আপনার আমলই আপনার মুক্তি
আপনার আমলই আপনার মুক্তি || ------------------------------------------------------ জান্নাতকে আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু জান্নাত পাওয়ার জন্য যে কাজগুলো করতে হয়, সেগুলোকে অনাকর্ষণীয় করে ডিজাইন করা হয়েছে। আবার জাহান্নামকে অনাকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যে কাজগুলো মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে সেগুলোকে আকর্ষণীয় করে ডিজাইন করা হয়েছে। যেটা আমরা জিব্রাইল (আ)কে জান্নাত জাহান্নাম দেখানোর হাদিস থেকে জানি। মানুষের দুনিয়াবী কাজগুলোই শেষ পর্যন্ত হয় জান্নাতের নেয়ামত অথবা জাহান্নামের শাস্তিতে পরিণত হবে। এ আয়াতগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। وَذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡخُلۡدِ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ - তোমরা চিরস্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করতে থাক, তোমরা যা করতে তার জন্য। (৩২:১৪) وَتِلۡكَ الۡجَنَّةُ الَّتِىۡۤ اُوۡرِثۡتُمُوۡهَا بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ - এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কর্মের ফল স্বরূপ। (৪৩:৭২) كُلُوۡا وَاشۡرَبُوۡا هَـنِٓـيـْئًا ۢ بِمَا كُنۡـتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَۙ - "তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাক।" (৫২:১৯) سَلٰمٌ عَلَيۡكُمُۙ ادۡخُلُوا الۡجَـنَّةَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ - ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা যে আমল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (১৬:৩২) খেয়াল করেছেন? আয়াতগুলোতে বার বার বলা হচ্ছে 'তোমরা যা করতে' তার ফলস্বরূপ হয় জান্নাতের নেয়ামত অথবা জাহান্নামের শাস্তি। তাই, আপনার কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। শয়তানকে কোনভাবেই নিজের নিয়ন্ত্রণ নিতে দিবেন না। আর নিজেকে অতো শক্তিশালী মনে করবেন না। কারণ, আমরা দুর্বল। আমাদেরকে দুর্বল করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-وَ خُلِقَ الۡاِنۡسَانُ ضَعِیۡفًا- "আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বল করে।" (৪:২৮) তাই, নিজেকে রক্ষা করার জন্য সবসময় সতর্ক থাকুন। আর উত্তম আমল করার ক্ষেত্রে সক্রিয় থাকুন। অলসতা ত্যাগ করুন। অনেক সময় অলসতা শেষ পর্যন্ত কোনো একটা পাপের দিকে নিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যা আপনাকে সাহায্য করবে তা হলো আপনার মাইন্ড। বুদ্ধি। আকল। 'আকল' এর অবস্থান আপনার মস্তিষ্কে। ইন্টারেস্টিংলি আরবিতে 'আকালা' শব্দের অর্থ হলো- বুঝতে পারা। এর আরেকটি অর্থ, কোনো কিছু বেঁধে ফেলা। তাহলে 'আকালা' দ্বারা দুইটি বিষয় বুঝায়- বুঝতে পারা এবং কোনো কিছুকে শৃঙ্খলিত করা। আকল এর কাজ হলো আপনার আবেগকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেন আপনি সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারেন। তাই, আকল অর্থ শুধু বুঝতে পারা নয়, এর অর্থ হলো প্রথমে আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং তারপর বুঝতে পারা। ঘৃণা, রাগ, ভয়, লোভ-লালসা এ ধরণের মানবীয় আবেগের প্রভাবমুক্ত হয়ে চিন্তা ভাবনা করতে পারার নামই হলো আকল। তাই, আকল (বুদ্ধি, মাইন্ড) দিয়ে মনকে (হার্টকে, যেখানে আবেগ অনুভূতিগুলোর অবস্থান) বেঁধে ফেলুন। জ্ঞান-বুদ্ধি যদি বলে আমার এটা করা দরকার, আমি করবো। তখন ঠিক কাজ করার ইচ্ছে অনেক অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে। জ্ঞান-বুদ্ধি যদি বলে এটা করা যাবে না, আমি করবো না। কিভাবে জ্ঞান-বুদ্ধি অনুযায়ী চলতে হয় সে অভ্যাস নিজের মাঝে গড়ে তুলুন। নিজের উপর জোর খাটান। এটাই শ্রেষ্ঠ উপায়। অনেক সময় বেশি বেশি নেক আমল করতে থাকলে অন্তরও তখন নেক আমল করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। মন চায় বেশি বেশি নামাজ পড়তে, কুরআন তিলাওয়াত করতে। সে সময়টাকে কাজে লাগান। তখন যত পারেন ইবাদাত বন্দেগি করুন। -------------------------- নোমান আলী খান, ইয়াসির কাদি এবং আকরাম নদভীর আলোচনা অবলম্বনে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন