অজুর ভিন্ন ৫টি উপকারিতা
অজু অনেক ইবাদতের পূর্বশর্ত। আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য অজু করি। এ ছাড়া কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, জানাজা, তিলাওয়াতের সেজদা ও শোকরের সেজদার জন্যও অজু করা আবশ্যক।
অজু আমাদের বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পরিচ্ছন্ন করে, শরীরের ক্লান্তি দূর করে, প্রোডাকটিভিটি বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি হৃদয়কেও পবিত্র করে।
১. ক্ষমা লাভের কারণ
পাপ আমাদের হৃদয়কে ভারী করে তোলে এবং আত্মিক প্রশান্তি কেড়ে নেয়। পাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় কালিমায় ছেয়ে যায়। অজু সেই পাপকে দূর করে আত্মিক প্রশান্তি বয়ে আনে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো মুসলমান বা মুমিন বান্দা অজু করে, তখন মুখ ধোয়ার সঙ্গে (অথবা পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে) তার সেসব গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার চোখের দৃষ্টি গিয়েছিল।
অজু অনেক ইবাদতের পূর্বশর্ত। অজু আমাদের বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পরিচ্ছন্ন করে, শরীরের ক্লান্তি দূর করে, প্রোডাকটিভিটি বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি হৃদয়কেও পবিত্র করে।
যখন সে দুই হাত ধোয়, তখন পানির সঙ্গে (অথবা শেষ বিন্দুর সঙ্গে) তার সেই গুনাহ বের হয়ে যায়, যা তার হাত দিয়ে করা হয়েছিল। এবং যখন সে দুই পা ধোয়, তখন পানির সঙ্গে (অথবা শেষ ফোঁটার সঙ্গে) তার সেই গুনাহ বের হয়ে যায়, যেদিকে তার পা অগ্রসর হয়েছিল। অজুর শেষে সে তার সব গুনাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৪)
আমরা প্রতিনিয়ত অসংখ্য ছোট ছোট গুনাহ করি। অজু সেই গুনাহকে দূর করে আমাদের পবিত্র করে তোলে।
২. প্রশান্তিময় ঘুমের মাধ্যম
মানুষ ঘুমানোর আগে যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে—ঘরের দরজা বন্ধ করে, বাইরে প্রহরী রাখে। কল্পনা করুন, যখন আপনি ঘুমিয়ে আছেন, তখন আপনার পাশে একজন ফেরেশতা রয়েছেন, যিনি আপনার ক্ষমার জন্য দোয়া করছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা নিজেদের শরীর পবিত্র রাখো, আল্লাহ তোমাদের পবিত্র করবেন। কারণ, যখন কোনো বান্দা পবিত্র অবস্থায় রাত যাপন করে, তখন তার শরীর ও বস্ত্রের সঙ্গে একজন ফেরেশতা রাত কাটায়।
রাতের প্রতিটি প্রহরে সেই ফেরেশতা দোয়া করে, হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দাকে ক্ষমা করো, কারণ সে পবিত্র অবস্থায় রাত যাপন করছে। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হাদিস: ৫৯৯)
কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে অজুর প্রভাবে তাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা দীপ্তিময় থাকবে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৬
৩. রাগ নিয়ন্ত্রণ করে
মানুষের অন্যতম ক্ষতিকর আবেগ হলো রাগ। রাগের বশে মানুষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরবর্তী জীবনে অনুতাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সময়মতো রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা সম্পর্ক নষ্টেরও কারণ হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রাগ করা শয়তানের কাজ, আর শয়তান সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। আগুন নিভানো হয় পানি দিয়ে। সুতরাং তোমাদের কেউ রাগ করলে, সে যেন অজু করে নেয়। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৯)
৪. দীপ্তির কারণ
কেয়ামতের দিন হবে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। সে সময় মানুষ তার পার্থিব জীবনের কাজগুলো স্মরণ করে দিশাহারা হয়ে যাবে। সেই দুঃসময়ে অজু হাত-পা ও মুখে দীপ্তি ছড়াবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে অজুর প্রভাবে তাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা দীপ্তিময় থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এই দীপ্তি বাড়াতে পারে, সে যেন তা করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৬)
বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান হাত ধোয়ার বহু উপকারিতা উল্লেখ করেছে। অথচ অজু শুধু হাত ধোয়া নয়—বরং শরীরের বাহ্যিক সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পরিচ্ছন্ন করে।
৫. মর্যাদা বৃদ্ধি করে
অজু আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। আল্লাহ অজুর মাধ্যমে মানুষের পাপমোচন করেন ও তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ-তাআলা পাপগুলো মুছে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন?
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসুল!
তিনি বললেন, তা হলো—অসুবিধা ও কষ্ট থাকা সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অজু করা, মসজিদে যাওয়ার জন্য বেশি পদচারণ করা এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। জেনে রাখো, এটাই হলো রিবাত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৮০)
রিবাত অর্থ: নিজেকে আল্লাহর পথে আটকে রাখা এবং শয়তানের মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকা।
বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান হাত ধোয়ার বহু উপকারিতা উল্লেখ করেছে। অথচ অজু শুধু হাত ধোয়া নয়—বরং শরীরের বাহ্যিক সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পরিচ্ছন্ন করে। অজু আমাদের অন্তর পবিত্র করে এবং আল্লাহর নিকট মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন