড়ে, আল্লাহ্ তার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। যে ব্যক্তি শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর খোঁজার চেষ্টা করে নামাজ পড়ে, তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। তাই হে মুসলিম, আমার আপনার কাছে আকুল আবেদন: এমনকি যদি মনে করেন যে আপনি এই মাসের জন্য প্রস্তুত নন, এমনকি যদি মনে করেন যে এটি অত্যন্ত কঠিন, আপনি এটি করতে পারবেন না, তবুও আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হবেন না। এই মাস আজ রাত থেকে শুরু হচ্ছে। আজ রাত আমাদের প্রথম কিয়াম (রাত্রিকালীন ইবাদত), আজ রাত প্রথম তারাবিহ। তাই আপনার হৃদয় পরিষ্কার করুন, আপনার নিয়ত পবিত্র করুন এবং একজন ভালো মানুষ হওয়ার লক্ষ্য রাখুন। হ্যাঁ, একজন ধার্মিক ও নেককার ব্যক্তিকে ইতিবাচক রোল মডেল হিসেবে নেওয়া ভালো। কিন্তু বুঝে নিন, যদি আপনি সেই ব্যক্তির স্তরে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলেও অন্তত এই মাসে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করুন। অন্তত নিজের সর্বোত্তম সংস্করণ হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। কারণ এই মাসে যদি নিজেকে উন্নত করতে না পারেন, যদি নিজের সর্বোত্তম সংস্করণ হতে না পারেন, তাহলে বাস্তবতা হলো কোনো আশা নেই। আর এগুলি আমার কথা নয়, এগুলি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা।আপনারা জানেন, আমাদের সুন্নাহতে, হাদীসের কিতাবগুলোতে, তাঁর বাণীগুলোতে এটি স্পষ্ট। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন কোমল ও দয়ালু মনের মানুষ। তিনি খুব কমই কোনো মুসলিমের বিরুদ্ধে দুআ করতেন। খুব কম। এটি ব্যতিক্রম। আপনি মাত্র কয়েকটি ঘটনা পাবেন যেখানে তিনি বদদুআ করেছিলেন–সবচেয়ে খারাপ অপরাধ, সবচেয়ে বড় পাপের জন্য। কিন্তু এই একটি বিষয়ে তিনি বিরুদ্ধে দুআ করেছিলেন আর এটিও আসলে তাঁর নিজের থেকে আসেনি। হাদীস থেকে আমরা জানি, জিবরীল (আ) রমজান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছিলেন এবং বলেছিলেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একটি দুআ করব, আপনি আমীন বলুন।" জিবরীল (আ) তিনটি বিষয় বলেছিলেন, এবং তার মধ্যে একটি কী ছিল? "যে ব্যক্তি রমজান মাস পায়"– مَنْ أَدْرَكَ شَهْرَ رَمَضَانَ – শুধু জীবিত থাকা! এটি ন্যূনতম শর্ত। যে ব্যক্তি রমজান মাসে জীবিত থাকে এবং তার রোজা রাখার সক্ষমতা থাকে বা ধর্মীয় কাজ করতে সক্ষম হয়, বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন এবং প্রাপ্তবয়স্ক, সে ব্যক্তি যদি তার গুনাহ ক্ষমা না পায়, তাহলে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তার জন্য দরজা বন্ধ করে দিন। "আমীন" বলুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই দুআতে আমীন বলেছিলেন। এখন আমি আপনাদের আল্লাহর নামে জিজ্ঞাসা করছি। যে মানুষটি অসম্ভব দয়ালু, যার হৃদয় উম্মতের জন্য করুণায় ভরা, যিনি তাহাজ্জুদের নামাজে কাঁদতে কাঁদতে উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, যিনি বলেছেন, "যে কেউ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলে, তার অন্তরে সামান্য পরিমাণ ইমান থাকলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" তাহলে কীভাবে তিনি এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুআ করতে পারেন, যে রমজান মাসের সুযোগকে কাজে লাগায়নি? এর উত্তর স্পষ্ট। কারণ এই মাসে আপনার কাছ থেকে এতোই কম আশা করা হচ্ছে যে, আপনাকে শুধু ক্ষমা পেতে চাইতে হবে এবং একটি ভালো জীবন যাপনের চেষ্টা করতে হবে। শুধু একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন। লক্ষ্যটি এতই নিচু যে, যদি আপনি এটিও করতে ব্যর্থ হন, তাহলে সত্যিই সেই বছর আপনার জন্য কোনো আশা নেই। এগুলি আমার কথা নয়, এগুলি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা এবং তাঁর দুআ। আর এ কথাগুলো আমাদের সবার অন্তরে ভীতি সৃষ্টি করা উচিত। হে মুসলিম, আল্লাহ্ আপনার অতীতের গুনাহের পরিমাণ নিয়ে চিন্তিত নন। এটি আল্লাহর দৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক। আল্লাহ্ চান আপনার বর্তমানের আন্তরিকতার মান, আপনার ক্ষমা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার মান, এবং তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টার মান। আপনার অতীত জীবনযাত্রা নিয়ে হতাশ হবেন না, বরং ভবিষ্যতের দিকে তাকান। রমজান মাস একটি পরিশুদ্ধির মাস। এটি আপনার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা অর্জনের জন্য। রমজান মাসে আপনি যে সম্ভাবনা অর্জন করতে পারবেন, তা অন্য কোনো সময়ে সম্ভব নয়। তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। ও ভাই! যিনি সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করেন। কর্পোরেট অফিস ও ডেডলাইন, ঘরের কাজ, শপিং এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখেন। ও ভাই! যিনি এই সব কিছুর সাথে সংগ্রাম করছেন, আপনার জন্য বলছি–অতিরিক্ত ৩০ মিনিট বা এক ঘন্টা সময় বের করে ইবাদত করুন, অফিসে সালাতের সময় আরও মনোযোগী হোন–এটি আপনার মুক্তির পথ। এটি আপনার মান যা আপনি উঁচু করেছেন। হে ছাত্র! যিনি কলেজে সংগ্রাম করছেন, হে ছাত্র! যার ডেডলাইন আছে, পরীক্ষা আছে, পেপার জমা দেওয়ার চাপ আছে, তারপরও আপনি প্রতিদিন পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট কুরআন পড়ায় ব্যয় করছেন–এটি আপনার মান যা আপনি উঁচু করেছেন। এটি সেই সংগ্রাম যাতে আপনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। হে মুসলিম, বুঝে নিন যে আল্লাহ্ আপনার পরিস্থিতি জানেন এবং তিনি আপনার কাজের পরিমাণের চেয়ে আপনার হৃদয়ের মান (quality) নিয়ে বেশি আগ্রহী। আপনি যা করতে পারেন, যতটুকুই পারেন, তা-ই করুন। আল্লাহ্ আপনার প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতাকে মূল্য দেন। – ডক্টর ইয়াসির কাদি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন