যারা জান্নাতের ভোগবিলাসের সমালোচনা করে
যারা জান্নাতের ভোগবিলাসের সমালোচনা করে তাদের জন্য কিছু উত্তর— জান্নাত কিন্তু বাগান, নদ-নদী, সঙ্গী এবং প্রাসাদের চেয়েও বেশী কিছু। জান্নাত এর চেয়েও বেশি। এগুলো সহজ উপায়ে বোঝার পন্থা, আমরা যা কামনা করি। কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়ে অনেক বেশী। এবং এখানে মূল কথা, জান্নাত হলো— যা আপনি আকাঙ্ক্ষা করেন। [لَهُم مَّا يَشَاءُونَ فِيهَا] - সেখানে তারা যা ইচ্ছা করবে তাই পাবে। তাই, কিছু মানুষ তাদের প্রশান্তি এবং আনন্দের জন্য অন্য জিনিসও কামনা করতে পারে এবং তারা সেসব জিনিস পাবে। [لَهُم مَّا يَشَاءُونَ فِيهَا]। হ্যাঁ, এটা সত্য যে কুরআন এমন একটি জান্নাতের বর্ণনা দিচ্ছে যা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এতে সমস্যার কোনো কারণ নেই। এটি অবশ্যই তা করবে। এটি সরাসরি সেইসব মানুষকে সম্বোধন করবে যারা এর প্রত্যক্ষ শ্রোতা এবং যাদের নিকট এটি অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয় হলো, জান্নাতে আপনি যা চান, তা-ই পাবেন, যা কামনা করেন এবং যা আকাঙ্ক্ষা করেন। এবং এটাই মূল বিষয়। আমরা এর উপরই বারবার জোর দিতে থাকবো। প্রসঙ্গক্রমে, আরও একটি বিষয় এখানে যোগ করতে হবে। এবং তা হলো, এই লোকেরা যারা আমাদের বিশ্বাস নিয়ে উপহাস করে এবং বলে, “ও, আমরা এমন জান্নাত চাই না যেখানে মরুদ্যান, বাগান, নদ-নদী, রক্ষিতা ইত্যাদি থাকবে”। বাস্তবে, এই কামনাগুলো প্রতিটি মানুষের মাঝে গভীরভাবে প্রোথিত। এটাই বাস্তবতা, মানবজাতির স্বাভাবিক অবস্থা, ডিফল্ট সেটিং। ভালো খাবার, সুস্বাদু মাংস এবং ডেজার্ট, মনোরম পরিবেশ, পানি ও সবুজের সমারোহ, সুন্দর এবং কামনীয় সঙ্গী এগুলো আমাদের মাঝে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আরবের জন্য মরূদ্যানই হলো — [جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ]। উদাহরণস্বরূপ ক্যালিফোর্নিয়ায়, তাদেরও [جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ]-এর নিজস্ব রূপ থাকবে। টেক্সাসে, যেখানে আমি বাস করি, সেখানে আপনি যদি কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তির প্রাসাদে যান, বাড়ির আঙিনায় গেলে আপনি কী দেখবেন ? জল এবং ফোয়ারা দেখবেন, সবুজ গাছপালা দেখবেন। এখানকার জন্য এটাই সৌন্দর্য। প্রত্যেক সমাজে এটিই মানবপ্রকৃতি; জল, ফল-মূল এবং সবুজের সমারোহ এমন কিছু যা আত্মাকে তৃপ্ত করে, হৃদয়কে উদ্বেলিত করে, আমাদেরকে প্রশান্ত এবং প্রসন্ন করে তোলে। এবং এটি এমন কিছু যা আমরা পছন্দ করি। আর আমাদের যদি সামর্থ্য থাকে, আমরা পৃথিবীতে এমন বাসস্থান চাই যেখানে এর সব কিছুই বিদ্যমান। এবং সেজন্যই এটি প্রকৃতিগত একটি বিষয়। অনুরূপভাবে, আল্লাহ যখন জান্নাতকে মনমাতানো খাবারের স্থান এবং আকর্ষণীয় সঙ্গীর স্থান হিসেবে বর্ণনা করেন; এবং হ্যাঁ, ইন্দ্রিয়সুখের স্থান হিসেবেও বর্ণনা করেন, যা আমরা ভবিষ্যতের একটি পর্বে আলোচনা করবো; কিছু লোক এটাকে উপহাস করে এবং বলে, “এটা কেমন জান্নাত ? কামনা-বাসনায় ভরপুর জান্নাত” ! এর জবাব হলো, অবশ্যই এটা কামনা-বাসনায় পরিপূর্ণ থাকবে। কেন এমনটা হবে না ? আমরা আরো বলেছি, জান্নাত কামনা-বাসনার চেয়েও বেশি কিছু। সুতরাং, প্রাথমিকভাবে দুটি উত্তর রয়েছে। আমরা কেনো এমন জান্নাত নিয়ে বিব্রতবোধ করবো যা প্রতিটি মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তির কাছে আকর্ষণীয় ? কারণ খেয়াল করুন, স্পষ্ট ভাষায় কথাগুলো বলার জন্য দুঃখিত। এই লোকগুলো, যারা জান্নাতের এই বর্ণনাগুলোকে সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করে, আপনি আশা করবেন যে তারা সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করবে, মরুভূমির গুহায় বন্দী থেকে সন্ন্যাসী হয়ে যাবে, চব্বিশ ঘন্টা ইবাদত করবে। সেক্ষেত্রে তারা বলতে পারতো যে, এটা এমন একটি জান্নাত যা আমাদের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং উল্টো, এই লোকেরাই সবচেয়ে বেশি ভোগবাদী, তারাই সবচেয়ে বেশী ইন্দ্রিয়পরায়ণ। তাদের জীবনযাপনই তাদের উপহাসের জবাব। তারাই সর্বদা সবচেয়ে উন্মুখ সুস্বাদু খাবারের জন্য, সর্বোচ্চ রেটিংয়ের জন্য, ভোগবিলাসে মত্ত জীবন যাপনের জন্য এবং আকর্ষনীয় শয্যাসঙ্গির জন্য। তো আপনি নিজেই বিবেচনা করুন। আপনি এমন জিনিসকে উপহাস করছেন, আপনার নিজের জীবনধারাই প্রমান করছে যে আপনি তা কামনা করেন। আপনি দ্বিচারীতার নীতি অবলম্বন করতে পারেন না। আর তাই, আমাদের মুসলিমদের, কুরআনে বর্ণিত জান্নাত নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। কারণ যেসব মানুষ এটাকে তাদের মানবিক মর্যাদার নীচে ভেবে উপহাস করে, তাদের জীবনযাপনই প্রমাণ করে যে তারা তাদের মানবিক সত্ত্বা থেকে পালাতে পারে না। এটাই মূল বিষয়। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন ইন্দ্রিয়সুখ কামনা করার জন্য, ভালো খাদ্যের আকাঙ্ক্ষা করার জন্য, চমৎকার বাসস্থান ও পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা করার জন্য। এভাবেই আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই আল্লাহ বলছেন, “সৎ জীবন যাপন করো, আমার আনুগত্য করো, আমার ইবাদত করো, মানবজাতির প্রতি সদয় হও। আর যখন তুমি জান্নাতে পৌঁছাবে, এই সমস্ত আকাঙ্ক্ষা এবং আরও অনেক কিছুই তুমি পাবে”। এতে সমস্যা কোথায় ? আমরা সকলেই এই কামনা-বাসনা লালন করি। আর আমরা সকলেই এই কামনা-বাসনার চেয়েও বেশি চাই। —ইয়াসির কাদি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন