যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে তিন ধর্মের বিশ্বাস



 এই ছোট্ট লেখায় আমি শেষ জামানার যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে তিন ধর্মের বিশ্বাস সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ফিলিস্তিনের বর্তমান গণহত্যা বুঝতে আপনাদের সাহায্য করবে। শেষ যুগের সকল যুদ্ধ বিগ্রহ, বড় বড় ঘটনা যেমন ঈসা (আ) এর আগমন, দাজ্জালের ফিতনা এগুলো সব ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন এই এলাকাগুলো কেন্দ্রিক হবে।


ইসলামঃ মুসলমানদের চরম দুর্যোগের মুহূর্তে ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে। তিনি সমগ্র উম্মাহকে একত্রিত করবেন। এ সময় বহু যুদ্ধ হবে। এর মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। ঈসা (আ) এর আগমন হবে সিরিয়ার উমাইয়া মসজিদে। তিনি সকল যুদ্ধে জয়লাভ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। এরপর স্বাভাবিক অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হবে। রাসূলের কবরের পাশে তাঁর কবরের জন্য একটি জায়গা বরাদ্ধ আছে। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করবে। একটি হাদিসে জেরুজালেম কেন্দ্রিক খিলাফা প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ আছে। তাই, অনেক আলেমের মতে এটা হবে ইমাম মাহদি এবং ঈসা (আ) এর মাধ্যমে। তো এরপরে আবার মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। অবস্থা এমন হবে যে পৃথিবীতে একজন মুসলমানও থাকবে না। এরপর কিয়ামত হবে। ইহুদি বিশ্বাসঃ এখন থেকে তিন হাজার বছর পূর্বে দাউদ এবং সোলায়মান (আ) ফিলিস্তিনে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে ইহুদিদের পথভ্রষ্টতা এবং অহংকারের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের এই সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দেন। গত তিন হাজার বছর ধরে ইহুদিরা এরকম একটি সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। এ জন্যই ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। তাদের মতে, আল্লাহ তায়ালা দাউদের বংশে তাদের জন্য একজন মশীহ পাঠাবেন। যিনি হবেন একজন রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতা। যিনি দাউদের সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করবেন এবং এই রাজ্য চিরকাল ধরে অক্ষত থাকবে। দানিয়েল ৭:১৪ – মশীহের রাজ্য "চিরকাল স্থায়ী হবে, ধ্বংস হবে না।" প্রসঙ্গতঃ ইহুদিরা পরকালিন বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় না। তাদের কাছে দুনিয়াই সব। এখন, ইহুদিরা বিশ্বাস করে, ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মশীহের আগমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, কিন্তু এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তালমুদ বলে: "মশীহ তখনই আসবেন যখন সমস্ত ইহুদি ইসরাইলে ফিরে আসবে।" ১৯৪৮ সালের ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অনেক ইহুদি প্রাথমিক পদক্ষেপ মনে করেন, কিন্তু মশীহ আসবেন তখনই, যখন তৃতীয় মন্দির নির্মিত হবে (বর্তমানে টেম্পল মাউন্টে আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত)। তারা আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করবে এবং থার্ড টেম্পল নির্মাণ করবে। তো ইহুদিরা তাদের মসিহ আগমনের প্রতীক্ষায় আছে। যে মসিহ তাদেরকে এক চিরস্থায়ী সাম্রাজ্য প্রদান করবে। খ্রিষ্টান বিশ্বাসঃ শেষ সময়ে জেসাসের (ঈসা আলাইহিস সালাম) ২য় আগমন ঘটবে। তার আগে দুইটি বিষয় জেনে নেই। ১। মহাসঙ্কট (Tribulation)। শেষ যুগে ৭ বছর ধরে পৃথিবীতে মহাসঙ্কট বিরাজ করবে। এসময় অ্যান্টি-ক্রাইস্টের উত্থান হবে। যুদ্ধ, মহামারী ও ঐশ্বরিক শাস্তির প্রকাশ ঘটবে। ২। রাপচার (Rapture)। একটি খ্রিস্টান বিশ্বাস যার মতে শেষ সময়ে যীশু খ্রিস্ট আকাশ থেকে নেমে খ্রিষ্টানদের স্বর্গে তুলে নেবেন, বিশেষ করে মহাসঙ্কট (Tribulation) শুরুর আগে। কারো মতে পরে। ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিস্টানদের মধ্যে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও রাপচারের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ইসরাইলের পুনর্জন্ম (১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা) এবং জেরুজালেমের পুনঃঅধিকার (১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর) হলো বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী পূরণের লক্ষণ, যা শেষ সময়ের (End Times) এবং রাপচারের সূচনা করবে। একটি জরিফে দেখা যায়, আমেরিকার ৮০ শতাংশের বেশি ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টান বিশ্বাস করে–১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা বাইবেলের ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবায়নের একটি পদক্ষেপ। এটা জিসাসের ২য় আগমনের ইঙ্গিত প্রদান করছে। তাদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে আর্মাগেডনে (মহা যুদ্ধ) কে তাদের বিরুদ্ধে লড়বে? মুসলমানেরা এবং ফিলিস্তিনিরা। তাহলে ফিলিস্তিনিদের জন্য তাদের কেন ভালোবাসা থাকবে? তাদের অন্তর তালাবদ্ধ। কারণ, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস তাদের মানবতাকে ঢেকে ফেলেছে। তারা ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে দেখে না। তাদের দৃষ্টি জেসাসের দ্বিতীয়বারের আগমনের প্রতি। তারা জেসাসের আগমনের অপেক্ষায় আছে। আর তারা এই প্রক্রিয়াটা গতিশীল করতে চায়। তাদের দৃষ্টিতে অ্যানটাই-ক্রাইস্ট (দাজ্জাল) কে? তারা আমাদের রাসূল (স) কে এই কথা বলে। নাউজুবিল্লাহ। তাদের এই বিশ্বাস শুধু বিশ্বাসেই সীমাবদ্ধ নয়, এটা রাজনৈতিক পলিসি হিসেবে তাদের বৈদেশিক নীতিতে ভূমিকা রাখে। যার প্রভাব আমাদের উপরে এসে পড়ে। তারা মনে করে আমরা মুসলিমরা অ্যানটাই-ক্রাইস্ট এর সেনাবাহিনীতে থাকবো। এটাই তাদের আকিদা। তাহলে আমাদের জন্য তাদের কেন কোনো দয়া-মায়া থাকবে। আমরা মুসলিমরাও জিসাসের (ঈসা আলাইহিস সালাম) ২য় আগমনে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমরাই থাকবো ঈসার পক্ষে। তোমাদেরকেই বরং সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তোমরা কি দাজ্জালের পক্ষে থাকবে নাকি ঈসার পক্ষে। এখন ফাইনাল নোটঃ আমরা জানি আমাদের ধর্ম সত্য ধর্ম। ইহুদি খ্রিষ্টানরা সত্য ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে। ওদের ধর্মে সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণে বানোয়াট অনেক কিছু প্রবেশ করেছে। এ জন্য তারা বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। তাদের এসব মিথ্যাচারের কারণে আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـٰذَا مِنْ عِندِ اللَّـهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ অর্থ: "অতএব ধ্বংস তাদের জন্য, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে, অতঃপর বলে এটি আল্লাহর কাছ থেকে, যাতে তারা এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য লাভ করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার জন্য ধ্বংস তাদের এবং তারা যা উপার্জন করে তার জন্যও ধ্বংস তাদের!"সূরা আল-বাকারা (২:৭৯) যখন ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে, ইহুদি খ্রিষ্টানরা ইমাম মাহদিকে অ্যানটাই-ক্রাইস্ট মনে করে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এরপর ঈসা (আ) এর আগমনের ফলে অনেক খ্রিষ্টান উনার উপর ঈমান এনে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবে। অন্যদিকে দাজ্জালের আগমন ঘটবে ইহুদি বংশে। ইহুদিরা দাজ্জালকে তাদের প্রতীক্ষিত মশীহ ভেবে ভুল করবে, কারণ সে অলৌকিক কাজ (যেমন বৃষ্টি নামানো, মৃতকে জীবিত করা) দেখাবে। হাদিসেও উল্লেখ আছে বিশাল সংখ্যক ইহুদি দাজ্জালের অনুসরণ করবে। আর মশীহ এর উপর বিশ্বাস যেহেতু তাদের ধর্মের অন্যতম মূল একটি স্তম্ভ, তাই এটা মেইক সেন্স করে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আ) এর মাধ্যমে দাজ্জালকে ধ্বংস করে দিবেন। আর এর মাধ্যমে ইহুদিদের তথাকথিত চিরকালীন সাম্রাজ্যের স্বপ্নও চিরকালের জন্য মুছে দিবেন। আরেকটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো ইহুদি ধর্মে যে মসিহ এর কথা বলা হয়েছে, উনি ছিলেন ঈসা আলাইহিস সালাম। কিন্তু তারা উনাকে মেনে নেয়নি। কারণ, উনি তাদেরকে পরিশুদ্ধির কথা বলতেন, সাম্রাজ্যের কথা নয়। এজন্য তারা উনাকে পছন্দ করেনি। এখন, সেই ঈসা আলাইহিস সালামই আবার এসে তাদের দাজ্জালিয় সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিবেন। তো, খ্রিস্টানরা রাপচারের মাধ্যমে স্বর্গে যেতে চায় এজন্য তারা ইসরাইলকে গাজার নারী-শিশু গণহত্যায় সাহায্য করছে, আর ইহুদিরা ডেভিডের সাম্রাজ্য ফিরে পেতে চায়, চিরস্থায়ীভাবে। এজন্য তারা গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে আমরা মুসলিমরা শুধু আমাদের দেশগুলোতে শান্তিতে থাকতে চাই। কিন্তু এটাই তারা আমাদের দিচ্ছে না। একজনের স্বর্গে যাওয়ার লোভ আরেকজনের দুনিয়াবী সাম্রাজ্য, এই দুই লোভের চিপায় পড়ে আমরা মুসলিমরা মারা যাচ্ছি। -- কয়েকজন স্কলারের আলোচনা থেকে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

দিরিলিসের আরতুগ্রুলের সকল পর্ব কিভাবে দেখবেন?

❝সূরা হুজুরাত❞